স্বদেশ ডেস্ক: বরগুনায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার শিকার রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির গ্রেপ্তার দাবি করেছেন তার শ্বশুর। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে বরগুনা প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে সেখানে এ দাবি জানান নিহতের বাবা আবদুল হালিম শরীফ।
সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ বলেন, ‘আজ আমার ছেলে হত্যার বিষয়ে কিছু কথা শেয়ার করার জন্য আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি এবং সাংবাদিক ভাইদের সহযোগিতায় রিফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত এ পর্যন্ত ১৪ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ-ভারাক্রান্ত মনে আমাকে বলতে হচ্ছে, এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে থাকা হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে আছে। কীভাবে তারা বাইরে তা বলার জন্যই আমি আজ এখানে এসেছি।’
‘রিফাত হত্যাকাণ্ডে তার স্ত্রী মিন্নি জড়িত’ উল্লেখ করে শরীফ অভিযোগ করেন, হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি নিহত নয়ন বন্ডে সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল মিন্নির। এ কথা তিনি গোপন করেছিলেন। তার পরিবারও বিষয়টি গোপন রাখে। নয়নকে তালাক না দিয়েই তার ছেলেকে বিয়ে করেন মিন্নি। তাদের মধ্যে যোগাযোগ অব্যাহত ছিল।
নিহত নয়ন বন্ডের মা সাহিদা বেগমও বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, মিন্নি ঘটনার আগের দিনও তার বাসায় গেছেন এবং নয়নের সঙ্গে দেখা করেছেন, বলে জানান শরীফ।
তিনি জানান, মিন্নি প্রতিদিন একাই কলেজে যাতায়াত করতেন। ঘটনার দিনও একা গিয়েছিলেন। পরে ফোন করে তার ছেলেকে সেখানে ডেকে নেয় তিনি। কারণ, হত্যাকারীদের সঙ্গে মিন্নির আগে থেকে যোগাযোগ ছিল। মোটরসাইকেলে কলেজ থেকে মিন্নিকে নিয়ে আসার জন্য রিফাত গেলে হত্যাকারীদের না দেখে আবার কলেজে ঢুকে যায় মিন্নি। পরে হত্যাকারীদের উপস্থিতি দেখে মিন্নি কলেজ থেকে বের হয়। ওই সময় মিন্নিকে নিয়ে আসতে গেলে তার ছেলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে হত্যাকারীরা।
অভিযোগ করে আবদুল হালিম শরীফ বলেন, ‘রিফাত রক্তাক্ত অবস্থায় একাই রিকশায় করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে যান। এরপর যখন গুরুতর অবস্থায় রিফাতকে অ্যাম্বুলেন্সে বরিশাল নেওয়া হয় তখন মিন্নি তার সঙ্গে যাননি।’
ঘটনার পর নতুন করে প্রকাশ পাওয়া ভিডিও ফুটেজের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কলেজ গেট থেকে রিফাতকে ধরে নেওয়ার সময় মিন্নি স্বাভাবিক ছিলেন। মিডিয়ায় প্রকাশিত নতুন ভিডিওতে বিষয়টি পরিষ্কার দেখা যায়। আমার ছেলেকে রিফাত ফরাজী ও অন্যরা যখন মারধর করতে করতে নিয়ে যায় তখন স্বাভাবিকভাবে পেছনে পেছনে হাঁটছিল মিন্নি, যা কোনোভাবেই আমি মেনে নিতে পারিনি। এটি দেখে পরিষ্কার বোঝা যায়, আমার ছেলে হত্যার পেছনে মিন্নির হাত রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায় রিফাতকে কোপানোর সময় মিন্নি খুনিদের জাপটে ধরেছে। কিন্তু খুনিরা কেউ মিন্নির ওপর চড়াও হয়নি এমনকি মিন্নিকে একটা টোকাও দেয়নি। যখন রিফাত আহত এবং রক্তাক্ত অবস্থায় একা একা রিকশাযোগে হাসপাতাল যাচ্ছিল তখন মিন্নি তার ব্যাগ ও স্যান্ডেল গোছানোর কাজে বেশি ব্যস্ত ছিল।’
খুনিদের একজন রাস্তা থেকে ব্যাগ তুলে মিন্নির হাতে দিয়েছে। মিন্নি ওই ব্যাগ নিয়ে স্বাভাবিকভাবে হাঁটছিল। এছাড়া আমার ছেলে রিফাত শরীফকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার সময়ও যায়নি মিন্নি। আসলে সবই ছিল মিন্নির অভিনয়, বলেন রিফাতের বাবা।
এ সময় তিনি প্রশ্ন করে বলেন, এসব নিয়ে একাধিক সংবাদ ও ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে, আপনারা অবগত আছেন। তাহলে কেন এখন পর্যন্ত মিন্নিকে গ্রেপ্তার করছে না পুলিশ। তাকে আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে না কেন পুলিশ? আমার বিশ্বাস মিন্নিকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আমার ছেলে হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে আসবে। এ হত্যার পেছনে মিন্নির হাত আছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নিহত রিফাত শরীফের চাচা আব্দুল আজিজ শরীফ ও ছালাম শরীফ। সংবাদ সম্মেলনের একপর্যায়ে কান্না শুরু করেন নিহত রিফাত শরীফের বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ।
গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের মূল ফটকের সামনের রাস্তায় স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকার সামনে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফকে। বেলা তিনটার দিকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিফাতের মৃত্যু হয়। পরদিন এই ঘটনায় রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বাদী হয়ে বরগুনা থানায় ১২ জনের নামে এবং ৪-৫জনকে অজ্ঞাত আসামি করে একটি মামলা করেন।