রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৪১ অপরাহ্ন

অরাজনৈতিক হেফাজত রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে

অরাজনৈতিক হেফাজত রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে

স্বদেশ ডেস্ক:

অনেক জল্পনা-কল্পনা শেষে কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা হলেও দ্বন্দ্ব-কোন্দল পিছু ছাড়ছে না হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের। সংগঠনটি এখন প্রকাশ্যে দুই গ্রুপে বিভক্ত। একটি গ্রুপ প্রয়াত আমির আহমদ শফীর অনুসারী এবং অপরটি বর্তমান আমির বাবুনগরী অনুসারী হিসেবে পরিচিত। মাদ্রাসাভিত্তিক অরাজনৈতিক সংগঠনটির রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। গত ৭ জুন ৩৩ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা হওয়ার পরপরই প্রকাশ্যে প্রত্যাখ্যান করেছেন আহমদ শফী অনুসারীরা। অপরদিকে কমিটি ঘোষণা হওয়ায় বেজায় খুশি বাবুনগীরর অনুসারীরা। কমিটিতে স্থান পাওয়া শফীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসূফ মাদানী প্রথমে হাতে লেখা চিঠির মাধ্যমে প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেন। এ ছাড়া নতুন কমিটিকে নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন শফীর ছোট ছেলে আনাস মাদানী তার পিতার অনুসারী অন্য নেতারাও।

হেফাজতের নবগঠিত কমিটির মহাসচিব মাওলানা নুরুর ইসলাম জিহাদী কমিটি ঘোষণার দিন বলেন, কমিটি ঘোষণা করে আমরা সবাই খুশি। তবে আমাদের মনের মধ্যে একটা আশঙ্কা রয়েছে, আমরা ঠিকঠাক দায়িত্ব পালন করতে পারব কিনা?

এদিকে, হেফাজতের নবগঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির পর আহমদ শফীর অনুসারী নেতারা বলেছেন, আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী হত্যা মামলায় স্বীকৃত আসামিরা হেফাজতের কর্ণধার হতে পারে না। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে হেফাজতে ইসলামের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। অচিরেই দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরামের পরামর্শে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে এর গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।

গত ১০ জুন জাতীয় প্রেসক্লাবে আহমদ শফীর ‘ভক্তবৃন্দ’ ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে হেফাজতে ইসলামের সাবেক সাহিত্য সম্পাদক মাওলানা নুরুল ইসলাম জাদিদ লিখিত বক্তব্যে নয়া কমিটি প্রত্যাখ্যান করে আহমদ শফীর মৃত্যুর সঠিক তদন্তপূর্বক দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। ওই সংবাদ সম্মেলনে শফীর ছোট ছেলে সংগঠনটির সাবেক প্রচার সম্পাদক আনাস মাদানী বলেন, আগের মতোই গঠনতন্ত্র ‘লঙ্ঘন’ করে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি ঘোষণার আগে আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি। দাওয়াতও দেয়নি। আলোচনার প্রয়োজন আছে বলে তারা মনে করছে না। অরাজনৈতিক বলার পরও এ কমিটিতে রাজনৈতিক দলের নেতারা রয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।

শফীপুত্র আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশজুড়ে যে সহিংসতা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে সেসব মামলার আসামিদেরও কমিটিতে রাখা হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে হেফাজতে ইসলামের মতো দেশব্যাপী একটি সংগঠন কাজ করতে পারবে না। হেফাজতের কমিটি কীভাবে গঠিত হবে, তার দিকনির্দেশনা সংগঠনের গঠনতন্ত্রে রয়েছে। আগেও যে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছিল, সেখানেও নিয়ম মানা হয়নি। তারাই বিলুপ্ত করেছেন। তারাই আবার নতুন কমিটি করেছেন। এবারও কাউন্সিল না ডেকে তা করা হয়েছে। সবাইকে না জানিয়ে এভাবে কমিটি করা হেফাজতে ইসলামের গঠনতন্ত্রে নেই।

কমিটিতে বড় ভাই মো. ইউসুফের থাকার বিষয়ে আনাস মাদানী বলেন, আমার বড় ভাইকে তারা টেলিফোন করেছিল। উনি সম্মতি দেওয়া ব্যতীত উনাকে কমিটিতে রেখেছেন। উনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

আহমদ শফীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ মাদানী বলেন, আমার সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করলে আমি বলেছি আমি কোনো কমিটিতে থাকব না। আমার সম্মতি ছাড়াই নাম দিয়েছে। এখন এটা নিয়ে আমি প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি। আমি কোনোদিন কোনো রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক সংগঠনে ছিলাম না। আমি ওই মেজাজের মানুষই না। আমি আছি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা নিয়ে এবং আমার আম্মাকে নিয়ে। কেন আমাকে নিয়ে এসব টানাহেঁচড়া জানি না।

শফীর অনুসারী আরেক নেতা মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহী বলেন, এটা অবৈধ ও অসাংবিধানিক কমিটি। জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য পকেট কমিটি করা হয়েছে। জনগণের আশা আকাক্সক্ষার প্রতিফলন এতে নেই। আহ্বায়ক কমিটির নামে তারা ফটিকছড়ি সমিতি করেছিল। এখন পুরনো বউকে নতুন শাড়ি পরাইছে। বাংলাদেশের মানুষ তাদের চেনে। তিনি বলেন, আমরা চেয়েছিলাম হেফাজতে ইসলামে সমান্তরালভাবে সবাই থাকবে। তারা দেশের ওলামায়ে কেরামদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চায়। এ কমিটি করে কোনো একটা রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে তারা। অথচ তারা আগে বলেছিল রাজনৈতিক কাউকে রাখবে না। ৩৩ জনের মধ্যে ১৩ জনই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877