রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:০৭ অপরাহ্ন

হেফাজতের নতুন কমিটিতে স্থান হয়নি মামুনুল হকদের

হেফাজতের নতুন কমিটিতে স্থান হয়নি মামুনুল হকদের

স্বদেশ ডেস্ক:

আমির পদে জুনাইদ বাবুনগরীকেই বহাল রেখে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ৩৩ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। মহাসচিব পদে থাকছেন মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী। সংগঠনটির প্রয়াত আমির আহমদ শফীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ মাদানীকে স্থান দিলেও কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি। রাখা হয়নি সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকসহ নানা ইস্যুতে বিতর্কে জড়িয়ে পড়া নেতাদেরও। রাজধানীর খিলগাঁওয়ের মাখজানুল উলুম মাদ্রাসায় গতকাল সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে নতুন কমিটি ঘোষণা করেন হেফাজতের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী।

হেফাজতের একটি সূত্রে জানা গেছে, নতুন কমিটি ঘোষণার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত বর্তমান কমিটির নেতারা মাওলানা ইউসূফ মাদানীসহ শফীপন্থি কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছিলেন। এমনকি সংবাদ সম্মেলনের সময় আহমদ শফীর বড় ছেলেকে পাশে রেখেই নতুন কমিটি ঘোষণা করতে চেয়েছিলেন বাবুনগরীর গ্রুপের নেতারা। কিন্তু শেষ পর্যায়ে এসে তা আর হয়নি।

নতুন কমিটির নায়েবে আমির করা হয়েছে মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, আবদুল হক মোমেনশাহী, সালাউদ্দিন নানুপুরী, মিজানুর রহমান চৌধুরী (দেওনার পীর), মুহিব্বুল হক (গাছবাড়ি), ইয়াহইয়া (হাটহাজারী মাদ্রাসা), আবদুল কুদ্দুস (ফরিদাবাদ), তাজুল ইসলাম (ফিরোজ শাহ), জসিমুদ্দিন (হাটহাজারী মাদ্রাসা)। এ ছাড়া যুগ্ম মহাসচিব পদে স্থান পেয়েছেন সাজেদুর রহমান (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), আবদুল আউয়াল (নারায়ণগঞ্জ), লোকমান হাকীম (চট্টগ্রাম), আনোয়ারুল করিম (যশোর), আইয়ুব বাবুনগরী। সহকারী মহাসচিব হিসেবে স্থান পেয়েছেন মাওলানা জহুরুল ইসলাম (মাখজান) ও মাওলানা ইউসুফ মাদানী, সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদ্রিস (চট্টগ্রাম), অর্থ সম্পাদক মুহাম্মদ আলী (মেখল), সহ-অর্থ সম্পাদক হাবিবুর রহমান কাশেমী (নাজিরহাট), প্রচার সম্পাদক মুহিউদ্দিন রব্বানী (সাভার), সহ-প্রচার জামাল উদ্দিন (কুড়িগ্রাম), দাওয়াবিষয়ক সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম সোবহানী (উত্তরা), সহ-দাওয়াবিষয়ক সম্পাদক ওমর ফারুক (নোয়াখালী)। কমিটির সদস্যরা হলেন- মোবারক উল্লাহ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), ফয়জুল্লাহ (মাদানী নগরের পীর), ফোরকানুল্লাহ খলিল (চট্টগ্রাম), মোসতাক আহমদ (খুলনা), রশীদ আহমদ (কিশোরগঞ্জ), আনাস (ভোলা), মাহমুদুল হাসান (ফতেহপুরী), মাহমুদুল আলম (পঞ্চগড়)।

নয় সদস্যের একটি খাস (বিশেষ) কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির প্রধান হিসেবে রয়েছেন মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। এ ছাড়া কমিটিতে রয়েছেন হেফাজতের আমির বাবুনগরী, নায়েবে আমির আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী, মিজানুর রহমান চৌধুরী, মুহিব্বুল হক (গাছবাড়ি), সাজেদুর রহমান (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), আবদুল আউয়াল (নারায়ণগঞ্জ) ও মুহিউদ্দিন রব্বানী (সাভার)। নুরুল ইসলাম জিহাদী বলেন, ‘এই খাস কমিটি মজলিশে শূরা হিসেবে বিবেচিত হবে। তারা হেফাজতের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে কাজ করবেন। এ ছাড়া তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে খাস কমিটি।’

হেফাজতের যেসব নেতা কারাগারে আছেন তাদের কমিটিতে না রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির নতুন মহাসচিব আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদী বলেন, ‘তাদের নতুন কমিটিতে রাখা না রাখা এখানে বিষয় না। কারণ আগের কমিটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আহ্বায়ক কমিটির দায়িত্ব ছিল নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা। সেজন্য আজকে (সোমবার) আমরা কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করেছি। কাউকে বাদ দেওয়া না দেওয়া, রাখা না রাখার প্রশ্ন এখানে না করলেই ভালো হয়।’ যারা কারাগারে আছেন তারা কি হেফাজতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না? এমন প্রশ্নের জবাবে জিহাদী বলেন, ‘সবাই হেফাজতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। সব মুসলমান হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সদস্য। আমাদের মুরব্বির ঘোষণা, যেহেতু এটা অরাজনৈতিক সংগঠন, সেজন্য এই কমিটির সবসময় অরাজনৈতিক কর্মসূচি ও কর্মকা- থাকবে। কাউকে বাদ দেওয়া কাউকে বাছাই করার প্রশ্নই নেই। আহ্বায়ক কমিটি চিন্তাভাবনা করে এ কমিটি ঘোষণা করেছে।’

আগের কমিটিতে যারা ছিল দেখা যাচ্ছে তারা গ্রেপ্তার হওয়ার পর আপনারা বাদ দিয়েছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে হেফাজতের নতুন মহাসচিব বলেন, ‘বাদ দেওয়ার প্রশ্নই নেই। আমাদের এখানে আজকে (সোমবার) যারা উপস্থিত হয়েছেন সবাই হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছিলেন, হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিল ১৫১ জন। এখন এটা প্রাথমিক অবস্থায় ছোট পরিসরে করেছি। এরপরে কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে কাদের রাখা হবে, না রাখা হবে।’ কমিটি ঘোষণা করে আপনারা খুশি কিনা? এই প্রশ্নের জবাবে হেফাজতের এই নেতা বলেন, ‘আমরা সবাই খুশি। অন্যদিকে আমাদের মনের মধ্যে একটা আশঙ্কা রয়েছে, আমরা ঠিকঠাক দায়িত্ব পালন করতে পারব কিনা?’

এ দিকে হেফাজতের নতুন কমিটিতে সহকারী মহাসচিবের পদ দেওয়া হয়েছিল শফীপুত্র মাওলানা ইউসুফ মাদানীকে। কিন্তু গতকাল নতুন কমিটি ঘোষণার পরই হাতে লেখা এক চিঠিতে প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়ে মাদানী লিখেন, ‘হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের তথাকথিত কেন্দ্রীয় কমিটিতে আমার নাম দেখে আমি মর্মাহত। যারা আমার পিতাকে কষ্ট দিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় দিয়েছেন তাদের সঙ্গে আমি কখনো এক হতে পারি না। তাই ঘোষিত তথাকথিত হেফাজতের কমিটি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877