স্বদেশ ডেস্ক:
সিলেটে শনিবার দফায় দফায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এতে হেলে পড়েছে একটি ভবন। এ নিয়ে ওই এলাকায় জন্ম দিয়েছে নানা আলোচনার। ভূমিকম্পের কারণে ভবনটি হেলে পড়েছে বলে দাবি করলেও জোরালো কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না এর স্বপক্ষে।
শনিবার সকাল থেকে সিলেটে অন্তত পাঁচবার মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এই ভূমিকম্পের উৎস ছিল সিলেটেরই একটি এলাকা জৈন্তা। বাংলাদেশের একটি অঞ্চল থেকে ভূমিকম্প উৎপত্তি খবর দেশের বহু মানুষকে উৎসুক করে তোলে। সিলেটে এ নিয়ে এক ধরণের আতঙ্কের পরিবেশও তৈরি হয়।
এরই মধ্যে দ্বিতীয় দিনের মতো রোববার সকালেও এক দফা ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে সিলেটে।
ঢাকার আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, ভোর ৪টা ৩৫ মিনিটে সিলেট অঞ্চলে হওয়া এই ভূমিকম্পটিও ছিল মৃদু। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ২ দশমিক ৮।
তবে পনিটুলা এলাকায় আহাদ টাওয়ার নামে ছয় তলা এই ভবনটির এদিকে ভবনটির মালিকের একজন ঘনিষ্ট আত্মীয় গণমাধ্যমকে বলেছেন, ভবনটি আগে থেকেই কিছুটা হেলে পড়া ছিল।
আশিকুর রহমান নামের এই ব্যক্তি ভবন মালিকের জামাতা। তিনি বলেন, ‘শনিবার ভূমিকম্প হওয়ার পর স্থানীয় এক বাসিন্দা ভবনটির একটি ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দেয়। এর পর স্থানীয় একটি সংবাদ মাধ্যম সেটি নিয়ে খবর প্রকাশ করার পর তা আলোচনায় আসে।
সবার মধ্যে ধারণা তৈরি হয়, ভূমিকম্পের কারণে ভবনটি হেলে পড়েছে।
এ নিয়ে আলোচনা তৈরি হলে সিলেট সিটি করপোরেশনের একটি প্রতিনিধিদল গিয়ে ভবনটি পরিদর্শন করে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলি নূর আজিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, তাদের একটি তদন্ত দল মেপে দেখেছে যে ভবনটি ইঞ্চিখানেক হেলে রয়েছে। তবে এটি শনিবারই হেলে পড়েছে নাকি আগে থেকেই হেলানো ছিল সেটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
তবে আজিজুর রহমান বলছেন, ভূমিকম্পের কারণে ভবনটি হেলে পড়ে থাকলে ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দেয়ার কথা। কিন্তু সেরকম কোনো ফাটল তারা দেখতে পাননি।
আপাতত তারা ধারণা করছেন, ভবনটি নির্মাণ করার সময় হয়তো রাজমিস্ত্রিদের ত্রুটির কারণে সামান্য হেলে গিয়ে থাকতে পারে। তবে নির্মাণের সময় ভবন এমন হেলে পড়লে সেটি গ্রহণযোগ্য এবং এতে কোনো ঝুঁকি নেই বলেও উল্লেখ করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের এই প্রধান প্রকৌশলি। তবে পুরো বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য তারা আরো তদন্ত চালাবেন বলে জানান।
নজিরবিহীন ভূমিকম্প
শনিবার সারাদিন অন্তত পাঁচবার ভূমিকম্প অনুভূত হয় সিলেটে। দফায় দফায় এমন কম্পনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয়দের মধ্যে।
আবহাওয়াবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত বড় কোনো ভূমিকম্পের আগে বা পরে এমন দফায় দফায় মৃদু কম্পন হতে পারে।
ঢাকা আবহাওয়া অধিদফতরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ মুমিনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, সিলেটে আর এমন কখনো হয়নি, যদিও সিলেট অঞ্চল দীর্ঘ দিন ধরেই ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে। বিশেষ করে তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশে।
মমিনুল ইসলাম বলেন, সিলেটের জৈন্তায় শনিবারের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল। তবে সবগুলোই ছোট ধরণের ভূমিকম্প। কিন্তু ভূমিকম্পের প্রিশক ও আফটারশক থাকে। অনেক সময় বড় ভূমিকম্পের আগে ছোট কম্পন হয়। আবার বড় ভূমিকম্প হলে তারপর ছোট ছোট কম্পন হয়। যেহেতু সিলেট অঞ্চল ভূমিকম্প প্রবণ সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে। তাছাড়া ওই অঞ্চলে বড় ভূমিকম্পের ইতিহাস আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যৌথ গবেষণার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা হয়েছে আর্থ অবজারভেটরি।
আর্থ অবজারভেটরির পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলছেন, সিলেটের জৈন্তা এলাকার ডাউকি ফল্টেই সকালের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল হিসেবে আমাদের কেন্দ্রে আমরা চিহ্নিত করেছি। ডাউকি ফল্ট পূর্ব পশ্চিমে প্রায় তিন শ’ কিলোমিটার বিস্তৃত এবং এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই পলিমাটি দিয়ে ঢাকা।
ভূমিকম্পের প্রবণতা নিয়ে ২০০৩ সাল থেকে গবেষণা করছেন অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার। তার গবেষণা মডেল বলছে ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান এবং বার্মা তিনটি গতিশীল প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান।
ভূতাত্বিক মানচিত্র
তিনি জানান, বাংলাদেশের দুই দিকের ভূ-গঠনে শক্তিশালী ভূমিকম্পের শক্তি জমা হয়েছে। তবে আজকের প্রথম ভূমিকম্পটি ভালোভাবে বোঝা গেলেও পরেরগুলো ছিলো আরো মৃদু কম্পন অর্থাৎ খুবই হালকা ধরণের। কিন্তু মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে দুটি অঞ্চলে যেভাবে শক্তি সঞ্চিত হয়ে আছে বহুকাল ধরে তাতে আট মাত্রার পর্যন্ত ভূমিকম্প হতে পারে যদি একবারে হয়। হলে একবারেও হতে পারে আবার ভেঙ্গে ভেঙ্গে বা দফায় দফায়ও হতে পারে। কিন্তু কোন মাত্রার হবে এটা আগে থেকে অনুধাবন সম্ভব না।
অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার বলেন, বারবার যেভাবে মৃদু কম্পন অনুভূত হয়েছে তাতে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বড় ধরণের কম্পনও অনুভূত হতে পারে। আবার নাও হতে পারে।
সূত্র : বিবিসি