স্বদেশ ডেস্ক:
ভারতে একদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সঙ্কট। দেখা দিয়েছে আর্থিক মন্দা। সেই ভয়াবহ আর্থিক সঙ্কটেও ভারত সরকার ৫০ হাজার কোটি রুপি বরাদ্দ করছে সাবমেরিন খাতে। কোভিডকালেও বিপুলভাবে বদলে যাচ্ছে গোটা পৃথিবীর কূটনীতির সমীকরণ। এই সামগ্রিক পরিস্থিতিতে মন্দার জেরে ভয়াবহ আর্থিক সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েও দীর্ঘ দিন ধরে থমকে থাকা একটি মেগা সাবমেরিন প্রকল্পে অবশেষে অনুমোদন দিলো ভারত। অত্যাধুনিক একঝাঁক ডুবোজাহাজ নির্মাণ খাতে শুক্রবার প্রায় ৫০ হাজার কোটি রুপি বরাদ্দ হয়েছে।
এদিন ডিফেন্স অ্যাকুইজিশন কাউন্সিলের বৈঠকের পর ভারতীয় নৌবাহিনীর ওই প্রস্তাবে ছাড়পত্রদেয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। ৫০ হাজার কোটি রুপির সাবমেরিন ও সংশ্লিষ্ট অন্য সামরিক উপকরণের অর্ডার দেয়া হচ্ছে। শিগগিরই জারি হবে টেন্ডার। স্বাধীন ভারতের সামরিক ইতিহাসে পি ৭৫ আই ক্লাস সাবমেরিন প্রজেক্ট হতে চলেছে সবচেয়ে আধুনিক একটি প্রতিরক্ষা প্রকল্প। ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, দক্ষিণ কোরিয়া এবং রাশিয়ার পাঁচটি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে চুক্তি সম্পাদন করে ওই ডুবোজাহাজগুলো নির্মাণের উদ্যোগ নেবে দু’টি ভারতীয় সংস্থা।
ভারতীয় নৌবাহিনী মোট ২৪টি সাবমেরিন নিজেদের অস্ত্রভাণ্ডারে যুক্ত করতে চলেছে। তার মধ্যে ছয়টি সম্পূর্ণ নতুন প্রযুক্তির নিউক্লিয়ার অ্যাটাক সাবমেরিন। ভারতের কাছে এখন যে সাবমেরিন শক্তি রয়েছে, তার তুলনায় বহুগুণ ক্ষমতাশালী এই নতুন সাবমেরিন সিরিজের মধ্যে থাকবে ১২টি ল্যান্ড অ্যাটাক ক্রুজ মিসাইল এবং অ্যান্টি শিপ ক্রুজ মিসাইল। একইসাথে নৌবাহিনীর প্রস্তাবের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এই ডুবোজাহাজগুলো সমুদ্রের মধ্যেই টর্পেডো বহন এবং নিক্ষেপ করতে পারবে।
ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করেছিলেন, আগামী দিনে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হবে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পে। নৌবাহিনীর ক্ষেত্রে এটাই সবথেকে বৃহৎ ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্প হতে চলেছে বলে শুক্রবার দাবি করেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। বিদেশী ও ভারতীয় সংস্থার উদ্যোগে মাজেগাঁও ডকইয়ার্ড লিমিটেড এবং লারসেন অ্যান্ড টুব্রোর ইয়ার্ডে এই সাবমেরিনগুলি তৈরি হবে।
পি ৭৫ আই প্রকল্পে ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতীয় সাবমেরিন প্রযুক্তিকে বিশ্বসেরা হিসেবে আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল ভারত। ২০১৬ সালে ওই সময়সীমা বাড়িয়ে ২০৫০ সাল পর্যন্ত করার কথা ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিক্কর। শুক্রবার অনুমোদিত বিপুল অঙ্কের এই ডুবোজাহাজের বরাত সম্পূর্ণ হতে সময় লাগবে ১২ বছর। আপাতত সাবমেরিনের জন্য ৪৩ হাজার কোটি এবং সামরিক উপকরণের জন্য ৬ হাজার কোটির তহবিল বরাদ্দ হলেও এই অঙ্ক আরো বাড়তে পারে। কারণ, সাবমেরিন নির্মাণের পর সেখানে যে অস্ত্রভাণ্ডার যুক্ত করা হবে, সেটির ব্যয় আগামী দিনে বেড়ে যেতে পারে।
একদিকে কোভিড মোকাবিলায় স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নির্মাণ এবং অন্যদিকে গোটা দেশবাসীর টিকাকরণের জন্য বিপুল অর্থবরাদ্দ করতে হবে কেন্দ্রকে। সরকার ইতিমধ্যেই ভ্যাকসিনের জন্য ৩৫ হাজার কোটি রুপি বাজেটে বরাদ্দ করেছে। কিন্তু তাতেও পর্যাপ্ত টিকা না মেলায় মোদি সরকারের তীব্র সমালোচনা শুরু করেছে বিরোধীরা। যতটা প্রয়োজন, অনেক রাজ্যই তার সিকিভাগ ভ্যাকসিন পাচ্ছে না। এ নিয়ে বারবার অভিযোগ জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। আর এই টানাপোড়েনের মধ্যে নৌবাহিনীর শক্তিবৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রায় ৫০ হাজার কোটি রুপ বরাদ্দ হওয়ায় স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে।
হামাসের নতুন অস্ত্র : আত্মঘাতী সাবমেরিন
রাশিয়ায় ফিরে গেল পরমাণু হামলায় সক্ষম সাবমেরিন
ভারতীয় নৌবাহিনীর কাছে পরমাণু হামলায় সক্ষম একমাত্র সাবমেরিন ছিল আইএনএস চক্র। তবে চুক্তি শেষের আগেই নৌবাহিনীর সেই জাহাজ ফিরে গেল রাশিয়ায়। ৮ বাজার ১৪০ টনের ওই সাবমেরিন এখন রাশিয়ার ভ্লাদিভস্তকের পথে রওনা দিয়েছে। চুক্তি শেষের কমপক্ষে ১০ মাস আগে আইএনএস চক্র ফেরার পথে রওনা দিলো বলে জানা গিয়েছে।
এই সাবমেরিন নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে প্রায় ২০ লক্ষ ডলারের চুক্তি হয়েছিল। ২০১২ সালের ৪ এপ্রিল প্রথম বিশাখাপত্তনমে ওই সাবমেরিন আসে। দীর্ঘ ন’বছর ভারতীয় নৌবাহিনীতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছে চক্র। অবশেষে নির্ধারিত ১০ বছরের চুক্তির মেয়াদ শেষের ৯ মাস আগেই ফিরিয়ে নেয়া হলো ওই সাবমেরিনকে। নৌবাহিনী সূত্রে খবর, পাওয়ার প্লান্টের সমস্যা এবং মেরামতি সংক্রান্ত সমস্যার জন্যই সাবমেরিনটিকে ফিরিয়ে নেয়া হলো।
সূত্র : বর্তমান