শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:১৭ পূর্বাহ্ন

শতকোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সিন্ডিকেট

শতকোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সিন্ডিকেট

স্বদেশ ডেস্ক: হজযাত্রীদের বিমান ভাড়ার টিকিটের একটি বড় অংশ এবার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে টিকিট বিক্রি করছে নির্দিষ্ট কিছু ট্রাভেল এজেন্সি। এর মধ্যে ১১টি ট্রাভেল এজেন্সি কোনো ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বাড়তি দামে হজের টিকিট বিক্রি করে শতকোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। হজের টিকিট বিক্রিতে নজরদারি চালানো একটি সংস্থার সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ থেকে এ বছর ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব যাচ্ছেন। সরকারের আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হজযাত্রীদের যাওয়া-আসা বাবদ বিমান ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা। এসব যাত্রীকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদি এয়ারলাইন্স পরিবহন করবে। বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে এসব টিকিট বিক্রি হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স নির্ধারিত দামে টিকিট বিক্রি করলেও সৌদি এয়ারলাইন্সের বাংলাদেশি অফিস এ ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম করছে। প্রায় ৬শ হজ এজেন্সি এ বছর হজযাত্রী পাঠানোয় কাজ করছে। এর মধ্যে তিন শতাধিক এজেন্সিকে ৬৩ হাজার ৫৯৯টি টিকিট সমান হারে সৌদি এয়ারলাইন্সের দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সৌদি এয়ারলাইন্সের ঢাকা অফিস নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মাত্র ১১টি হজ এজেন্সির হাতে তুলে দিয়েছে ৫৪ হাজার ৯০টি টিকিট।

বাকি প্রায় ৭০টি এজেন্সিকে দেওয়া হয়েছে মাত্র ১০ হাজার টিকিট। ওই ১১টি এজেন্সির মধ্যে সানসাইন এক্সপ্রেস ট্রাভেলসকে ১২ হাজার ৯৭০টি, আল গাজী ট্রাভেলস লিমিটেডকে ১১ হাজার ৮৯০, কাজী এয়ার ইন্টারন্যাশনালকে ৫ হাজার ৮৩০, হাসেম এয়ার ইন্টারন্যাশনালকে ৪ হাজার ৮শ, গোল্ডেন বেঙ্গল ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসকে ৪ হাজার ৩শ, সাঞ্জেরী ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসকে ৩ হাজার ৯শ, আবাবিল ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসকে ৩ হাজার ৩শ, চ্যালেঞ্জার ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেডকে ২ হাজার ৯শ, ডায়নেস্টি ট্রাভেলস লিমিটেডকে ১ হাজার ৯শ, মুনা ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেডকে ১ হাজার ২শ, ভারসেটাইল ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেড ১ হাজার ১০০টি টিকিট বরাদ্দ পেয়েছে। অভিযোগ উঠেছে সৌদি এয়ারলাইন্সের ঢাকা অফিসকে ‘ম্যানেজ’ করে এসব টিকিট হাতিয়ে নিয়েছে ওই ১১টি হজ এজেন্সি।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকিট ইতোমধ্যে বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। সৌদি এয়ারলাইন্সেরও ৮০ শতাংশের বেশির ভাগ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। এক ধরনের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বেশি দামে বাকি টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। এর সুযোগ নিয়ে নির্ধারিত দামের ১ লাখ ২৮ হাজার টাকার পরিবর্তে ১ লাখ ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায় টিকিট কিনতে হচ্ছে হজযাত্রীদের। চড়া মূল্যের টিকিটের জন্য অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আল গাজী ট্রাভেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম এম হাসানের সঙ্গে টিকিট অনিয়মের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয়।

তিনি আমাদের সময়কে জানান, তিনি এ ব্যাপারে পরে কথা বলবেন। তবে পরে তিনি আর যোগাযোগ করেননি। অভিযোগের বিষয়ে সৌদি এয়ারলাইন্সের বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হলেও তারা সাড়া দেননি। হজের টিকিট বিক্রির অনিয়ম রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আসছে র‌্যাব। অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম আমাদের সময়কে বলেন, ‘বেশি দামে টিকিট বিক্রিসহ পবিত্র হজ পালন প্রক্রিয়ার যে কোনো অনিয়ম চোখে পড়লে র‌্যাবের সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে জানানোর অনুরোধ করছি। এ বিষয়ে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম আমাদের সময়কে বলেন, ‘এ বিষয়টি মূলত সিভিল এভিয়েশনের দেখার কথা। কিন্তু এবার সৌদি এয়ারলাইন্স যেটা করেছে সেটা ঠিক হয়নি। আমাদের বক্তব্য হলো আগামী বছর থেকে দুটি এয়ারলাইন্সের বাইরে আরও এয়ারলাইন্স হজযাত্রী পরিবহনে যুক্ত করলে সমস্যা দূর হবে।’

উল্লেখ্য, গত ২৫ জুন বেশি দামে হজযাত্রী পরিবহনের টিকিট বিক্রির অভিযোগে রাজধানীর নয়াপল্টনের ৬টি ট্রাভেল এজেন্সিকে ৬৫ লাখ টাকা জরিমানা করে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর মধ্যে হাসেম এয়ার ইন্টারন্যাশনালকে ১০ লাখ; চ্যালেঞ্জার্স ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসকে ১০ লাখ; গোল্ডেন বেঙ্গলি ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলকে ১০ লাখ; শানসাইন এক্সপ্রেস ট্রাভেলসকে ২০ লাখ; আল গাজী ট্রাভেলসকে ১০ লাখ; ঢাকা শাহজালাল ট্রাভেলসকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877