স্বদেশ ডেস্ক:
ফিলিস্তিনের গাজায় ১০ দিন ধরে ইসরাইল বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে ইসরাইল বলছে, তারা সেখানে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন হামাসের বিভিন্ন নেতাদের বাড়িঘর লক্ষ্য করে হামলা অব্যাহত রেখেছে।
ইসরাইল বলেছে, তারা হামাসের সামরিক প্রধান মোহাম্মেদ দেইফকে ‘কয়েকবার’ হত্যার চেষ্টা করেছে। গত রাতে একটি অ্যাপার্টমেন্টের ওপর ইসরাইলি বিমান হামলায় আরো দু’জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গাজা থেকে বিবিসির সংবাদদাতা রুশদি আবুলাউফ বলেছেন, ইসরাইল থেকে যুদ্ধবিমান দিয়ে ৭০টিরও বেশি হামলা চালানো হয়েছে।
৫০টি হামলা হয়েছে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস শহরে। এ সময় হামাসের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও নিরাপত্তা স্থাপনাতেও আক্রমণ করা হয়।
বুধবার সকালেও বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। তাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ বলছে, তারা হামাসের ব্যবহৃত একটি ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক লক্ষ্য করে আক্রমণ চালিয়েছে।
আইডিএফের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হিদাই জিলবারমান বলেছেন, ‘পুরো অভিযানের সময় তারা মোহাম্মেদ দেইফকে হত্যার জন্য কয়েকবার চেষ্টা চালিয়েছেন।’
হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জেদিন আল-কাস্সাম ব্রিগেডের প্রধান মোহাম্মেদ দেইফ। এর আগেও তাকে কয়েকবার হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছে। ধারণা করা হয়, তিনি নেপথ্যে থেকেই সবকিছু পরিচালনা করেন এবং তার অবস্থান সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য জানা যায় না।
এদিকে ইসরাইলকে লক্ষ্য করে গাজা থেকে রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে এবং হামাস বলছে, তারা দক্ষিণের একটি বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। হামাস বলছে, এ ঘাঁটি লক্ষ্য করে এটি তাদের দ্বিতীয় হামলা। কিন্তু ইসরাইল এ খবর অস্বীকার করেছে।
এ সহিংসতার মধ্যেই যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে তবে এখনো পর্যন্ত তাতে খুব সামান্যই অগ্রগতি হয়েছে।
সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে ফ্রান্স, মিসর ও জর্ডান। এ দেশগুলো একসাথে হয়ে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব পেশ করেছে। তবে এটি শুধুই খসড়া।
ফ্রান্স বলছে, মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দুল ফাত্তাহ আল-সিসি ও জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহর মধ্যে এক ভিডিও সম্মেলনে প্রস্তাবের এ খসড়াটি তৈরি করা হয়েছে।
যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে একটি যৌথ বিবৃতি দেয়ার উদ্যোগে বাধা দিচ্ছে ইসরাইলের দীর্ঘদিনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। তারা বলছে, এ বিবৃতি উত্তেজনা প্রশমনে সহায়তা করবে না।
ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বিভাগ থেকে বিবিসিকে বলা হয়েছে, তাদের সামরিক অভিযান ‘পুরোদমে চলবে এবং যুদ্ধবিরতির বিষয়টি আলোচনায় নেই।’
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তুর্কী প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান বিরুদ্ধে ইহুদিবিদ্বেষী বক্তব্য দেয়ার যে অভিযোগ তোলা হয়েছে বুধবার তা প্রত্যাখ্যান করেছে তুরস্ক।
এরদোগান এর আগে বলেছেন, ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের ওপর ‘সন্ত্রাস’ চালাচ্ছে এবং ‘এটাই তাদের স্বভাব’।
অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্তেজনা চলার পর আল আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় বহু ফিলিস্তিনিকে আহত করে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। এ এলাকাটি মুসলিম ও ইহুদিদের কাছে পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত।
সেখান থেকে ইসরাইলি সৈন্যদের সরিয়ে নেয়ার জন্য সতর্ক করে দিয়ে গাজা নিয়ন্ত্রণকারী হামাস রকেট ছুঁড়তে শুরু করে। এর জবাবে গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরাইল।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, এ ১০ দিনের যুদ্ধে কমপক্ষে ২১৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে প্রায় ১০০ জন নারী ও শিশু। ইসরাইল বলছে, তারা গাজায় দেড় শ’ জন ‘উগ্রবাদীকে’ হত্যা করেছে।
এ বিষয়ে হামাসের পক্ষ থেকে কোনো তথ্য দেয়া হয়নি।
ইসরাইলি চিকিৎসা বিষয়ক কর্তৃপক্ষ বলেছে, এ ১০ দিনের যুদ্ধে দু’জন শিশুসহ ১২ জন ইসরাইলি নিহত হয়েছে।
ইসরাইল বলছে, গাজা থেকে হামাস ৩ হাজার ৭৫০টি রকেট ছুঁড়েছে।
সূত্র : বিবিসি বাংলা