রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৮ অপরাহ্ন

উপকূলে ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ১৫ লাখ মানুষ

উপকূলে ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ১৫ লাখ মানুষ

স্বদেশ ডেস্ক:

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে দেশের ১৬ জেলার ৮২ উপজেলা এবং ১৩ পৌরসভায় ঝড়ো হাওয়া, ভারী বর্ষণ ও বন্যা হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অন্তত ১৪ লাখ ৯৯ হাজার ১১ জন। বিধ্বস্ত হয়েছে ২৫ হাজার ৭৩৩ ঘরবাড়ি এবং মারা গেছে ৯ জন। এ ছাড়া নোয়াখালীর হাতিয়ায় একজন নিখোঁজ রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সাতক্ষীরা জেলায়।

বিশেষ করে সাতক্ষীরা সদর, আশাশুনি, দেবহাটা, কালীগঞ্জ, শ্যামনগর ও তালায় ৯৪ হাজার ৮৫০ জন সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ জেলায় লুঙ্গি, শাড়ি, স্যালোয়ার-কামিজ জরুরি ত্রাণ হিসেবে চেয়েছে জেলা প্রশাসন। এ ছাড়া আশাশুনি, দেবহাটা, কালীগঞ্জ, শ্যামনগর উপজেলার পৌনে ৬ কিলোমিটার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ প্রবল জোয়ারে ভেঙে গেছে। এই বেড়িবাঁধ জরুরি ভিত্তিতে মেরামত প্রয়োজন বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের প্রাথমিক হিসাবে উঠে এসেছে। এ ছাড়া ৬ হাজার ৭৩৮ হেক্টর মৎস্য ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ঘেরের মালিকদেরও জরুরি ভিত্তিতে আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে প্রাথমিক তথ্য নিয়ে এমন হিসাব প্রকাশ করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। তবে চূড়ান্ত হিসাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য সাড়ে ২৮ হাজার বান্ডিল ঢেউটিন ও নগদ সাড়ে ৮ কোটি টাকা পাঠানো হচ্ছে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন, ‘উপকূলীয় অঞ্চলের বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ প্রধানমন্ত্রী নিজেই মনিটরিং করছেন। তিনি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। এ ছাড়া মেগা প্রকল্পগুলো দ্রুত অনুমোদনেও তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। যার মধ্যে খুলনা জেলার কয়রার ১৪/১ নং পোল্ডারে উত্তর ও দক্ষিণ বেদকাশির বাঁধ নির্মাণে ১ হাজার ১৭৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা এবং সাতক্ষীরা জেলার গাবুরায় ১৫ নং পোল্ডারে বাঁধ নির্মাণে ১ হাজার ২৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকার দুটি প্রকল্প চলতি সপ্তাহেই একনেকের বৈঠকে পাস হবে বলে আশা করা হচ্ছে।’

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ক্ষতিগ্রস্ত এসব এলাকায় ইয়াসপরবর্তী নানা সংকট তৈরি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে জিআর টাকা, ওষুধ, শুকনো খাবার, ঢেউটিন, শিশুখাদ্য, গোখাদ্য, জিআর চাল, লাইফ জ্যাকেট, হ্যাজাক ও টর্চলাইট, শাড়ি, লুঙ্গি জরুরি ভিত্তিতে বিতরণ করতে হবে। দ্রুত ত্রাণ বিতরণ করতে না পারলে ক্ষতিগ্রস্ত ১৫ লাখ মানুষ আরও সংকটে পড়বে বলে জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা।

কর্মকর্তারা জানান, বাগেরহাট জেলা সদর উপজেলা, ফকিরহাট, কচুয়া, মোল্লাহাট, মোরেলগঞ্জ, রামপাল, শরণখোলা, চিতলমারী ও মোংলা উপজেলা ইয়াসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব উপজেলায় ২৪ হাজার ৯১৬ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের ৬৯০টি ঘরবাড়ি আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। এই জেলায় শুকনো খাবার ও ঢেউটিন বরাদ্দ চেয়েছে জেলা প্রশাসন। বরগুনা জেলার সদর উপজেলা, আমতলী, তালতলী, পাথরঘাটা, বেতাগী ও বামনা উপজেলার ১৭ হাজার ৩২০ জন মানুষ ইয়াসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের ১ হাজার ৮০০ টি ঘরবাড়ি আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে বলে হিসাব দিয়েছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।

এ জেলায় চিকিৎসা ও পর্যাপ্ত ওষুধ চেয়েছে জেলা প্রশাসন। বরিশালের ১০ উপজেলা ও ৬ পৌরসভার ১ লাখ ২৭ হাজার ১৬২ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব মানুষের প্রায় ১ হাজার ২০০ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৫৭টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হওয়ার খবর মিলেছে। ভোলা জেলার সদর উপজেলা, বোরহানউদ্দিন, দৌলতখান, লালমোহন, তজুমদ্দিন, চরফ্যাশন, মনপুরায় আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। এ ছাড়া আরও ৪ পৌরসভায়ও ইয়াসের প্রভাবে ঝড়োহাওয়া ও বন্যা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ লাখ ৬৯ হাজার ২৬০ জন মানুষ। ৭ হাজার ৭৩০টি ঘরবাড়ি আংশিক ও ৩ হাজার ৫৭৯টি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে।

কক্সবাজার জেলার ৮ উপজেলায় ইয়াসের প্রভাবে ২০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের প্রাথমিক হিসাবে উঠে এসেছে। তবে এ জেলায় বাস্তবে আরও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। ক্ষতির চূড়ান্ত হিসাবে সেসব তথ্য উঠে আসবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। কক্সবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলাগুলো হলো- কক্সবাজার সদর, রামু, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, উখিয়া ও টেকনাফ। এসব উপজেলায় ২ হাজার ৪৭০টি ঘরবাড়ি আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় এই ৮ উপজেলার ১১ হাজার ৬০০ জন মানুষ সাময়িকভাবে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় ঝড়ো হাওয়ায় ২০০ বাড়িঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। ঝালকাঠি সদর, নলছিটি, রাজাপুর, কাঠালিয়া ও ২টি পৌরসভার ১ লাখ ৪৯ হাজার মানুষ দুর্বিপাকের শিকার হয়েছেন। ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে ৫০টি। এই জেলায় লাইফ জ্যাকেট, হ্যাজাক ও টর্চলাইটের চাহিদা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

খুলনার ৪ উপজেলায় ২ হাজার ২৪০টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২৪০টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। দুর্যোগের শিকার হয়েছেন সাড়ে ৬ হাজার মানুষ। জেলা প্রশাসন থেকে জরুরি ভিত্তিতে জিআর টাকা ১০ লাখ, জিআর চাল ২০০ মেট্রিক টন, ১০ হাজার পিস শাড়ি, ১০ হাজার পিস লুঙ্গি ২০০ বান্ডিল ঢেউটিন এবং গৃহ নির্মাণ ও সংস্কার বাবদ ৬ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। লক্ষ্মীপুর জেলা সদর, রায়পুর, রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় ইয়াসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ২২ হাজার মানুষ।

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ২ লাখ মানুষ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ উপজেলায় প্রায় ১০০টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। পটুয়াখালীর ৮ উপজেলার ৫ লাখ ৫৯ হাজার ৩৬৩ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ জেলায় ৪ হাজার ২০৯টি বাড়িঘর আংশিক ও ৪৮৪টি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। পিরোজপুরের সদর, মঠবাড়িয়া, ইন্দুরকানি, নেছারাবাদ, নাজিরপুর, কাউখালী ও ভান্ডারিয়ায় ১ লাখ ৮ হাজার মানুষ দুর্বিপাকে পড়েছেন। জরুরি ভিত্তিতে এসব মানুষের জন্য শুকনো খাবার চেয়েছে জেলা প্রশাসন। এ ছাড়া ঝিনাইদহ সদরে ৯৪টি বাড়িঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে।

ত্রাণ বিতরণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্তি সচিব (দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি-২, ত্রাণ) মো. মোয়াজ্জেম হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, এখনো ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত হিসাব আসেনি। জেলা-উপজেলা প্রশাসন এ হিসাব পাঠালে বলা যাবে। তবে দুর্যোগকবলিতসহ ৬৪ জেলায় বিতরণের জন্য আমরা সাড়ে ২৮ হাজার বান্ডিল ঢেউটিন পাঠাচ্ছি। এ ছাড়া গৃহনির্মাণ খরচ বাবদ সাড়ে ৮ কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারপ্রতি ২ বান্ডিল ঢেউটিন ও নগদ ৬ হাজার করে টাকা দেওয়া হবে। ক্ষয়ক্ষতির পুরো হিসাব পেলে প্রয়োজনীয় ত্রাণ বিতরণের উদ্যোগ নেবে মন্ত্রণালয়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877