বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০৮:২৩ অপরাহ্ন

বিপর্যয়ে বাগেরহাটের চিংড়িশিল্প

বিপর্যয়ে বাগেরহাটের চিংড়িশিল্প

স্বদেশ ডেস্ক:

দেশের সবচেয়ে বেশি চিংড়ি উৎপাদনের জেলা বাগেরহাট। করোনার প্রভাবে এ জেলার চিংড়িশিল্পে দেখা দিয়েছে বিপর্যয়। একদিকে রপ্তানি বন্ধ থাকায় চাষিরা বঞ্চিত হচ্ছেন ন্যায্যমূল্য থেকে। অন্যদিকে মৌসুমের শুরুতেই চাহিদা অনুযায়ী পোনা পাচ্ছেন না চাষিরা। গত ১৪ এপ্রিল থেকে সারাদেশে লকডাউন শুরু হওয়ায় চিংড়ি পোনা পরিবহন ব্যবস্থা অচল থাকায় এ সংকট দেখা দিয়েছে। আর এ কারণেই গলদা-বাগদা পোনার দাম বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। এ অবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চিংড়িশিল্পের সঙ্গে জড়িত লক্ষাধিক মানুষ।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় চিংড়ি পোনার হাট বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার ফয়লাহাট। এমনিতে প্রতিদিন কোটি টাকার গলদা-বাগদা বেচাকেনা হয় এ হাটে। সরেজমিনে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, এই হাটে এখন আর নেই আগের মতো কর্মব্যস্ততা। প্রাণঘাতী করোনার প্রভাবে পোনা পরিবহনে সংকটের কারণে শূন্য হাঁড়ি নিয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে এই আড়তের শ্রমিকদের।

আড়তদার ও চিংড়ি পোনা গণনাকারী শ্রমিকরা জানান, গত ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া লকডাউনের কারণে অনেকটা বেকার হয়ে পড়েছেন এই হাটের চিংড়ি ব্যবসায়ী ও শ্রমিকসহ ৪ থেকে ৫ হাজার মানুষ। অন্যদিকে মৌসুমের শুরুতে চাহিদা অনুযায়ী পোনা সরবরাহ করতে না পারায় জেলার চিংড়ি চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে দাবি করছেন আড়তদাররা।

ফয়লাহাটের আড়তদার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, চট্টোগ্রাম, ফেনি, নোয়াখালী ও কক্সবাজার থেকে বাগদা ও গলদা পোনা আসে এই হাটে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত এই হাটে প্রায় কোটি টাকার গলদা-বাগদার পোনা বেচাকেনা হয়। তবে করোনার প্রভাবে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে হাটে। আগের মতো চিংড়ি পোনার সরবরাহ নেই। ফলে চাষিদের চাহিদা অনুযায়ী পোনা সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এ কারণে জেলার ৯৫ শতাংশ চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মোট কথা লকডাউনের কারণে এই হাটের ব্যবসায়ী ও শ্রমিকসহ ৪ থেকে ৫ হাজার মানুষ অসহায় দিনযাপন করছেন।

চিংড়ি পোনা গণনাকারী হাকিম শেখ বলেন, ‘পোনা-পাতি আসতিছে না, তালি আমরা কী করে বাঁচবো। বাড়ি ছেলে-মেয়ে আছে, মা আছে। আমাদের তো না খেয়ে মরার পথ।’

বাগেরহাট সদর উপজেলার রাধাভল্লব এলাকার চিংড়ি চাষি আতিয়ার গাজী বলেন, ‘আমরা ঘের রেডি করে রাইছি। মাছ ছারতি পারতিছি না করোনার কারণে। পোনা পাওয়া যাচ্ছে না, কম কম আসে, দাম বেশি। আগে ছিল বাগদা হাজার ৩শ টাকা এহন ৬শ টাকা ডবল দাম। নদীর বাগদা ছিল ৭শ টাকা এহন ১২-১৪শ টাকা। তাও পাওয়া যাচ্ছে না। রেণুু (গলদা) হালকা-পাতলা পাওয়া যাচ্ছে ৩ হাজার ৩২শ টাকা করে হাজার।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম রাসেল বলেন, করোনার প্রভাবে রপ্তানি বন্ধ থাকায় বর্তমানে মাছের দাম অনেকটা কমে গেছে। এর ফলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন জেলার প্রান্তিক চাষিরা। রপ্তানি বন্ধ থাকায় গত এক বছরে বাগেরহাটের চিংড়িশিল্পে ক্ষতির পরিমাণ ১শ ৪০ কোটি টাকা। আর সব মিলিয়ে এই ক্ষতির পরিমাণ হবে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা। এরই মধ্যে বাজারে পোনা সংকটও দেখা দিয়েছে। তিনি জানান, বাগেরহাটে ৭৭ কোটি বাগদা ও ২১ কোটি গলদা পোনার চাহিদা রয়েছে। লকডাউন চালু থাকলে কোনোভাবেই এই পরিমাণ পোনার চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। এমন অবস্থায় চলতে থাকলে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। তবে চাষিদের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে জেলার ২৮ হাজার মৎস্যচাষিকে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সহজ শর্তে চাষিদের জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

বাগেরহাট মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাব মতে, জেলায় চিংড়িচাষি রয়েছেন ৭৯ হাজার ৭৩৬ জন। আর ৭১ হাজার ৮৮৬ হেক্টর জমিতে ৮১ হাজার ৩৫৮টি বাগদা ও গলদা চিংড়ির ঘের রয়েছে। এসব ঘেরে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৭ হাজার ৪৮৭ টন বাগদা ও ১৬ হাজার ৩৩৭ টন গলদা চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877