সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ১১:৩৩ পূর্বাহ্ন

শর্ত সাপেক্ষে জামিন পেলেন রোজিনা

শর্ত সাপেক্ষে জামিন পেলেন রোজিনা

স্বদেশ ডেস্ক:

‘অফিসিয়াল সিক্রেটস আইনে’ করা মামলায় দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ রোববার ঢাকা মহানগর হাকিম বাকি বিল্লাহর ভার্চ্যুয়াল আদালত শর্ত সাপেক্ষে তার জামিন মঞ্জুর করেন। একইসঙ্গে তাকে তার পাসপোর্ট জমা দিতেও নির্দেশ দেন আদালত।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর হাকিম বাকী বিল্লাহর ভার্চ্যুয়াল আদালতে দুপুর ১২টা ৫২ মিনিট থেকে পৌনে ২টা পর্যন্ত শুনানির পর বিকেল ৪টায় আজ রোববার আদেশের কথা বলা হয়। সেখানে বলা হয়, এদিন রাষ্ট্রপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন ও জামিন বিষয়ে আদেশ হবে।

ওই দিন রোজিনার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এহসানুল হক সমাজি, আমিনুল গনি টিটু, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, প্রশান্ত কুমার কর্মকার ও আশরাফুল আলম। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষের জামিনের বিরোধিতা করেন হেমায়েত উদ্দিন হিরন।

শুনানিতে আইনজীবী সমাজী বলেন, রোজিনা ইসলামের কাছ থেকে কি ডকুমেন্টস জব্দ করা হয়েছে তার কোনো বর্ণনা নেই এজাহারে। তার কাছ থেকে কোনো ডকুমেন্টস উদ্ধার বা জব্দ করা হয় নাই। এজাহারে বলা হয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস। কিন্তু তার কোনো বর্ণনা দেওয়া নাই। তাই অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট অনুযায়ী ১৯২৩ সালের ৩ ধারা এ ঘটনার সঙ্গে যায় না। এটা একটি জামিনযোগ্য মামলা। তিনি একজন নারী, অসুস্থ মহিলা। তাই তাকে জামিন দেওয়া হোক। তিনি জামিনের কোনো অপব্যবহার করবেন না। তার বিরুদ্ধে এই মামলাটি সাজানো, মিথ্যা এবং বানোয়াট। বিগত ৫০ বছরের মধ্যে কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এ ধরনের মামলা হয় নাই।

আইনজীবী আমিনুল গনি টিটো বলেন, রোজিনা ইসলামকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লেখা-লেখি ও ভ্যাকসিনের বিষয়ে জাতীয়ভাবে তুলে ধরার কারণে তাকে শত্রু মনে করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীসহ সকল কর্মকর্তাগণ। তাকে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি ঘটনার সাথে জড়িত না। তাই যেকোনো শর্তে রোজিনা ইসলামের জামিন মঞ্জুর করা হোক।

ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া বলেন, রোজিনা ইসলামের কাছ থেকে কি ডকুমেন্টস উদ্ধার করা হয়েছে সে বিষয়ে যাদের কোনো অভিজ্ঞতাই নাই। যাই হোক তিনি অসুস্থ, তাই বিশেষভাবে অনুরোধ করছি তার জামিন বিবেচনা করার জন্য।

রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল, সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান হিরণ, ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পাঠানো আইনজীবী আসাদুজ্জামান জামিনের বিরোধিতা করেন।

তাদের মধ্যে হেমায়েত উদ্দিন খান হিরণ বলেন, রোজিনা ইসলাম মহিলা বিবেচনায় আসামি জামিন পেতে পারেন না। ঘষেটি বেগমও মহিলা ছিলেন। পলাশীর প্রান্তরে দেশপ্রেমিক নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের প্রধান কারণ ছিলেন ঘষেটি বেগমের চরিত্রটি। ঘষেটি বেগম, মীর জাফরের বিশ্বাস ঘাতকতার কারণেই সেদিন পলাশীর যুদ্ধে সিরাজউদ্দৌলাকে পরাজয় বরণ করতে হয়। আজকের এই অভিযুক্ত মহিলা সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম ঘষেটি বেগমের মত রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ নথি চুরি করে সরকারকে বিব্রত করতে, বেকায়দায় ফেলতে ঘষেটি বেগমের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।

এ আসামি আটক হওয়ার পর মুক্ত হওয়ার জন্য মুচলেকা দিতে চেয়েছিলেন। অপরাধও স্বীকার করেছেন। এমন একটি ভিডিও আমরা দেখেছি। পরবর্তীতে আমরা ভিডিওটি আদালতে উপস্থাপন করবো। মামলাটি জামিন অযোগ্য ধারা। আসামির স্বীকারোক্তিও আছে। এ অবস্থায় জামিনের বিষয়ে আদেশটি আগামী সপ্তাহে দেওয়ার প্রার্থনা করছি।

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আদেশ অপেক্ষমান রাখেন এবং বিকাল ৪টায় জানানো হয় আদেশ আজ রোববার দেওয়া হবে। ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন ও জামিন বিষয়ে আদেশ হবে।

রাষ্ট্রপক্ষে এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপনের বিষয়ে আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বলেন, ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষ কিছু ডকুমেন্ট দাখিলের কথা বলছিলেন। যদি তারা দাখিল করেন, তাহলে এর জবাব দেওয়ার জন্য তারা প্রস্তুত আছেন।

এদিকে শুধু জামিন আবেদনের শুনানিতেই নয়। শুনানি শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সেখানেও রোজিনা ইসলামকে ঘষেটি বেগমের সাথে তুলনা করেন হেমায়েত উদ্দিন খান হিরণ। এ সময় সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকরা এর তীব্র প্রতিবাদ করেন। তার এ ধরণের বক্তব্য এক্সপাঞ্চ করতে বলেন সাংবাদিকরা। তবে তিনি তা করেননি।

এর আগে গত ১৮ মে রোজিনা ইসলামের পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। একইসঙ্গে জামিন আবেদনের বিষয়ে অধিকতর শুনানির জন্য ২০ মে দিন ধার্য করে আদালত।

উল্লেখ্য, গত ১৭ মে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রোজিনা ইসলাম পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। স্বাস্থ্য সচিবের পিএস সাইফুল ইসলামের রুমে ফাইল থেকে নথি সরানোর অভিযোগে তাকে ওই রুমে আটকে রাখা হয় এবং তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রোজিনা ইসলামকে আটকে রাখার খবর পেয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। তারা দীর্ঘ সময় ধরে রোজিনাকে আটকে রাখার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কিছুই জানাননি। পরে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সাংবাদিকরা সচিবালয়ের বাইরে জড়ো হয়ে রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও আটকে রাখার প্রতিবাদ করেন।

রাত সাড়ে ৮টার দিকে রোজিনা ইসলামকে পুলিশ স্বাস্থ্য সচিবের পিএসের রুম থেকে থেকে বের করে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। এরপর মধ্য রাতে তার বিরুদ্ধে চুরি ও অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা করা হয়। আদালত শুনানি শেষে রাষ্ট্রপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন ও জামিন বিষয়ে আদেশের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন।

গত মঙ্গলবার রোজিনা ইসলামকে আদালতে হাজির করে পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। অন্যদিকে তার আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার তার জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক তার রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে তার জামিন শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেন। এরপর রোজিনার আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার তার চিকিৎসার জন্য আবেদন করেন। আদালত কারাবিধি অনুযায়ী তার চিকিৎসার জন্য নির্দেশ দেন। এরপর প্রিজনভ্যানে তাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে সোমবার রাতে শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলাটি করেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব ডা. মো. শিব্বির আহমেদ উসমানী। সচিবালয়ে দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখার পর সোমবার রাত ৯টার দিকে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে শাহবাগ থানায় আনা হয়। তার বিরুদ্ধে অনুমতি ছাড়া মোবাইল ফোনে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ নথির ছবি তোলা এবং আরও কিছু নথি লুকিয়ে রাখার অভিযোগ এনেছে মন্ত্রণালয়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877