রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২৫ অপরাহ্ন

‘মানুষ মরলে তিন লাখ, বাঁচলে এক লাখ’

‘মানুষ মরলে তিন লাখ, বাঁচলে এক লাখ’

স্বদেশ ডেস্ক:

গারো পাহাড়ের প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকায় বছরের পর বছর ধরে চলছে বন্যহাতির তাণ্ডব। মারা যাচ্ছে মানুষ। নষ্ট হচ্ছে বিপুল পরিমাণ জমির ফসল। হাতির দল মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিচ্ছে বসতভিটা।

প্রায় প্রতি বছরই ধান পাকার মৌসুমে ধান এবং কাঁঠালের মৌসুমে কাঁঠাল খেতে হাতির পাল নেমে আসে লোকালয়ে। মানুষও  প্রতিরোধ করতে মরিয়া হয়ে উঠে। শুরু হয় হাতি মানুষের লড়াই। অসম এ লড়াইয়ে এ পর্যন্ত প্রাণহানি ঘটেছে অর্ধশতাধিক মানুষের, পঙ্গু হয়েছেন শতাধিক।

বন্যহাতির আক্রমণে কেউ মারা গেলে তিন লাখ টাকা, আহত হলে এক লাখ টাকা ও ফসলের ক্ষতি বুঝে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা অনুদানের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। স্থাপন করা হয়েছে সৌরবিদ্যুৎচালিত তারের বেষ্টনী (ফেন্সিং), হাতির জন্য খাদ্যের বাগান তৈরিসহ হাতি ও মানুষের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু বন্যহাতির বেপরোয়া আক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়নি।

এলাকাবাসী বলছেন, শেরপুরের নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে গারো পাহাড়ে হাতির আবাসস্থল মানুষ দখল করে নিয়েছে। বাড়িঘর নির্মাণ, গাছপালা নিধন ও পাহাড় কেটে বন্ধ করে দিয়েছে হাতির অবাধ বিচরণের ক্ষেত্র। এক সময় গারো পাহাড়ের চারপাশ ঝোপ-ঝাড়, ঘন-জঙ্গল সমৃদ্ধ ছিল।

অগ্রহায়ণ মাসে পাহাড়ের সমতল ভূমিতে আবাদ করা আমন ধান পাকে। এ সময় পাহাড়ি ঝর্ণা, নদীর পাড় বেয়ে পাকা ফসলের মাঠে নেমে আসতো হাতি, বন্য শূকর, ভালুক। আসত বাঘও। আশির দশকের পর থেকে নির্বিচারে পাহাড় কেটে পাথর উত্তোলন এবং বৃক্ষ নিধন করার ফলে গারো পাহাড়ের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। হারিয়ে যায় অনেক বন্যপ্রাণী। তবে বন্যহাতির অত্যাচার থেকেই যায়।

বন বিভাগের পক্ষ থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ঝিনাইগাতী উপজেলার তাওয়াকুচি থেকে ছোট গজনী, হালচাটি এলাকা পর্যন্ত স্থাপন করা হয় ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ফেন্সিং। তাওয়াকুচি ও কর্ণঝোরা এলাকার ৫০ হেক্টর জমিতে তৈরি করা হয় হাতি খাদ্যের বাগান। রাংটিয়া গোপালপুর বিটে রোপণ করা হয় কাঁটাযুক্ত গাছ। এসবের কিছুটা সুফল মিললেও মানুষের অসচেতনতার কারণে ও সংস্কারের অভাবে এসব এখন অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

বন বিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জের রেঞ্জার ইলিছুর রহমান জানান, দিনের বেলায় সোলার ফেন্সিং বন্ধ থাকার কারণে এলাকাবাসী ফেন্সিং ঢিলা করে পাহাড়ে গরু চড়াতে নিয়ে যায় এবং নিজেরা যাতায়াত করে। নিয়মিত সংস্কারের অভাবে এ সোলার ফেন্সিং অকার্যকর হয়ে পড়েছে। হাতির জন্য সৃষ্ট খাদ্যের বাগান এখনো আছে। হাতিরা এখানে এসেও খাবার খায়, তবে তা অপর্যাপ্ত। তবে ধান কাঁঠালের  প্রতি হাতিদের বিশেষ দুর্বলতা। তাছাড়া হাতি কখনও এক জায়গায় থাকতে পছন্দ করে না। তিনি হাতি ও মানুষের সহাবস্থান তৈরির প্রতি জোর দেন।

শেরপুর বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুমন সরকার বলেন, একটা হাতির প্রতিদিন গড়ে ২০০ কেজি খাবার দরকার। পাহাড়ের লতাগুল্ম, কলাগাছ হাতির প্রধান খাদ্য। বর্তমানে পাহাড়ে এসব খাদ্যের অভাব। তাই খাদ্যের সন্ধানেই হাতির পাল লোকালয়ে নেমে আসে, তাণ্ডব চালায়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877