সোমবার, ২৬ মে ২০২৫, ০২:১৬ পূর্বাহ্ন

নৈশপ্রহরী থেকে কোটিপতি…….!!!

স্বদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই, ২০১৯

স্বদেশ ডেস্ক: নড়াইলের কালিয়ার সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের সাবেক অফিস সহায়ক কোটিপতি পিওন হিসেবে পরিচিত মো. তরিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী নাসরিন বেগমের নামে মামলা করেছে দুদক। যশোর বিজ্ঞ সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত নড়াইল এর অধিক্ষেত্রাধীনে ‘অসামজ্ঞস্যপূর্ণ সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিং’ এর দায়ে মামলাটি করেন দুদক তদন্তকারি কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম মোড়ল। মামলা নং-১/২০১৯। মো. তরিকুল ইসলাম, কালিয়া সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের সাবেক অফিস সহায়ক। বর্তমানে নড়াইল সদর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের অফিস সহায়ক হিসেবে কর্মরত। তিনি নড়াইলের নড়াগাতী থানার গাছবাড়িয়া গ্রামের শাহাদাৎ মুন্সির ছেলে। বতর্মানে নড়াইল পৌরসভার ভাদুলীডাঙ্গায় স্ত্রীর নামে জমি কিনে সেখানে আলীশান বাড়ি করে বসবাস করছেন।

মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, আসামি মো. তরিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী মিসেস নাসরিন বেগম কর্তৃক পরস্পরের সহায়তায় ১৬,৫২,৪৩৩০০ টাকার জ্ঞাত আয়ের সাথে অসামজ্ঞস্যপূর্ণ সম্পদ অর্জন করে স্থানান্তর, রূপান্তর করে এবং তা দুদকে গোপন করে দখলে রাখার অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬(২) , ২৭(১) এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪ (২) ধারাসহ দঃ বিঃ ১০৯ ধারায় আপনার কার্যালয়ে বিজ্ঞ সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত, নড়াইল এর অধিক্ষেত্রাধীনে এ মামলা হয়।

দুদকের তদন্তকালে ২০১৭ সালের ১৬ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশন, যশোরের উপপরিচালকের মাধ্যমে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো সম্পদ বিবরণীতে তরিকুল ইসলাম তার নিজ নামে ১০ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ দেখান। তার আয়ের ওপর নির্ভরশীল স্ত্রী নাছরিন বেগমের নামে নড়াইল পৌরসভার ৬৭ নং ভাদুলীডাঙ্গা মৌজায় ২৮০ নং দাগে ২০১ নং খতিয়ানে ১৪ শতক জমি ক্রয় মূল্য বাবদ ৮ লাখ টাকা, ওই জমির উপর ভবন নির্মান বাবদ ৩০ লাখ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৭০ হাজার টাকার সম্পদ, সর্বমোট ৩৮ লাখ ৮০ হাজার টাকার স্থাবর অস্থাবর সম্পদের হিসাব দেখিয়েছেন। এসময় ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকার দেনা আছেন বলে দুদকের কাছে হিসাব দেখান। দেনার টাকা বাদ দিয়ে তার সম্পদের পরিমাণ দাড়িয়েছে ৩১ লাখ টাকা।

দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা সৌরভ দাস ও সহকারী পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম মোড়ল দীর্ঘদিন ধরে এ বিষয়ে তদন্তে মাঠে নামেন। তদন্তকালে ৫৫ লাখ ৩২ হাজার ৪৩৩ টাকার সম্পদের হিসাব পান তরিকুল ও তার স্ত্রীর নামে। ওই টাকা হতে দেনা দেখানো ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা বাদ দিয়ে তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দাড়ায় ৪৭ লাখ ৫২ হাজার ৪৩৩ টাকা। সহকারী পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম মোড়ল জানান, অসুন্ধানে প্রাপ্ত সম্পদের ৪৭ লাখ ৫২ হাজার ৪৩৩ টাকা হতে তাদের দুদকে দেওয়া সম্পদের হিসাব ৩১ লাখ টাকা বাদ দিলে জ্ঞাত আয় বহিভূত ১৬ লাখ ৫২ হাজার ৪৩৩ টাকার সম্পদের হিসাব গোপন করেছেন। অফিস সহায়ক তরিকুল ইসলামের স্ত্রী নাছরিন বেগম পেশায় একজন গৃহিনী এবং তার স্বামীর ওপর নির্ভরশীল। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত এসব সম্পদ তরিকুল ইসলাম তার স্ত্রীর নামে জমা করেছে এবং দুদকের কাছে ১৬ লাখ ৫২ হাজার ৪৩৩ টাকার হিসাব গোপন করেছে।

২০০১ সাল হতে ২০১৭ সালের ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত আসামি মো. তরিকুল ইসলাম জ্ঞাত আয়ের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদ অর্জন করে তা দিয়ে তার উপর নির্ভরশীল তার স্ত্রী নাছরিন বেগম এর নামে সম্পদ অর্জন করে এবং নাছরিন বেগম ১৬ লাখ ৫২ হাজার ৪৩৩ টাকার সম্পদ গোপন করে ও তা দখল রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬(২), ২৭( ১) ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪(২) ধারাসহ দ-বিধির ১০৯ ধারায় অপরাধ করেছেন।

জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী হাফিজুর রহমান বলেন, দুদকের এ ধরনের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এই মামলাসহ নড়াইলের অন্যান্য মামলাগুলির যাতে দ্রুত বিচার সম্পন্ন হয় সেই প্রত্যাশা করি। পাশাপাশি বিভিন্ন দপ্তরের অনিয়ম ও দুর্নীতি সম্পর্কে দুদক কাজ করবে বলে আশা করি।

উল্লেখ্য, তরিকুল ইসলাম ২০০১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর নড়াইল জেলা রেজিস্ট্রি অফিসে নাইটগার্ড পদে যোগদান করেন। এরপর ২০০৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি স্কেলে পিয়ন পদে পদোন্নতি পান। একই পদে ২০০৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি কালিয়ায় বদলী হন। কালিয়া অফিসে যোগদানের পর থেকেই শুরু হয় তরিকুলের অবৈধ আয় বাণিজ্য।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো সংবাদ