মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ০৩:৫৬ অপরাহ্ন

শেবাচিম হাসপাতালের করোনা ইউনিট, শুধু নেই আর নেই

শেবাচিম হাসপাতালের করোনা ইউনিট, শুধু নেই আর নেই

স্বদেশ ডেস্ক:

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে শের-ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালসহ বরিশালের গোটা স্বাস্থ্য সেক্টর। চিকিৎসক, জনবল এবং হাইফ্লোন্যাজাল ক্যানুলাসহ বিভিন্ন চিকিৎসাসামগ্রী সংকটের কারণে অসহায় হয়ে পড়ছেন চিকিৎসকরাও। করোনা ওয়ার্ডটিতে শুধু নেই আর নেই শুনতে হচ্ছে তাদের। অন্যদিকে গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে করোনা আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে গোটা দক্ষিণাঞ্চলে।

শেবাচিম হাসপাতালের করোনা ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, গত মাসের মাঝামাঝি সময়েও শেবাচিম হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১০। বর্তমানে তা ৬৭ জনে দাঁড়িয়েছে। বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার জানান, খুবই ঝুঁঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে বরিশাল। বর্তমানে এখানে শণাক্তের হার প্রায় ৩১ ভাগ। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া মুশকিল হয়ে পড়বে।

বরিশালে করোনা রোগীর চিকিৎসায় একমাত্র ডেডিকেটেড করোনা ওয়ার্ড রয়েছে শেবাচিম হাসপাতালে। এখানে করোনা রোগীদের জন্য রয়েছে ২২টি আইসিইউ বেডসহ দেড়শ শয্যা।

গত বছরের মার্চে দেশে করোনা ধরা পড়ার পর ওয়ার্ডটি চালু করা হয়। ভালো উদ্যোগ নিয়ে ওয়ার্ডটি চালু হলেও চিকিৎসক আর চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকটে এটি এখন নানা সমস্যার মুখে। সমস্যা সমাধানে শেবাচিমের পক্ষ থেকে বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই।

শেবাচিম হাসপাতালের ইনডোর ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. সুদীপ হালদার বলেন, গত বছর আমরা যখন করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া শুরু করি তখন দেখলাম রোগীদের জীবন বাঁচাতে সবচেয়ে জরুরি হাইফ্লোন্যাজাল ক্যানুলার একটিও নেই বরিশালে। তাৎক্ষণিক সমাজের বিত্তবানদের কাছে হাত পেতে সংগ্রহ করা হয় ৫-৬টি ন্যাজাল ক্যানুলা। পরে সরকারিভাবে আসা মিলিয়ে ২২টি ক্যানুলা হলেও মাত্র ১ বছরের ব্যবধানে তার বেশিরভাগই বিকল। কারণ এগুলো সঠিকভাবে পরিচালনার মতো দক্ষ কোনো জনবল নেই।

শুধু ক্যানুলা পরিচালনাই নয়; করোনা ওয়ার্ড ও হাসপাতাল মিলিয়ে যে দুটি আইসিইউ ওয়ার্ড রয়েছে সেগুলো পরিচালনার জন্যও নেই কোনো আইসিইউ স্পেশালিস্ট। অ্যানেসথেসিয়ার চিকিৎসক ডা. নাজমুল সামলাচ্ছেন আইসিইউ। মাত্র ৭ দিনের একটি প্রশিক্ষণ নিয়ে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের দায়িত্ব পালন করছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।

করোনা ওয়ার্ডের দেড়শ মিলিয়ে সাড়ে ১১০০ বেডের হাসপাতাল চলছে ৫০০ বেডের জনবল দিয়ে। দক্ষিণাঞ্চলের বিশাল এ হাসপাতালে অধ্যাপক পদমর্যাদার কোনো চিকিৎসকও নেই।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগে নতুন করে ১২২ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে বিভাগে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১৬ হাজার ৬৭৩ জনে। এ সময় উপসর্গ ও আক্রান্ত হয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে শেবাচিম হাসপাতাল, পিরোজপুর সদর হাসপাতাল ও ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া শেবাচিম হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে উপসর্গ নিয়ে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে করোনা ও আইসোলেশন ওয়ার্ডে ৬৭ জন রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। যাদের মধ্যে ২৫ জনের করোনা পজিটিভ এবং ৪২ জন আইসোলেশনে রয়েছে। করোনায় বরিশাল বিভাগে মোট ২৯৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ও শেবাচিম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

শেবাচিম হাসপাতালের প্রশাসনিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের মার্চে করোনা পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করার পর প্রেষণে ৪০ জন ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ৩২ জন মেডিক্যাল কলেজের এবং আটজন বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার আগেই তারা যে যার মতো লবিং-তদবির করে ফিরে গেছেন পূর্বের কর্মস্থলে। চলমান দ্বিতীয় ওয়েভে হাসপাতালে আসতে থাকা রোগীদের চিকিৎসা চলছে অনেকটা ইন্টার্নি এবং নার্স দিয়ে।

শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম জানান, গত তিন সপ্তাহ ধরে করোনা ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। জনবল ও আইসিইউ বেড সংকটের মধ্যে বাড়তি রোগীর সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। এ ছাড়া করোনা ওয়ার্ডে দায়িত্বরতদের কোয়ারেন্টিনে থাকার প্রয়োজনীয়তা থাকায় প্রায়ই চিকিৎসক ও সাপোর্টিং স্টাফ ঘাটতি থাকে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877