বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:২১ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
আফগান নাকি তালেবান, কার শক্তি বেশি?

আফগান নাকি তালেবান, কার শক্তি বেশি?

স্বদেশ ডেস্ক:

বেশ কিছুদিন ধরেই আফগানিস্তানে আগ্রাসন বেড়েছে তালেবান বিদ্রোহী গোষ্ঠীর। যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটের সেনা চূড়ান্তভাবে প্রত্যাহার শুরু হওয়ার পর থেকেই কয়েক মাস ধরে আফগানিস্তানে হামলা জোরদার করেছে তালেবান। বর্তমানে দেশটির প্রায় অর্ধেক জেলা তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

তালেবান হঠাত করে আগ্রাসী হয়ে উঠলেও অনেক আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ও আফগানিস্তানের কর্মকর্তারা মনে করছেন, তালেবানের সামরিক বিজয় এখনো বহু দূর। এর কারণ হিসেবে আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সেনা সংখ্যার দিকে ইঙ্গিত করছে তারা।

বর্তমানে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ অনেক শহর এখনো আফগান বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আফগান বাহিনী ও তালেবানের মধ্যে কার কতটুকু সক্ষমতা, সে বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপি।

এএফপি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ৩ লাখ ৭ হাজারের বেশি সদস্য রয়েছেন। তাদের মধ্যে সেনাবাহিনী, বিশেষ বাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা রয়েছেন। আফগানিস্তানে যে কোনো দিন সরকারি বাহিনীর ১ লাখ ৮০ হাজার সদস্য যুদ্ধ করতে পারবেন বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। তবে, তালেবানের শক্তিমত্তা সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি। তবে গত বছর জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের পর্যবেক্ষকেরা বলেছিলেন, এই সশস্ত্র সংগঠনটির ৫৫ থেকে ৮৫ হাজার যোদ্ধা রয়েছে।

২০ বছরের সামরিক আগ্রাসনের কারণে বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশে পরিণত হয়েছে আফগানিস্তান। বৈদেশিক সহায়তা ছাড়া এই দেশ চালনা খুবই কঠিন। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেশনাল রিসার্চ সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, আফগানিস্তানের সেনাবাহিনীর বছরে ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি ডলার দরকার হয়। বিপুল অঙ্কের এই সামরিক বাজেটের ৭৫ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্র বহন করে। আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের পরেও এই সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন।

অন্য দিকে তালেবানের অর্থের উৎস অস্পষ্ট। জাতিসংঘ পর্যবেক্ষকদের ধারণা, তালেবানের বার্ষিক আয় ৩০ কোটি থেকে ১৫০ কোটি ডলার হতে পারে। তাদের আয়ের একটি বড় অংশ আসে মাদক ব্যবসা থেকে। এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং দখল করা এলাকা থেকে কর আদায়ের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে তারা। জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের পর্যবেক্ষকদের মতে, এখন পর্যন্ত যতটুকু তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে স্পষ্ট জনবল নিয়োগ, অর্থায়ন, অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহের জন্য তালেবানকে তেমন একটা বেগ পেতে হয় না।

২০০১ সালে তালেবান সরকারকে উৎখাতের পর থেকে আফগানিস্তানে সামরিক বাহিনী পুনর্গঠন এবং তাদের আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত করতে হাজার হাজার কোটি ডলার ব্যয় করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তালেবানের তুলনায় আফগান বাহিনী অনেক বেশি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। আফগান বাহিনীর এমন অনেক কিছু রয়েছে, যেগুলো তালেবানের নেই।

এসআইজিএআরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আফগান সামরিক বাহিনীর বিমানবহরে ১৬৭টি বিমান রয়েছে, এর মধ্যে আক্রমণে সক্ষম হেলিকপ্টারও রয়েছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, তালেবান কয়েক দশক ধরেই ছোট ও হালকা অস্ত্র ব্যবহার করছে। এর মধ্যে রয়েছে সোভিয়েত আমলের একে-৪৭ রাইফেল, যেগুলো ওই অঞ্চলের কালোবাজারিদের কাছ থেকে তারা সংগ্রহ করে।

এএফপি’র বলছে, তালেবান যোদ্ধারা স্নাইপার রাইফেল, মেশিনগান, রকেটচালিত গ্রেনেড, মর্টার ও অন্যান্য ছোট রকেট ব্যবহার করে। বিমান ও ট্যাংকের বিধ্বংসী অস্ত্রও ব্যবহারের চেষ্টা করছে তারা। এর বাইরে তালেবানের প্রাণঘাতী অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে আত্মঘাতী বোম্ব স্কোয়াড ও ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি)। তারা এসব অস্ত্র আফগান ও বিদেশি বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করে আসছে। এছাড়া মাঝেমধ্যে আফগান বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে পশ্চিমা অস্ত্র ও সরঞ্জাম হাতিয়ে নিয়েছে তালেবান। এর মধ্যে রাতে দেখার চশমা, অ্যাসাল্ট রাইফেল ও বিভিন্ন যানবাহন রয়েছে।

সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আপাতদৃষ্টিতে তালেবানকে শক্তিশালী মনে হলেও আফগান বাহিনীকে পরাস্ত করা খুব একটা সহজ বিষয় হবে না।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877