শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:০৫ অপরাহ্ন

স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসা খুলছে ৩০ মার্চ

স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসা খুলছে ৩০ মার্চ

স্বদেশ ডেস্ক:

টানা এক বছর ১৩ দিন পর খুলছে দেশের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা। আগামী ৩০ মার্চ প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরাসরি শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হবে। জুলাই মাসে নেওয়া হবে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের অবশ্য এখনই ক্লাসে যেতে হবে না। অবস্থা বুঝে পরে তাদের ব্যাপারে আলাদা ঘোষণা আসবে। আর পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলবে ২৪ মে। এর এক সপ্তাহ আগে ১৭ মে খুলে দেওয়া হবে আবাসিক হলগুলো। হলে অবস্থান নির্বিঘ্ন করতে এই সময়ের মধ্যে ১ লাখ ৩০ হাজার ছাত্রছাত্রীকে টিকা দেওয়ার কাজ শেষ করা হবে। দেশের যে কোনো টিকাদান কেন্দ্রে তারা টিকা দিতে পারবেন। আর স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা খোলার আগে শিক্ষক-কর্মচারীদের টিকা দেওয়ার কাজ শেষ করা হবে। গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। এর আগে ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ইস্যুতে শনিবার সন্ধ্যায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের সিদ্ধান্ত অবহিত করেন। তিনি জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলেও এখন শুধু পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী বা পিইসি পরীক্ষার্থীরা সপ্তাহে ৫ দিন স্কুল-মাদ্রাসায় যাবে। এ ছাড়া দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী বা এসএসসি-দাখিল এবং এইচএসসি ও আলিম পরীক্ষার্থীরা সপ্তাহে ৬ দিনই স্কুলে যাবে। প্রথম থেকে চতুর্থ এবং ষষ্ঠ থেকে অষ্টমের শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে একদিন করে ক্লাসে যাবে। জেএসসি পরীক্ষার্থী বা অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কী করবে তা জানাননি শিক্ষামন্ত্রী। এ ব্যাপারে আজ জানা যাবে। তবে তাদেরও সপ্তাহে ৫ দিন স্কুলে আনার আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। ৯ম এবং ১১তম শ্রেণির সপ্তাহে দুদিন করে ক্লাস হবে।
আগামী ৩০ মার্চের মধ্যে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শতভাগ টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এই সময়ের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ সম্পন্ন করতে হবে।

শিক্ষামন্ত্রী ব্রিফিংয়ে বলেন, যেসব শ্রেণির শিক্ষার্থী এখন সপ্তাহে একদিন আসবে, অবস্থা বুঝে পরে তাদের প্রথমে দুদিন, এরপর হয়তো প্রতিদিনই আনার সিদ্ধান্ত হবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে স্বাভাবিকের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ৩০ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ১৭ মে হল খুলে দেওয়ার আগে টিকা দেওয়ার কাজ শেষ করা হবে। ইতোমধ্যে প্রাথমিকের দেড় লাখ শিক্ষকের টিকা দেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে। বাকিরাও দিচ্ছেন। সুরক্ষাডটকমে শিক্ষকদের যুক্ত করা হয়েছে। তারা সেখানে রেজিস্ট্রেশন করে টিকা নিতে পারবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২০ আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের তালিকা করতে বলা হয়েছে। গত বুধবার চিঠি পাঠানো হয়েছে।

তিনি বলেন, এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ৬০ এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ৮৪ কর্মদিবস ক্লাস হবে। ক্লাস যেদিন শেষ হবে তারপর দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে নেওয়া হবে পরীক্ষা। রোজা ও সাপ্তাহিক ছুটি আছে। এসব মিলে জুলাই মাসের দিকে পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার আগে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা সংক্রান্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তৃণমূলের স্বাস্থ্যকর্মীরা এবং শিক্ষা প্রশাসনের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা দিকটি নিয়মিত তদারকি করবেন। এবার পুরো রোজার মাস ছুটি থাকবে না। আমরা ছোটবেলায় শুধু ঈদের ছুটি পেয়েছি। এবারও হয়তো তেমনটিই হবে।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি। কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন এমপি এতে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সভায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) কামাল হোসেন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নূর, করোনাবিষয়ক জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ, পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলমসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিট থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা স্থায়ী হয় ওই বৈঠক।

সরকারের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী আজ পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধারণ ছুটি ছিল। গত ২২ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভা বৈঠকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যায় কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ওই দিন বিকালেই হল-ক্যাম্পাস খোলার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের প্রশমিত করতে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ২৪ মে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেন। এতে উলটো ফল হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও নগর-মহানগরে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ শনিবারও রাজশাহী, টাঙ্গাইল এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি পালন করেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এই বৈঠক ডাকা হয়।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস করতে হবে গাইডলাইন অনুসরণ করে। শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ২ জানুয়ারি এই গাইডলাইন দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠিয়েছে। পাওয়া যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) স্বাস্থ্য সুরক্ষা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ অনুযায়ী এই নির্দেশিকা প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে মানববন্ধন : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া ও পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। শনিবার রাজশাহী, টাঙ্গাইল ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন অংশ নেন। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
রাজশাহী : বেলা ১১টায় ‘ছাত্র-শিক্ষক-নাগরিক সমাজ, রাজশাহী জেলা’ ব্যানারে রাজশাহী মহানগরীর জিরোপয়েন্টে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম বলেন, সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখায় শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের পথে। আমাদের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন রাজশাহী ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সভাপতি হারুনুর রশীদ, সাধারণ সম্পাদক ফরিদ মামুদ হাসান, মুক্তিযোদ্ধা নুর হোসেন মোল্লা, অ্যাডভোকেট আবুল হাসনাত বেগ প্রমুখ। মানববন্ধন সঞ্চালনা করেন অ্যাডভোকেট মুরাদ মোর্শেদ। দুপুরে একই স্থানে পরীক্ষা স্থগিতের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

ইবি : বেলা ১১টার দিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মানববন্ধনে মিলিত হয়। মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় তারা পরীক্ষা গ্রহণের দাবিতে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম ক্যাম্পাসে না থাকায় সহকারী প্রক্টরের মাধ্যমে ভিসি বরাবর দাবি ও স্বাক্ষর সংবলিত স্মারকলিপি প্রদান করেন।

টাঙ্গাইল : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা স্থগিত করার প্রতিবাদে টাঙ্গাইলে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। বেলা ১১টায় টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবের সামনে সরকারি সা’দত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঘণ্টাব্যাপী এ কর্মসূচি পালন করেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877