বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:৩৪ অপরাহ্ন

পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীর চীন ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা

স্বদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২২ জুন, ২০২১

স্বদেশ ডেস্ক:

শীতকালীন অবকাশ ও করোনা মহামারীর কারণে দেশে আসা প্রায় পাঁচ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর চীন ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় ধরে তারা বাংলাদেশে আটকে আছেন। অনেকে অলস বসে আছেন। অথচ গত সেপ্টেম্বর থেকে চীনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলেছে, সশরীরে ক্লাসও চলছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যেতে পারছেন না। ইতোমধ্যে চীন সরকার দেশে প্রবেশের শর্ত হিসেবে সে দেশের উৎপাদিত টিকার কথা উল্লেখ করেছে। বাংলাদেশ সরকার চীনা টিকার অনুমোদন দিয়েছে। চীন সরকার দুই ধাপে উপহার হিসেবে টিকা পাঠিয়েছে। গতকাল এক মানববন্ধনে ফেরার অপেক্ষায় থাকা শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চীনা টিকা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

পরিসংখ্যান বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় গড়ে প্রায় ৬ হাজারের মতো বাংলাদেশি শিক্ষার্থী চীনে পড়তে গেছেন। চীনের ব্যুরো অব স্ট্যাটেস্টিক্সের সর্বশেষ রিপোর্টমতে, ২০২০ সালে ২ লাখ ১৯ হাজার ৭৬১ বিদেশি শিক্ষার্থী চীনে পড়াশোনায় ছিলেন। তার আগের ৩ বছরে গড়ে এ সংখ্যা ছিল দ্বিগুণের বেশি। এর মধ্যে ২০১৭ সালে চীন ছিল বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম বিদেশি শিক্ষার্থী গ্রহণকারী রাষ্ট্র। সেই বছর দেশটিতে ৪ লাখ ৪২ হাজার ৭৭৩ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেছেন।

২০১৯ সালের শেষদিকে চীনে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর আতঙ্কিত হয়ে দলে দলে দেশটি ছেড়ে আসেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা। তার মধ্যে বন্ধুরাষ্ট্র বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাও ছিলেন। এক দফা রাষ্ট্রীয় আয়োজনে ৩ শতাধিক শিক্ষার্থীকে ফেরানো হলেও পরে বেইজিংয়ের না-রাজিতে ঢাকার উদ্যোগ থেমে যায়। কিন্তু থামেনি ব্যক্তি উদ্যোগে বাংলাদেশে ফেরার চেষ্টা। দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে (অনেকে থার্ড কান্ট্রি হয়ে) কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ঢাকায় ফিরে আসেন। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের শিক্ষার্থীদের দলে দলে চীন ত্যাগের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে খবরের শিরোনাম হওয়ায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে বেইজিং। বিষয়টিকে বেইজিং ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। যদিও সে সময়ে শি জিনপিং সরকারের তরফে শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ অবস্থানে খাদ্য, নিরাপদ পানি পৌঁছে দেওয়াসহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আশ্বাস দিয়েছিল। চীন দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেও আনে।

গণমাধ্যমের খবর, গত নভেম্বর থেকে চীনে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। চীনে পড়াশোনার আপডেট সরবরাহকারী শীর্ষস্থানীয় ওয়েবসাইট ‘এডমিশন চায়না’র তথ্যমতে, চীনের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হওয়া সত্ত্বেও বিদেশি শিক্ষার্থীদের দেশটিতে ফেরার অনুমোদন না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নতুন নতুন অনলাইন প্রোগ্রাম চালু করছে। এটা বিভিন্ন দেশে আটকাপড়া শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা বলেই মনে করা হচ্ছে।

কিন্তু সরাসরি শারীরিক উপস্থিতিতে ক্লাসের বিকল্প যে অনলাইন ক্লাস বা নতুন নতুন প্রোগ্রাম হতে পারে না, তা মানছেন তারা। বিশেষ করে মেডিক্যাল পড়ুয়াদের সঙ্গে এটি পুরোপুরি বেমানান। বাংলাদেশে আটকেপড়া শিক্ষার্থীরা উভয় দেশের সরকারের সদয় দৃষ্টি কামনা করেছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তারা ৩ দফা দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও শিক্ষাজীবন বাঁচাতে দ্রুত চীনে ফিরতে চাওয়া শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে চীন সরকারের ও ঢাকাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করছে।

বাংলাদেশকে চীন উপহার হিসেবে যে টিকা পাঠিয়েছে, চীনে ফিরতে ইচ্ছুকদের এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। শিক্ষার্থীরা চাইছেন ওই অগ্রাধিকার তালিকায় তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হোক। চীনে পড়াশোনা করেন, এমন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা গতকাল মানববন্ধন করে তাদের টিকার আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। সংগঠনটির পক্ষে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ফজলে রাব্বী। তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস মহামারীর ফলে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী শীতকালীন অবকাশের সময় এবং পরে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে দেশে ফিরে আসেন। আজ পর্যন্ত তাদের ফিরে যাওয়া হয়নি এবং ফিরে যাওয়ার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ইতোমধ্যে চীন সরকার দেশে প্রবেশের শর্ত হিসেবে সে দেশের উৎপাদিত টিকার কথা উল্লেখ করেছে। বাংলাদেশ সরকার চীনা টিকার অনুমোদন দিয়েছে। চীন সরকার দুই ধাপে উপহার হিসেবে টিকা পাঠিয়েছে। রাব্বি বলেন, চীনে ফিরতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের টিকার অগ্রাধিকারের জন্য আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য দপ্তরে চিঠি দিয়েছি। পরবর্তী সময়ে অধিদপ্তর তাদের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার ঘোষণা দেয়। তাদের নির্দেশে আমরা স্বেচ্ছায় চার হাজার শিক্ষার্থীর তালিকা দিই। পরে চীনের টিকার অগ্রাধিকারের তালিকায় দেখা গেল, সেখানে আমাদের কথা নেই।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, এখন চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় চাইনিজ ল্যাঙ্গুয়েজ প্রকৌশল এমবিবিএস ও গবেষণায় বিভিন্ন বিষয়ে ১০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী আছেন। একজন প্রকৌশলী শিক্ষার্থীর তাত্ত্বিক পাঠদানের পাশাপাশি ল্যাবরেটরির কাজ খুব গুরুত্বপূর্ণ। শুধু অনলাইনে এটা শেখা সম্ভব নয়। এমবিবিএস শিক্ষার্থীদের জন্য সমস্যাটা আরও বেশি প্রকট। ইন্টার্নশিপের সুযোগ না পাওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী ডিগ্রি নিয়ে সংশয়ে আছেন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল জানিয়েছে, অনলাইনের ইন্টার্নশিপ তারা গ্রহণ করবেন না। এতে মেডিক্যাল শিক্ষার্থীরা বড় সমস্যায় পড়েছেন।

মানববন্ধনে চীনে পড়ুয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের দ্রুত টিকার আওতায় নিয়ে আসার দাবি করা হয়। এ ছাড়া চীনে যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা পুনরায় চালু করার দাবি করা হয়। সাত মাস ধরে এটি বন্ধ আছে। এর পাশাপাশি চীনা দূতাবাস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পরবর্তী সেমিস্টারের মধ্যেই ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন- সারিমা ঋতু, মোহাম্মদ ওয়ালিদ প্রমুখ।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো সংবাদ