মুসা আল হাফিজ:
জমিরুদ্দীন যখন এলাহাবাদ মিশনে গেলেন, একটি প্রাণচাঞ্চল্যের ঢেউ বয়ে গেল। তিনি যেহেতু একদা মুসলিম ছিলেন, তাকে সামনে আনা হতো মুসলিমবিরোধী আক্রমণে। জমির এটি উপভোগ করতেন খুব। বলতেন অনর্গল, লিখতেন শাণিত। তর্কেও ছিলেন পারঙ্গম। খ্রিষ্টবাদের পক্ষে তিনি লিখতে শুরু করেন বিভিন্ন পত্রিকায়। বিভিন্ন রচনায় ইসলামকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে শুরু করেন তীর নিক্ষেপ। যখন তিনি ডিভিনিটি কলেজে পড়েন, তখনই শিক্ষকদের লেকচার থেকে নোট করে রচনা করেন ‘আসল কোরান কোথায়?’ শিরোনমে এক প্রবন্ধ। বিদ্যমান কুরআন আসল নয়, তা প্রমাণ করতে ছয়টি প্রশ্ন সেখানে উত্থাপন করেন তিনি। প্রবন্ধটি ১৮৯২ এর জুন মাস থেকে প্রকাশিত হতে থাকে, ‘খ্রিষ্টীয় বান্ধব’ পত্রিকায়, ধারাবাহিকভাবে। পত্রিকাটির মূল উদ্দেশ্য ছিল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো আর খ্রিষ্টান হয়ে গেলেই মুসলিমরা শান্তি ও মুক্তি পাবে, এমনটি প্রচার করা।
এলাহাবাদে লেখনীর এই ধারা ছিল বহুমাত্রিক। কী আঞ্চলিক ভাষায়, কী আন্তর্জাতিক নানা ভাষায় তিনি নিজেকে প্রকাশ করছিলেন। মিশনারি মহলে তাকে নিয়ে দেখা দেয় আলাদা আগ্রহ।
কলকাতার মিশনারিরা জমিরুদ্দীনকে কলকাতায় নিয়ে আসার তদবির শুরু করেন। কিন্তু এলাহাবাদ তো তাকে ছাড়তে চায় না। শেষ অবধি একজন বাঙালি হিসেবে বাংলায় তার থাকা উচিত, এই যুক্তির কাছে হার মানল এলাহাবাদ মিশন। বাংলায় কর্মরত পাদ্রি বাটলার সাহেব তাকে বহু আগেই এখানকার কাজের জন্য বাছাই করে রাখেন। যখন তিনি কৃষ্ণনগর নর্মাল স্কুলে পড়েন, তখনই স্কুলের অধ্যক্ষ বাটলার তার জন্য তৈরি করেন ‘মিশনারি প্রচারকার্য স্কিম।’ ফলে বাংলায় তার কাজের বিষয়টি পূর্বনির্ধারিত।
কলকাতায় এলেন জমির। নদিয়ায় তখন মুসলিমদের সাথে খ্রিষ্টানদের গোলযোগ চলছিল। সেখানে জমিরকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় কলকাতার সিএমএস কনফারেন্স। নদিয়ার শিকারপুরে আসতে হলো তাকে। সেখানে ছিলেন প্রবীণ পাদ্রি লেঙ্কিবার। তার নেতৃত্বে জমির চষে বেড়াতে লাগলেন আল্লার দরগা, হলুদ বাড়িয়া, মীরপুর, সোনাইকুণ্ডি, ভেড়ামারা, মহিষাডেরা ইত্যাদি অঞ্চল। বিভিন্ন আত্মজীবনীমূলক রচনায় জমির তখনকার বিবরণ দিয়েছেন। ‘খ্রিষ্টীয় সমাজে আট বছর’ গ্রন্থে জমির লিখেন পাদ্রি শল-এর নেতৃত্বে মুরুটির মাধবপুর, বানিয়াডাঙ্গা, কাথুলি, আউদিয়া, জিগলকান্দি ইত্যাদিতে খ্রিষ্টধর্ম প্রচারের ইতিবৃত্ত। তার রচনা ও বক্তৃতা বহু মুসলমানকে খ্রিষ্টবাদে উদ্বুদ্ধ করে। অনেকেই খ্রিষ্টান হয়ে যান। আল কুরআনের ওপর আপত্তিমূলক তার রচনা, ‘আসল কোরান কোথায়?’ এর কপিগুলো চার দিকে ছড়িয়ে পড়তে লাগল।
মিশনারিরা এটি বিতরণ করতেন বিনামূল্যে। মুসলিম সমাজে তৈরি হলো নানা প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ তো জমিরকে মেরে ফেলবেন। প্রতিবাদ হলো, বিক্ষোভ হলো। ক্ষোভের প্রকাশ ঘটানো হলো নানাভাবে। সবচেয়ে ‘কার্যকর প্রতিক্রিয়াটি এসেছিল মুনশী মেহেরুল্লাহর তরফ থেকে। যথার্থ জবাবী রচনা। যা প্রকাশিত হয় সুধাকর পত্রিকায় (১৯ চৈত্র, ১২৯৯)।
মুসলমানদের হয়ে কথা বলার মুখপত্র তখন সুধাকর। মুনশী মেহেরুল্লাহর নেতৃত্বে কলকাতা ডভটন ও সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের আরবি ও ফারসির অধ্যাপক মৌলবী মেয়রাজউদ্দীন আহমদ, ময়মনসিংহের টাঙ্গাইলের অন্তর্গত চারানের অধিবাসী এবং কলকাতা আলিয়া মাদরাসার বাংলা ও সংস্কৃতের অধ্যাপক পণ্ডিত রেয়াজুদ্দীন আহমদ মাশহাদী, বশিরহাটের মোহাম্মদপুর নিবাসী মুন্সী শেখ আবদুর রহিম এবং ত্রিপুরা জেলার রূপসার অধিবাসী মুন্সী মোহাম্মদ রেয়াজুদ্দীন আহমদের উদ্যোগে প্রকাশিত হচ্ছিল সুধাকর নামক পত্রিকাটি।
শুরুটা অবশ্য সুধাকর নামে হয়নি। এসব মনীষী মুসলিম কৃষ্টি এবং ইসলামের তত্ত্বকথা সংক্রান্ত বিভিন্ন বই অনুবাদ করে খণ্ড খণ্ড আকারে প্রকাশ করতেন। জামালুদ্দীন আফগানীর নেচার ও নেচারিয়া-এর অনুবাদ করে এসলামতত্ত্ব নামে প্রকাশ করেন ১২৯৪ সালের আশ্বিন মাসে অর্থাৎ ১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দে; প্রথমবার। কিছু দিন পরে মওলানা আব্দুল হক হাক্কানীকৃত ‘তফসিরে হাক্কানী’র ভূমিকায় ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব বিষয়ক অংশ অনুবাদ করে প্রকাশ করলেন ‘এসলামতত্ত্ব’ দ্বিতীয় খণ্ড। যেহেতু এসলামতত্ত্ব ধারাবাহিকভাবে বের হতো, অনেকেই একে মাসিক পত্রিকা মনে করতেন। এর ধারাবাহিকতা জারি থাকেনি। তবে এর বিক্রয়লব্ধ অর্থে এবং ময়মনসিংহ করটিয়ার জমিদার হাফেজ মাহমুদ আলী খান এবং বর্ধমানের কুসুম গ্রামের জমিদার মুন্সী মোহাম্মদ এব্রাহিমের অর্থসহায়তায় জন্ম নেয় সাপ্তাহিক সুধাকর।
সুধাকরের প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয় ১২২৬ এর আশ্বিন মোতাবেক ১৮৮৯ সালে। নানা বিপর্যয়ের ভেতর দিয়ে চলছিল এ পত্রিকা। এর পৃষ্ঠাগুলোতে বাংলার মুসলমানরা আপন ধর্মের মহিমা, তত্ত্ব, তথ্য, জাতীয় ঐতিহ্য ও গৌরবের সাক্ষাৎ পেতেন। সেখানে কথা বলত বাংলার মুসলিম মেধা। বঙ্কিমচন্দ্রসহ মুসলিমবিদ্বেষী লেখকদের সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পের জবাবে মুসলিমদের প্রতিবাদ উচ্চারিত হতো এ পত্রিকায়। খ্রিষ্টান মিশনারিদের আক্রমণের মুখেও প্রাচীর হয়ে দাঁড়াত এ কাগজ। মেহেরুল্লাহর জবাবি রচনা ছিল এরই এক নিদর্শন।
প্রখর যুক্তির সাহায্যে এবং কোনোরূপ আবেগ বা ক্রোধ প্রকাশ না করে তিনি ধারাবাহিকভাবে লিখে যান খ্রিষ্টানি ধোঁকাভঞ্জন শিরোনামে। জমিরুদ্দীনের উত্থাপিত প্রশ্নগুলোর জবাব দেন এবং প্রমাণ করেন যে কুরআন শরিফ সেভাবেই আছে, যেভাবে নাজিল হয়েছিল। তার ভাষা, বাকভঙ্গি এমনকি প্রতিটি শব্দ ও বর্ণ অবিকৃত রয়েছে। কিন্তু খ্রিষ্টানদের ‘বাইবেল’ এবং ইহুদিদের ‘তাওরাত’ বিকৃতির শিকার হয়েছে বহুবার। ফলে আসল তাওরাত বা ইঞ্জিল আসলে কোথায়, সেটি কেউ বলতে পারবে না।
এটি ছিল প্রবল এক রচনা, যার জবাব দিতে হতো জমিরকে। তিনি সুধাকরে (২৩ বৈশাখ, ১৩০০) লিখলেন আরেকটি সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধ। এর মূলকথা ছিল, হজরত মোহাম্মদ সা: কারো কাছে শিক্ষা লাভ করেননি। তিনি কিভাবে কুরআন লিখতে পারলেন? তিনি কুরআন লিখতে পারেননি। তাহলে অবতীর্ণ কুরআন অলিখিত ও অরক্ষিত ছিল, সেটিই নিশ্চিত। তাহলে কুরআন বলতে এখন যা আছে, তা কিভাবে প্রকৃত ওহি বলে প্রমাণিত হবে?
মেহেরুল্লাহ এর জবাবে সুধাকরে (১৭ আষাঢ়, ১৩০০) লিখেন, ‘আসল কোরান সর্বত্রই’। মেহের দেখান, হজরত ঈসা আ: যদি বিনা পিতায় জন্ম নিতে পারেন, তাহলে হজরত মোহাম্মদ সা: কেন উম্মি হয়ে কুরআনকে ধারণ করতে পারবেন না? কুরআন সঠিকভাবে সংরক্ষণের জন্য একজন নবীকে লিখতেই হবে, তা জরুরি নয়। মহানবীর সা: কাছে আল্লাহপাক ওহি পাঠাতেন ফেরেশতার মাধ্যমে। অবতীর্ণ ওহি নবীজীর স্মৃতিতে সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব নেয়ার ঘোষণা দেন স্বয়ং আল্লাহ। পুরো কুরআন মহানবীর মুখস্থ ছিল। কিন্তু যখনই কোনো আয়াত নাজিল হতো, সাহাবিদের তিনি লিখে ও মুখস্থ করে রাখার আদেশ দিতেন। এভাবে এক দিকে কুরআন শরিফ নাজিল হয় আর লেখনী ও মুখস্থকরণের ধারায় সুরক্ষিত হয়। এ বিতর্ক জমিরুদ্দীনকে প্রভাবিত করেছিল বেশ। তার অনুসন্ধানী মন খ্রিষ্টবাদকে আবারো নিরীক্ষা করছিল।
১৮৯২ সালে এমনই এক নিরীক্ষা ধর্মটির প্রতি তাকে সন্দিহান করে তোলে। কুষ্টিয়া অঞ্চলের মধুগাড়ী গ্রামে তিনি অবস্থান করছিলেন। সেখানে মুসলমানদের সাথে খ্রিষ্টানদের বিতর্কে তিনি অংশ নিয়েছিলেন। জোরালো বক্তব্য রেখেছিলেন। হাজারো মানুষকে করেছিলেন মন্ত্রমুগ্ধ। ‘আমার জীবনী ও ইসলাম গ্রহণ বৃত্তান্ত’ গ্রন্থে জমির জানান সেদিনের ইতিবৃত্ত। মিশনারির তাঁবুতে ফিরে পাঠ করছিলেন কুরআন শরিফের বাংলা অনুবাদ। সূরা ছফের ৫ নম্বর আয়াতে লক্ষ করলেন ঈসা আ:-এর উক্তি। অনুসারীদের তিনি বলেছিলেন, আমার পরে প্রেরিত পুরুষ আসবেন, যার নাম আহমদ। বাক্যটি জমিরের অন্তরে বিদ্ধ হলো তীরের মতো। বাইবেলে কি এর অনুরূপ বক্তব্য নেই? জমির লিখেন, ‘কে যেন আমার কর্ণে বলিয়া দিলো যে, বাক্যটি পূর্বে বাইবেলে ছিল, কিন্তু দুষ্ট খ্রিষ্টানেরা উহা বাইবেল হইতে বিয়োগ করিয়া দিয়াছে।’
এরপর জমির অনুসন্ধান করে চললেন বাইবেল নিয়ে। কিভাবে তা কালে কালে বিকৃত হয়েছে? কিভাবে হয়েছে রূপান্তরিত? বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত বাইবেল নিয়ে তিনি নিরীক্ষা করতে থাকলেন। লক্ষ করলেন, বাইবেলে অসঙ্গতি সম্পর্কে তার অনুমান যথার্থ। অনেক ভুল তিনি চিহ্নিত করলেন একে একে। জমির লিখেন, ‘এখন যেমন বাইবেল একখণ্ড পুস্তকাকারে বিদ্যমান রহিয়াছে, অতি প্রাচীনকালে তা ছিল না। উহার হস্তলিপিসমূহ পৃথক পৃথকরূপে ছিল। উক্ত হস্তলিপির নাম, যথা : আলেকজান্দ্রিয়া হস্তলিপি, ইফ্রায়িমী হস্তলিপি ও ভ্যাটিকান হস্তলিপি ইত্যাদি। ঐসব হস্তলিপিতে কমবেশি আছে আর পরস্পরের সাথে পরস্পরের ঐক্যতা নেই।’ তিনি লক্ষ করলেন, ইহুদিদের বাইবেল আর খ্রিষ্টানদের বাইবেলে কোনো মিল নেই।
অস্থির ও জিজ্ঞাসু দিনগুলো জমিরকে রক্তাক্ত করছিল। যে সত্যের জন্য তিনি পিতা, মাতা, স্বজন, পরিজনকে ত্যাগ করলেন, সেই সত্য তাহলে কোথায়? তিনি কি তাহলে আলোর জন্য যাত্রা করে আলেয়ার পেছনে ছুটলেন? জমিরের ক্ষতবিক্ষত মন যতই অনুসন্ধান করছিল, একটি স্থির সিদ্ধান্তের দিকেই যাচ্ছিল। জমিরের ভাষায় সেটি হলো, ‘বর্তমান সময়ে কোথাও আসল বাইবেল নাই। খ্রিষ্টানেরা উহা বিকৃত ও পরিবর্তিত করিয়া দিয়াছে।’
এখন তাহলে কী করবেন জমির? কোথায় তাহলে সত্য ও নিশ্চয়তা? জমির যখন এ ভাবনায় দগ্ধ হচ্ছেন প্রত্যহ, পাদ্রিরা তার কাজের প্রশংসা করছেন, তাকে নিয়ে আরো বড় কাজের পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন। কিন্তু ভেতরে ভেতরে নিয়তি যে পরিকল্পনা সাজিয়ে রেখেছে, সে সম্পর্কে কে জানত? জমির খ্রিষ্টান মিশনারি ক্যাম্পে থাকেন বটে, কিন্তু তার মন এখন আর খ্রিষ্টান নয়।
খ্রিষ্ট ধর্মের প্রতি যে অবিচল ভক্তি শ্রদ্ধা আস্থা জন্মেছিল, তা ভেঙে গেছে। প্রকৃত সত্যধর্মের অন্বেষণে তার চিত্ত চঞ্চল ও কাতর হয়ে উঠেছে। মনে, মস্তিষ্কে চিৎকার করছে গভীর যাতনা ও অনিশ্চয়তা। কিন্তু তিনি যে ইসলামে প্রত্যাবর্তন করবেন, সেটি ভাবতে পারছিলেন না। যদিও মুনশী মেহেরুল্লাহর সাথে কলমি বিতর্কে হেরেছিলেন এবং প্রমাণ করতে পারেননি, আল কুরআন আল্লাহর বাণী নয়।
তার বরং মনে হচ্ছিলো, সত্যের জন্য ব্রাহ্মধর্ম হবে সেরা পছন্দ। তিনি অনেক আগ থেকেই ব্রাহ্মদের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এলাহাবাদে তাদের এক প্রতিষ্ঠান ছিল, যার নাম, মাদরাসায়ে ইলমে এলাহী। সেখানে তিনি যেতেন। তাদের ধর্মকে জানতেন। কলকাতায় এসে আরো বেশি জানা শুরু করলেন। রামমোহন রায় পড়লেন, বাবু কেশবচন্দ্র সেন পাঠ করলেন। ভালো লেগে গেল তাদের ধর্মমত। স্থির করলেন, ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করে নেবেন।
ঠিক সেই সময়ে এক বিকেলে কলকাতার অ্যালবার্ট হলে ব্রাহ্ম পণ্ডিত বাবু নগেন্দ্রনাথ মিত্রের এক বক্তৃতা তিনি শোনেন। আলোচ্য বিষয় ছিল, ‘মুহাম্মদ ও তার ধর্ম’। নগেন্দ্রনাথ মিত্র বক্তৃতায় বলেন, খ্রিষ্টানরা অন্যান্য ধর্মের মহত্ত্ব দেখতে পান না। এমনকি তারা হজরত মুহাম্মদ সা: সম্পর্কে বিদ্বেষপূর্ণ মিথ্যাচার করেন। তাকে কপট, ভণ্ড, ধর্মহীন ইত্যাদি বলেন। কিন্তু তার মধ্যে যদি ধর্ম না থাকত, তিনি কিভাবে পৃথিবীর প্রধান এই ধর্মের প্রবর্তক হতে পারতেন? কিভাবে কোটি কোটি মানুষ হাজার বছর ধরে তার অনুসরণ করে আসছে? বস্তুত তিনি ছিলেন ঈশ্বরে সমর্পিত একজন প্রকৃত মহামানব ও সত্যধর্মের প্রতিবিম্ব।
জমিরুদ্দীন একান্তভাবে সত্যকেই চাইছিলেন। এ বক্তৃতা তাকে সহায়তা করল। জমির লিখেন, উপরোক্ত বাক্যগুলো আমি শ্রবণ করিয়া পবিত্র মুসলমান ধর্মের বিষয় বিশেষরূপে অনুসন্ধান করতে লাগিলাম।’ ইসলাম বিশেষজ্ঞদের কাছে শুরু করলেন যাতায়াত। জীবন সম্পর্কে ইসলামের শিক্ষা ও উপদেশ সম্পর্কে হলেন অবগত। পাঠ করলেন মুনশী মেহেরুল্লাহর ‘রদ্দে খ্রীস্টান ও দলিলুল ইসলাম’, মোহাম্মদ রেয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ ও শেখ আব্দুর রহিম সম্পাদিত ‘ইসলামতত্ত্ব’ ১ম ও ২য় খণ্ড। জমির লিখেন, ‘এরপর পবিত্র মুসলমান ধর্মে আমার দৃঢ় বিশ্বাস হয়।’
মিশনারি কাজের ইতি ঘটিয়ে খ্রিষ্টধর্ম ত্যাগের ঘোষণা দিলেন জমির। ফিরে এলেন আপন গ্রামে, নিজ ঘরে। এখানে আত্মীয়স্বজনের আনন্দের ভেতর মৌলভী রেয়াজ উল হকের কাছে কালেমা পাঠ করে আবারো ফিরে পাবেন হারানো নিজেকে।
জমির যখন খ্রিষ্টান মিশন ত্যাগ করে আপন শেকড়ে চলে আসছিলেন, পাদ্রি তখন হয়তো ভাবছিলেন, আহা, জ্ঞানপ্রাজ্ঞ মানুষটি হারিয়ে যাচ্ছে গভীর অন্ধকারে!
লেখক : কবি, গবেষক