স্পোর্টস ডেস্ক: চোখ কচলে বিশ্বাস করতে হয়েছে। কে, কবে এমন হতশ্রী অস্ট্রেলিয়াকে দেখেছে। রুট (৪৯ ) ও মরগ্যান (৪৫ ) অস্ট্রেলিয়ার ‘কফিনে’ শেষ পেরেক ঠুকে দেন। একেবারে অসহায় আত্মসমর্পণ! ১৯৯২ সালের পর আবার ফাইনালে ইংল্যান্ড। ইমরান খানের পাকিস্তানের কাছে হেরেছিল সেবার। এবার কেন উইলিয়ামসনের নিউজিল্যান্ড সামনে। ১৯৯৯ সালে ঘরের মাঠে ফাইনাল খেলতে পারেননি স্বাগতিকরা।
এবার চতুর্থবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে। ২২৪ রানের টার্গেটে (২২৬/২) ৮ উইকেটে জিতে গেলেন স্বাগতিকরা। ১০৭ বল পড়েই থাকল। বিশ্বকাপে নতুন চ্যাম্পিয়ন আসছে। ১৪ জুলাই ক্রিকেটের তীর্থভূমি লর্ডসে নিউজিল্যান্ড-ইংল্যান্ড কুড়ি উনিশ বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলবে। আগে ফাইনাল খেললেও এই প্রথম শিরোপা জিততে যাচ্ছে একটি দল (যে দলই জিতুক)।
প্রথম প্রেম, প্রথম ভালোবাসা, প্রথম-চাওয়া ও পাওয়া সবই মধুর। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে তো বটেই ক্রিকেটের প্রতিটি টুর্নামেন্টে সফলতার অন্য নাম। তবে এই প্রথম তারা এই ‘প্রথম’কে মেনে নিতে পারবে না। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে প্রথমবারের মতো হেরে বিদায় নিল পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। আগের ছয়টি সেমিফাইনালে জয় ও একটিতে টাই ছিল হলুদ-জার্সিধারীদের। ১৯৯৯ সালে এই এজবাস্টনে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে টাই করে ফাইনালে যায় স্টিভ ওয়াহর অস্ট্রেলিয়া।
জেসন রয় (৮৫) ও জনি বেয়ারস্টো (৩৪) ইংল্যান্ডকে ফাইনালের জাহাজে তুলে দিয়ে আউট হন। ১২৪ রানের উদ্বোধনী জুটির কারণে জয় স্বাগতিকদের জন্য সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। জেসন রয় আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনার সঙ্গে যে আচরণ করেন, এতে ফাইনালে নিষিদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা থেকে গেছে। আম্পায়ারের সমালোচনা করে ধারাভাষ্যকার মাইকেল হোল্ডিং টেকেননি। আসলে রয় ভালো খেলছিলেন। বলটি তার গ্লাভস বা ব্যাটে লাগেনি। রিভিউ না থাকায় সাজঘরে ফিরতে হলো তাকে। চরম বিরক্ত ছিলেন রয়। ফাইনালের আগে ইংল্যান্ডের বড় চিন্তার কারণ হতে পারে রয়ের শাস্তি।
ইংল্যান্ড ঘরের মাঠে ১৯৭৯ সালে ফাইনালে উঠেছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সেবার চ্যাম্পিয়ন হয়। এর পর আরও দুবার ফাইনালে উঠলেও শিরোপা জেতা হয়নি। ২০১৯ সালে আবার ফাইনালে উঠলেন ব্রিটিশরা। শুরুর দিকে ৬০ ওভারের প্রুডিন্সিয়াল কাপ নামে পরিচিত ছিল এই ওয়ার্ল্ড কাপ। ১৯৯৯ সালে আইসিসি ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ নাম হয়। ক্রিকেট বিশ্বকাপের প্রথম ৩টি আসর ছিল ৬০ ওভারের।
বেচারা স্টিভ স্মিথ! অস্ট্রেলিয়াকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুললেও গতকাল এজবাস্টনে দুয়োধ্বনি শুনলেন! ইংলিশ সমর্থকরা সেই বল টেম্পারিং কেলেঙ্কারি ভোলেননি। স্মিথ ৮৫ রানের স্কোর না করলে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর বোর্ডটা বেশ ‘গরিব’ই হতো! বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা স্বাগতিকদের সামনে এনে দিয়েছে মাত্র ২২৩ রান! ওকস-আর্চার-রশিদের তোপে ক্যাঙারুদের উইকেটে শান্তিমতো দাঁড়ানো কঠিন ছিল।
ইংল্যান্ডেরই দিন। সকালের বৃষ্টি সরে গেল বিকালে। অস্ট্রেলিয়া প্রখর রোদে বাদামি উইকেট দেখে ভেবেছে রান উৎসব হবে। অজি অধিনায়ক ফিঞ্চ টস জিতে ব্যাটিং নেন। পুরো বিশ্বকাপে ওয়ার্নার আর ফিঞ্চের দারুণ শুরুতে উচ্ছ্বাসে ভেসেছে অস্ট্রেলিয়া। কাল আর্চার আর ওকস উইকেটের দুপাশ থেকে আগুনের গোলা ছুড়েছেন। আর্চার তার প্রথম ওভারের প্রথম বলেই ফিঞ্চকে (০) লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন।
পরের ওভারে ওকসের আন ইভেন বাউন্সে হতচকিত ওয়ার্নার (৯) ক্যাচ দেন ফার্স্ট স্লিপে। পিটার হ্যান্ডসকম্ব সংকট বুঝেছিলেন। তবে ওকসের বলটি নেমে এসেছিল। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে তিনি ৪ রানে ফেরেন। ১৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া একেবারে সেমিফাইনালে মজা নষ্ট করে দেয়। সংগ্রামের গল্প কারইবা ভালো লাগে, যদি দিনশেষে কোনো সুখ না থাকে। স্মিথ ও ক্যারি দাঁড়ালেন ভগ্ন ইনিংসটিকে জোড়া লাগাতে। চতুর্থ উইকেটে জুটি ছিল ক্যারি-স্মিথের ১০৩ রানের। ক্যারি ও স্মিথ অস্ট্রেলিয়ার ওই ধাক্কা সামলে উঠলেও বড় স্কোরের স্বপ্ন দেখাতে পারেননি।
এই জুটি হুমকি ছিল ইংল্যান্ডের। রশিদ ক্যারিকে আউট করে অস্ট্রেলিয়াকে আরও চাপে ফেলেন। অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস ২৭.২ ওভারে ১১৪ রান ৪ উইকেটে। অস্ট্রেলিয়া তখন নির্ভর করছিল স্টয়নিস ও ম্যাক্সওয়েলের ওপর। রশিদ আবার আঘাত হানেন। স্টয়নিসকে ফেরান শূন্য রানে। ১১৮ রানে ৫ উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়া ম্যাক্সওয়েল-স্মিথে ঝুঁকে পড়ে।
আর্চার শুরুতে অস্ট্রেলিয়ার মাথায় আঘাত হানেন।
এবার কোমর ভেঙে দেন ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা (২৩ বলে ২২) ম্যাক্সওয়েলকে ফিরিয়ে। স্মিথ শেষ লড়াই হিসেবে স্টার্ককে বেছে নেন। ৫১ রানের জুটি ছিল। স্টার্ক ৩৬ বলে ২৯ রান করেন। স্মিথ যখন আউট হন, তখন অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ৪৭.১ ওভারে ২১৭ রান। অস্ট্রেলিয়ার শেষ লড়াকু সেনাপতি দুয়োধ্বনি মাথায় নিয়ে সাজঘরে ফেরেন। ওকস সবচেয়ে সফল বোলার। ৮ ওভারে ২০ রান দিয়ে উইকেট পান ৩টি। রশিদ অবশ্য বেশ খরুচে ছিলেন।
৫৪ রানে ৩ উইকেট পান। তরুণ সেনসেশন আর্চার ৩২ রানে ২ উইকেট নেন। ইংল্যান্ড পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের সেভাবে পাত্তা দেয়নি। ক্রিকেট বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে কখনো হারেনি অস্ট্রেলিয়া। ছয়টিতে জিতেছে। আর একটি ম্যাচ হয়েছিল টাই। বিশ্ব ক্রিকেটে দাপুটে দল অস্ট্রেলিয়াকে গতকাল বেশ অচেনা লেগেছে।