স্বদেশ ডেস্ক:
২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতির অর্থ সংস্থান নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। প্রতিষ্ঠানটির ভাষ্য, প্রস্তাবিত বাজেটে অনুদান বাদ দিলে ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। যা জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ। আজ শুক্রবার ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সিপিডির পর্যালোচনায় এ আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।
প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, বাজেট ঘাটতির অর্থ কোথা থেকে আসবে সেটা বড় প্রশ্ন। বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৬.২ শতাংশ ধরা হয়েছে। বৈদেশিক উৎস থেকে বাজেট ঘাটতি পূরণের বিষয়টি ইতিবাচক দিক। এটা আকাঙ্ক্ষিত। তবে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের ১০ মাসের গতিপ্রকৃতি পর্যালোচনা করে পুরো অর্থবছর কেমন হতে যাচ্ছে, সে বিষয়টি মাথায় রেখে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে গতিপ্রকৃতি ঠিক করা হয়নি। আমরা এখানে দুর্বল অবস্থায় রয়েছি।
ফাহমিদা বলেন, রাজস্ব আহরণের বিষয়ে বাজেটে বলা হয়েছে, আগামী অর্থবছরে চলতি সংশোধিত বাজেটের তুলনায় রাজস্ব আহরণ ১০.০৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। ঘাটতি বাজেটের অর্থায়ন রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে কতটুকু সম্ভব হবে, সে বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ আছে। তবে সিপিডি পর্যালোচনায় দেখতে পায় রাজস্ব আহরণ ৩০.৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা সম্ভব। বাজেটে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৯.৬ শতাংশ। বলা হচ্ছে, রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে ঘাটতি পূরণ করা হবে। ব্যয় ঠিক করে আয়ের চিন্তাধারা থেকে এনবিআরের ওপর রাজস্ব আদায়ের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়। যা আসলে অর্জন করা সম্ভব হয় না।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) জানায়, প্রস্তাবিত বাজেট দুর্বল এবং এটি বাস্তবায়নে সামনে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২০ শতাংশের কথা বলা হয়েছে। এখানে বলা হচ্ছে- ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির দেখানো হয়েছে ৬ দশমিক ১০ শতাংশ। এটা আমরা বলছি- অর্থনীতির অন্যান্য যেসব সূচক দেখা যাচ্ছে, সেই সূচকের প্রেক্ষিতে এটা একটু বেশি। এটা বাস্তবায়নের সম্ভাবনা খুব কম। সেটা যেহেতু আরও কম হবে, সেই লো বেঞ্চমার্ক থেকে এই যে ৭ শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি হবে, এটা আসলে বাস্তবোচিত না এবং পূরণ হবে না।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, এর প্রেক্ষিতে সামষ্টিক যে কাঠামো অর্থাৎ এখানে রাজস্ব আয়, ব্যয় এবং বিনিয়োগ ইত্যাদির যে কাঠামো দেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবসম্মত হয়নি বলে আমরা মনে করছি। রাজস্ব কাঠামোতে বড় ধরনের তেমন পরিবর্তন নেই। প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্র ৩০ শতাংশ বাড়াতে হবে। এটাও অনেকটা বেশি। করোনা মোকাবিলা এবং করোনা থেকে ফিরে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করার জন্য যে বাজেট প্রয়োজন ছিল সেটা আমরা লক্ষ্য করিনি। সামগ্রিকভাবে আমাদের কাছে মনে হয়েছে- করোনাকালীন এই বাজেট দুর্বল অনুমিত এবং বাস্তবায়নের সীমাবদ্ধতা আমাদেরকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলবে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, আয়করের সীমা ওপরের দিকে বাড়ানো হয়নি। একইভাবে নিচের দিকের সীমা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। এর ফলে কর ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। নিচের দিকে আয়করের সীমা আর একটু বাড়ালে ভোগ ব্যয় বাড়তো। তা বিনিয়োগে সহায়তা করতে পারতো। অর্থাৎ পুনরুদ্ধারে সহায়তা করতে পারতো। সরকারি ব্যয়ের বর্ধিত যে বরাদ্দ, এখানে দেখা যাচ্ছে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জনপ্রশাসনে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পাবলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও একটা বর্ধিত বরাদ্দ দেখা যাচ্ছে। খাতওয়ারি বিষয়ের মধ্যে সবার আগে আসে স্বাস্থ্যখাত। স্বাস্থ্যখাতের মূল বিষয় এখন টিকাদান। করোনা কতদিন থাকবে কেউ জানে না। করোনা থেকে মুক্তি না পেলে অর্থনীতিতে চাঞ্চল্য ফিরে আসবে না। সেজন্য টিকাদান কর্মসূচি সবার জন্য, যারা যোগ্য সবাইকে টিকা দিতে হবে।
ফাহমিদা আরও বলেন, টিকাদানের জন্য বাজেটে ১০ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে। এটা পর্যাপ্ত নয়। বাজেটে স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দ গত বছরের মতোই রাখা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দ জিডিপির দশমকি ৮৩ শতাংশ ছিল। এ বছরেও দশমিক ৮৩ শতাংশ রয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে আমরা দেখছি সেখানে সামান্য কিছু ভাতা ও বরাদ্দ বেড়েছে। কিন্তু সেখানে আগের মতোই সরকারি কর্মচারীদের পেনশন রয়েছে। এখানে পেনশন যতটা বেড়েছে, সামাজিক নিরাপত্তার আসল যে অংশ সেখানে নিট ততোটা বাড়েনি। সুতরাং এখানে বরাদ্দ আরও বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, বাজেট অর্থায়নের ক্ষেত্রে কয়েকটা কাঠামোগত পরিবর্তন দেখানো হয়েছে। বিদেশি ঋণের কথা বলা হয়েছে। এটা ভালো হয়েছে। রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে যেসব নীতিমালা করা হয়েছে, সেখানে ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে নয় প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করে করা হয়েছে। এটা ইতিবাচক। একইসঙ্গে এসএমইকে স্বল্পসুদে ঋণ দেওয়া হবে, এটাকে আমরা সমর্থন করছি।