স্বদেশ ডেস্ক:
বরিশাল নগরীতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত গর্ভবতী মায়েদের চিকিৎসায় ২০ শয্যাবিশিষ্ট স্বতন্ত্র ইউনিট চালুর প্রস্তুতি নিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। নগরীর কালিবাড়ী রোডে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে চলতি সপ্তাহেই রোগী ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে। যেখানে করোনা আক্রান্ত গর্ভবতী নারীদের চিকিৎসার পাশাপাশি সিজারিয়ান অপারেশন করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যবিভাগ সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়াও বরিশাল জেনারেল (সদর) হাসপাতালের ২২ শয্যার করোনা ইউনিটটিকে ১০০ শয্যার ডেডিকেটেড করোনা ইউনিট হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এ কারণে ওই হাসপাতালের বহিঃর্বিভাগ ব্যতিত অন্য সকল বিভাগ বরিশাল শের-ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এর বাইরে বরিশাল জেলার ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০টি করে মোট ১৮০ শয্যার পৃথক ৯টি করোনা ইউনিট চালুর করা হচ্ছে। এর পরেও করোনা পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ নিলে সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি সামাল দিতে সাড়ে তিন শ’ শয্যার পৃথক দুটি বেসরকারি হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বরিশাল জেলা প্রশাসনের আয়োজনে স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে এক ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভায় এই সিদ্ধান্তগুলো গৃহীত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক এবং পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও শেবাচিম হাসপাতাল পরিচালক।
বরিশাল শেবাচিম হাসপাতাল পরিচালক ডা. এইচ.এম সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘বরিশাল অঞ্চলে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। প্রতিদিন আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোগীর চাপ সামাল দিতে ৫০ শয্যা থেকে তিন শ’ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে শেবাচিম হাসপাতালের করোনা ইউনিটকে। এর পরেও চাপ সামলানো সম্ভব হচ্ছে না। রোগীর চাপ বেশি হওয়ায় অক্সিজেন সাপোর্টেও ঝামেলা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘শেবাচিম হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত গর্ভবতী মায়েদের চিকিৎসা এবং সিজারিয়ানে অনেক সমস্যা হচ্ছে। কারণ করোনা আক্রান্ত গর্ভবতী একজন মায়ের সিজারিয়ানের পরে ১৪ দিন বন্ধ রাখতে হচ্ছে ওই অপারেশন থিয়েটার। এ কারণে অন্য রোগীদের ঝামেলা এবং সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই বরিশাল নগরীর কালিবাড়ী রোডের মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে করোনা আক্রান্ত গর্ভবতী মায়েদের সার্বিক চিকিৎসার জন্য ২০ শয্যার করোনা ইউনিট খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে কাগজে-কলমে ২০টি শয্যা থাকলেও সেখানে সর্বোচ্চ ৫০-৬০ জন রোগীর চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে। এখানে গর্ভবতী ছাড়াও করোনা আক্রান্ত সাধারণ নারীরাও ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে পারবেন। গর্ভবতী মায়েদের চিকিৎসা বা অস্ত্রপচারের সুবিধার্থে প্রয়োজনে শেবাচিম হাসপাতালের চিকিৎসকরা সেখানে গিয়ে চিকিৎসা দিয়ে আসবে।
আবার জেনারেল হাসপাতালের ২০ শয্যার করোনা ইউনিটটি ১০০ শয্যার ডেডিকেটেড করোনা ইউনিট হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এজন্য সেখানে থাকা ডায়রিয়ার আইসোলেশনসহ অন্যান্য ওয়ার্ডগুলো শেবাচিম হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। তবে করোনা ওয়ার্ডের পাশাপাশি সেখানকার বহিঃর্বিভাগে রোগীর চিকিৎসা কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকবে।
এদিকে, বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস জানিয়েছেন, ‘উপজেলা পর্যায়ে করোনা ইউনিট নেই। এ কারণে শেবাচিম হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেশি হচ্ছে। এতে এই হাসপাতালটিতে অক্সিজেন সঙ্কটও দেখা দেয়। এ কারণে বরিশাল জেলার ৯টি উপজেলা স্থাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০ শয্যা করে পৃথক ৯টি করোনা ইউনিট প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে সিভিল সার্জন এবং উপজেলা হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের। এটি বাস্তবায়ন হলে শেবাচিমে রোগীর চাপ যেমন কমবে তেমনি রোগীদের ভোগান্তিও কমবে। এসব বাস্তবায়নের বিষয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করেছি। অক্সিজেন সাপোর্টসহ আনুসঙ্গিক বিষয়ে সহযোগিতার জন্য মন্ত্রণালয়ে বলা হয়েছে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক আরো বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি আরো ঊধ্বগতি হলে সে ক্ষেত্রে রোগীদের ভর্তি রেখে চিকিৎসার জন্য আরো দুটি বেসরকারি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে আড়াইশ শয্যার অ্যাপোলো মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং এক শ’ শয্যার আম্বিয়া মেমোরিয়াল হাসপাতাল। এ দুটি প্রতিষ্ঠানে অক্সিজেন সাপোর্টের ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে জনবল সাপোর্টের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করে নিশ্চিত করা হবে।
মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে গর্ভবতী মায়েদের জন্য করোনা ইউনিট চালুর বিষয়ে জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ডা. তৈয়বুর রহমান বলেন, ‘আমরা চাইলে আজকের মধ্যেই ইউনিটটি চালু করতে পারি। তবে ইউনিট চালুর আগে অক্সিজেনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি করোনা রোগীর চিকিৎসা এবং ব্যবস্থাপনার বিষয়ে চিকিৎসক-নার্সদের প্রশিক্ষণের বিষয়ও রয়েছে। তারপরও আশা করা যাচ্ছে এ সপ্তাহের মধ্যেই ইউনিটটি চালু করা সম্ভব হবে।