বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৪:১১ পূর্বাহ্ন

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের সুযোগ নিয়ে পাহাড় কাটছে কেএসআরএম

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের সুযোগ নিয়ে পাহাড় কাটছে কেএসআরএম

স্বদেশ ডেস্ক:

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল বুধবার ছিল সরকারি ছুটি। জাঁকজমকপূর্ণভাবে দিবসটি উদযাপন করছে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। এদিন নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যস্ত ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আর এ সুযোগে পাহাড় কাটার উৎসবে মেতে ওঠে চট্টগ্রামের বিতর্কিত শিল্প গ্রুপ কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেড (কেএসআরএম)।

সীতাকু- উপজেলার বাড়বকু- ইউনিয়নের জঙ্গল কাঠগড় দক্ষিণ মাহমুদাবাদ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে দুটি স্কেভেটর দিয়ে নিয়মিত পাহাড় কাটছিল কেএসআরএম। অন্যান্য দিনের তুলনায় গতকাল বন্ধের দিন কয়েকগুণ বেশি শ্রমিক পাহাড় কাটার কাজে যোগ দেয়। এক মাসের বেশি সময় ধরে পাহাড় কাটার কাজ চলছিল। এতদিন পরিবেশ অধিদপ্তর খবর না পেলেও গতকালের বিষয়টি নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে ছুটে যায় চট্টগ্রাম কার্যালয়ের একটি দল। কিন্তু কেএসআরএম কর্তৃপক্ষ পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ঘটনাস্থলে যেতে বাধা দেন। এ সময় স্থানীয় থানায় পুলিশ ফোর্স চায় পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে নিরাপত্তা কাজে ব্যস্ত থাকায় ফোর্স দিতে অপারগতা জানানো হয় থানার পক্ষ থেকে। ফলে বাধ্য হয়ে ফিরে আসেন সরকারি এ সংস্থার কর্মকর্তারা। তবে আজ বৃহস্পতিবার ফের অভিযান পরিচালনার কথা জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম কার্যালয়ের পরিচালক মুফিদুল আলম।

তিনি আমাদের সময়কে বলেন, বুধবার খবর পেয়ে উপপরিচালক মোহাম্মদ জমিরের নেতৃত্বে একটি টিম সেখানে যায়। কিন্তু কেএসআরএম কর্তৃপক্ষ তাদের কিছু সমস্যার কথা জানিয়ে অন্যদিন আসতে বলেন। বৃহস্পতিবার ফের অভিযান পরিচালনা করা হবে। পাহাড় কাটার প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ ফোর্সের বিষয়ে তিনি বলেন, গতকাল বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আজকে ফোর্স দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।

গতকাল অভিযানে যাওয়া উপপরিচালক মোহাম্মদ জমির আমাদের সময়কে বলেন, বাড়বকু- ইউনিয়নের জঙ্গল কাঠগড় এলাকায় পাহাড় কাটার অভিযোগ পেয়ে পরিদর্শনে যাই। কেএসআরএম কর্তৃপক্ষ সময় চেয়েছে। আমরা আজ যাব। যাওয়ার আগে স্কেভেটর ও অন্যান্য সরঞ্জাম সরিয়ে ফেলতে পারে, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা সবদিক তদন্ত করে দেখব।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন ও স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় অন্তত দীর্ঘদিন ধরে দুটি স্কেভেটর দিয়ে জঙ্গল কাঠগড় মৌজার ৩১২ নম্বর দাগের পাহাড় কেটে সমতল করা হচ্ছে। অব্যাহত পাহাড় কাটার ফলে ইতোমধ্যে বিশাল এ পাহাড়টি সমতল ভূমিতে পরিণত হয়েছে। পাহাড় কাটায় একদিকে বিবর্ণ হচ্ছে সবুজ প্রকৃতি, অন্যদিকে চরম হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে পরিবেশ ও প্রতিবেশ। প্রশাসনের চোখের সামনে প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানটি পাহাড় কেটে সমতল বানিয়ে সেখানে শিল্প কারখানা গড়ে তুলছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কেএসআরএম গ্রুপের পাহাড় কাটার ঘটনা এটিই প্রথম নয়; প্রায় তিন বছর ধরে ওই এলাকায় নানা কৌশলে পাহাড় কাটছে তারা। বাড়বকু-ে পরিবেশ আইন অমান্য করে পাহাড় কাটায় কেএসআরএম গ্রুপকে ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করেছিল পরিবেশ অধিদপ্তর। জরিমানার পর কেএসআরএম কর্তৃপক্ষ পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে পাহাড় কাটবে না বলে অঙ্গিকার করেছিল। কিন্তু অঙ্গীকার ভঙ্গ করে কখনো দিনে আবার কখনো রাতে পাহাড় কেটে এলাকার জীববৈচিত্র্য, প্রাকৃতিক পরিবেশ, মাটির ভূ-প্রকৃতির পরিবর্তনসহ পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতিসাধন করে চলেছে শিল্প গ্রুপটি।

কেএসআরএমের ব্যবস্থাপক (ভূমি) মোহাম্মদ কামাল এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877