স্বদেশ ডেস্ক: নিজের নির্বাচনী প্রচারণায় অভিবাসী বিরোধী প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনপ্রিয় হয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচিত হওয়ার পরে সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজও করেছেন তিনি। সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের আমেরিকা ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, মেক্সিকো সীমান্তে দেওয়াল নির্মাণের উদ্যোগ এবং অতি সম্প্রতি চারজন নারী কংগ্রেস সদস্যকে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার কথা বলে বরাবরই আলোচনায় কট্টর অভিবাসন বিরোধী ট্রাম্প। কিন্তু সাম্প্রতিক সমালোচনার জের ধরেই আবার আলোচনায় এসেছে ট্রাম্পের পূর্বপুরুষের পরিচয়। জানা যায়, ট্রাম্পের দাদা ফ্রেডরিক ট্রাম্প নিজেই আমেরিকায় একজন অভিবাসী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিলেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন বর্তমান জার্মানির অংশ বাভারিয়ার নাগরিক।
সম্প্রতি বাভারিয়ার তৎকালীন শাসক ‘প্রিন্স রিজেন্ট অব বাভারিয়া’কে লেখা ট্রাম্পের দাদার একটি চিঠির অনুবাদ প্রকাশ করেছে হার্পাস পত্রিকা। সেখান থেকে জানা যায়, ভাগ্যের সন্ধানে মাত্র ১৬ বছর বয়সে বাভারিয়া সরকারের অনুমতি না নিয়েই আমেরিকায় আসেন ফ্রেডরিক ট্রাম্প। এখানে তিনি রেস্টুরেন্ট, যৌনপল্লীসহ নানা ব্যবসা খুলে বসেন। কিন্তু তার স্ত্রীর মন টিকছিলো না আমেরিকায়, নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না বিদেশ বিভূঁইয়ে। তাই ১৯০৫ সালে তারা আবার ফিরে যান বাভারিয়ায়।
কিন্তু এবার বেঁকে বসে বাভারিয়া সরকার। তৎকালীন নিয়মানুযায়ী বাভারিয়ার তরুণদের একটি নির্দিষ্ট বয়সে বাধ্যতামূলকভাবে সামরিক বাহিনীতে সেবা দিতে হতো। কিন্তু এই নিয়ম না মেনেই আমেরিকায় চলে গিয়েছিলেন ফ্রেডরিক। আমেরিকা যাওয়ার সময় সরকারের অনুমতি না নেওয়ার বিষয়টি তো ছিলোই। তাই ফিরে আসার পর বাভারিয়া ছেড়ে যাওয়ার জন্য তাকে মাত্র আট সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়।
বাভারিয়া ছাড়ার এই নির্দেশের পর তৎকালীন শাসক ‘প্রিন্স রিজেন্ট অব বাভারিয়া’কে মর্মস্পর্শী এক চিঠি লেখেন ফ্রেডরিক। চিঠিতে তিনি বাভারিয়া ছেড়ে যাওয়ার পর প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণায় থাকার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘বাভারিয়া ছাড়ার নির্দেশটা আমার কাছে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো। সৎ নাগরিকদের কাছে এটা অত্যন্ত দুঃখের।’
কিন্তু এই হৃদয়স্পর্শী চিঠির পরও মন গলেনি শাসকের। তুলে নেওয়া হয়নি ফ্রেডরিকের দেশ ছাড়ার নির্দেশনা। বাভারিয়া ছেড়ে নিউইয়র্কেই অভিবাসী হতে হয় ফ্রেডরিককে। সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকে তার পরিবার।
এই অভিবাসী দাদার উত্তরসূরিই বর্তমান অভিবাসন বিরোধী ট্রাম্প। তার দাদাকে নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত করা জার্মানির শাসকরাই যখন বর্তমানে অনেক বেশি অভিবাসীবান্ধব আচরণ করছে, তখন ট্রাম্পের এমন অভিবাসীদের প্রতি ঘৃণা ছড়ানোর মনোভাব বিস্ময়কর বৈকি।