বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১৩ অপরাহ্ন

সঞ্চয়পত্র বিক্রি ৮৬ হাজার কোটি টাকা

সঞ্চয়পত্র বিক্রি ৮৬ হাজার কোটি টাকা

স্বদেশ ডেস্ক:

করোনা মহামারির মাঝে মানুষের আয় কমলেও বেড়েছে সঞ্চয় প্রবণতা। আর গ্রাহকরা সঞ্চয়ের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য স্থান হিসাবে বিবেচনা করে থাকেন সঞ্চয়পত্র। এতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে সরকারের ঋণের অঙ্ক আরও বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ৮৫ হাজার ৯৯০ কোটি ১৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। একক মাস হিসাবে শুধু মার্চেই বিক্রি হয়েছে ১০ হাজার ৭৬২ কোটি ৫৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল ৫২ হাজার ৯৬৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা শোধ করা হয়েছে। সে হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ২০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে ২০ হাজার কোটি টাকা। তবে প্রথম নয় মাসেই (জুলাই-মার্চ) সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৮৫ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল ৬৭ হাজার ১২৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। সঞ্চয়পত্র যত বিক্রি হয়, সরকারের ঋণও এই খাত থেকে তত বাড়ে। কারণ বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর প্রতি মাসে যে অর্থ অবশিষ্ট থাকে তাকে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি বলা হয়। অর্থনীতির পরিভাষায় নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রিকে সরকারের ঋণ হিসাবে ধরা হয়। ধারণা করা হয়েছিল, করোনা মহামারিতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমবে। সেই সঙ্গে এই খাত থেকে সরকারের ঋণের বোঝাও কমে আসবে। কিন্তু হয়েছে উলটা। ব্যাংকগুলোয় আমানতের বিপরীতে সুদের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এতে দীর্ঘমেয়াদে ব্যাংকে টাকা রাখার বদলে সঞ্চয়পত্রে ঝুঁকছে মানুষ। এসব বিষয় আমলে নিয়ে আগামী অর্থবছরে এ খাত থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়াচ্ছে সরকার।

জানা গেছে, বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার সর্বোচ্চ রয়েছে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। এর মধ্যে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ, পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ ও পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোয় বিনিয়োগ করা অর্থের ওপর একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর মুনাফা দেয় সরকার। মেয়াদপূর্তির পর বিনিয়োগ করা অর্থও ফেরত দেওয়া হয়। বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে সর্বশেষ ২০১৫ সালের মে মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদহার গড়ে ২ শতাংশ করে কমানো হয়েছিল, যা ২০১৫ সালের ২৩ মের পর কার্যকর হয়। এর আগে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ছিল ১৩ শতাংশেরও বেশি।

২০২০ সালের ৫ ডিসেম্বর জাতীয় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের সীমা কমিয়ে দেয় সরকার। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, একক নামে ৫০ লাখ এবং যৌথ নামে ১ কোটি টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কেনা যায় না।

এদিকে এখন থেকে তপশিলি ব্যাংকের শাখা বা ডাকঘর থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে না। শুধু জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের আওতাধীন সঞ্চয় ব্যুরো থেকে এই সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে। ১৮ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) থেকে এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করে সঙ্গে সঙ্গে সেই আদেশ কার্যকর করা হয়েছে। অর্থাৎ এখন থেকে কোনো বিনিয়োগকারী যদি পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র কিনতে চান, তাহলে শুধু সঞ্চয় অধিদপ্তরের শাখা অফিসগুলোয় যেতে হবে। বর্তমানে সারা দেশে ৭০টির বেশি এমন সঞ্চয় ব্যুরো আছে। ১৯৭৭ সালে এই সঞ্চয়পত্র প্রবর্তন করে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের বাকি তিনটি সঞ্চয়পত্র পরিবার সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্র নিয়ম অনুযায়ী আগের মতো ব্যাংক ও ডাকঘর থেকে কেনা যাবে। একজন বিনিয়োগকারী একক নামে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা এবং যুগ্ম নামে সর্বোচ্চ ৬০ লাখ টাকার পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন। সব শ্রেণি ও পেশার বাংলাদেশি নাগরিক এই সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন। নাবালকের পক্ষেও এই সঞ্চয়পত্র কেনা যায়। অন্যদিকে কোনো প্রতিষ্ঠান যদি এই সঞ্চয়পত্র কেনে, তাহলে কত টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে, এর কোনো সীমা নেই। প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃত ভবিষ্যৎ তহবিলের অনুকূলেও এই সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে। এছাড়া মৎস্য খামার, হাঁস-মুরগির খামার, পোলট্রি ফিড উৎপাদন, বীজ উৎপাদন, স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত বীজ বিপণন, গবাদি পশুর খামার, দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্যের খামার, ব্যাঙ উৎপাদন খামার, উদ্যান খামার প্রকল্প, রেশম গুটিপোকা পালনের খামার, ছত্রাক উৎপাদন এবং ফল ও লতাপাতার চাষ থেকে উপার্জিত আয় দিয়ে সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে। এই সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষে মুনাফা নিতে চাইলে মুনাফার হার দাঁড়াবে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। তবে মেয়াদপূর্তির আগে নগদায়ন করলে প্রথম বছর শেষে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ, দ্বিতীয় বছর শেষে ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ, তৃতীয় বছর শেষে ১০ দশমিক ২৫ শতাংশ, চতুর্থ বছর শেষে ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে মুনাফা পাওয়া যাবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877