শুক্রবার, ২৪ মে ২০২৪, ০৯:২৩ অপরাহ্ন

কার দখলে যাবে পশ্চিমবঙ্গ

স্বদেশ ডেস্ক:

পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের ৫ রাজ্যে নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ হলো গতকাল শুক্রবার। কিন্তু এর অনেক আগে থেকেই রাজ্যে নির্বাচনের উত্তাল হাওয়া বইছে। আসন্ন নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। একদিকে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি; অন্যদিকে রাজ্যের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপি চাইছে যে করেই হোক রাজ্যে সরকার গঠন করতে হবে- আর তৃণমূল সর্বশক্তি দিয়ে সেটা প্রতিহত করে ক্ষমতা ধরে রাখতে চাইছে।

এদিকে গতকাল ভারতের নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত নির্ঘণ্টে দেখা গেছে- পশ্চিমবঙ্গে ২৭ মার্চ শুরু হয়ে ৮ পর্বে নির্বাচন শেষ হবে ২৯ এপ্রিল। আসামে তিন পর্বের নির্বাচন শুরু হবে মার্চের ২৭; আর শেষ হবে ৬ এপ্রিল। এ ছাড়া তামিলনাড়–, কেরালা ও পদুচেরিতে একপর্বের নির্বাচন একদিনেই সম্পন্ন হবে। আর সব রাজ্যের নির্বাচনের ফল একযোগে প্রকাশ হবে ২ মে।

পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে অন্য চারটি এলাকায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও কেন্দ্রীয় বিজেপির গতিবিধি লক্ষ্য করলে দেখা যায়- বাকি রাজ্যগুলো নিয়ে তাদের তেমন মাথাব্যথা নেই। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ব্যাপারে কয়েক বছর আগে থেকেই হিসাব কষেছে বিজেপি। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইতোমধ্যে রাজ্য সফর করে গেছেন। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা বিজেপির কাণ্ডারি হিসেবে পরিচিত অমিত শাহ, দলের সভাপতি জেপি নাড্ডার মতো শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ধারাবাহিকভাবে রাজ্য সফর করছেন।

বিজেপির জন্য পশ্চিমবঙ্গ জয় রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বলা যায়- ‘প্রেস্টিজ ইস্যুও’। বিজেপি এখন প্রায় গোটা ভারত শাসন করছে। আর পশ্চিমবঙ্গে রীতিমতো দলটিকে ধাক্কা খেতে হচ্ছে। এ রাজ্যে বিজেপির প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ছাড়া ময়দানে ৩০ বছরের বেশি সময় রাজ্য শাসন করা বাম জোট ও কংগ্রেস রয়েছে। কিন্তু পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাদের শক্তি তেমন দৃশ্যমান নয়। এ কারণে নির্বাচনের মূল লড়াই হয়ে দাঁড়িয়েছে নরেন্দ্র মোদি ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরেই।

ভারতের রাজনীতিতে মোদি-মমতা লড়াইটা বেশ পুরনো। ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই মোদিকে তুলাধুনা করতেন মমতা। সেই সময় মমতা মোদিকে ‘দাঙ্গাবাজ’ তকমা দিয়ে তাকে জেলে পোরার কথাও বলেছিলেন। মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরও ‘মমতা এক্সপ্রেস’ থেমে থাকেননি। দিন কয়েক আগেও মমতা জনসভায় মোদিকে দানব, মিথ্যুক, দাঙ্গাবাজ বলে একহাত নিলেন।

২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ৪২ আসনের মধ্যে দুটি আসন পেয়েছিল বিজেপি। সেই সময় পর্যবেক্ষক মহল জানিয়েছিল, বিজেপি মাত্র রাজ্যে বীজ বপন করল- দিনে দিনে তা আরও বাড়বে। পাঁচ বছরের মাথায় সেই কথা সত্যি হয়েছে। ২০১৯ সালের নির্বাচনে দুই আসন থেকে বিজেপি দখল করেছে ১৮টি। অর্থাৎ রাজ্যে বিজেপির পাল্লা ভারী হয়েছে তা বলা বাহুল্য। ২০১৯ সালে কেন্দ্রে সরকার গঠনের পরই বিজেপি ঘোষণা দিয়েছিল এবার ‘মিশন বাংলা-২০২১’। সম্প্রতি নরেন্দ্র মোদিও বলেছেন, বাংলায় এবার ‘আসল পরিবর্তন’ আসবে। ‘আসল পরিবর্তন’ কথাটি তিনি বাংলাতেই বলেছেন। এদিকে মমতা বলছেন, একুশের গোলরক্ষক তিনি নিজেই; কোনো গোল হতে দেবেন না। আবার আমরাই ক্ষমতায় আসব- দৃঢ়প্রত্যয় মমতার।

এবার পশ্চিমবঙ্গে কয়েকটি ইস্যু নির্বাচনের ফল নির্ধারণ করে দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিজেপি সারা ভারতের মতো বাংলাতেও ‘জয় শ্রী রাম’ দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পাড়ি দিতে চাচ্ছে। কিন্তু ভারতের অন্য রাজ্যের মতো পশ্চিমবঙ্গে এ ইস্যুর কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় রয়েছে। দলটির দ্বিতীয় কার্ডটি হলো ‘উন্নয়ন’। এ ছাড়া তুরুপের তাস হলো অবৈধ অভিবাসী তাড়ানোর নাম করে ‘বাংলাদেশি তাড়াও’ স্লোগান। অমিত শাহ ঘোষণা দিয়েছেন নির্বাচনে জয়ী হলে বাংলাদেশ থেকে একটি পাখিও প্রবেশ করতে পারবে না।

তা হলে হিসাবটা কী দাঁড়াচ্ছে? বিজেপি সরকার গঠন করবে? এই প্রশ্নের জবাবটা এতটা সহজ নয়। রাজ্যে বিজেপির দাপট বেড়েছে এ কথা সত্যি। কিন্তু সেটি বিধানসভা নির্বাচনের সরকার গঠনের মতো গ্যারান্টি দিতে পারে কিনা, তা নিয়ে বড় প্রশ্ন রয়েছে। সংবাদমাধ্যম ফার্স্ট পোস্টের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে- ‘রাজ্যে এবার বিজেপি সরকার গঠন করতে পারবে না’। এর পক্ষে তারা এক নাম্বার যুক্তি দেখিয়েছেন মমতার ‘জনপ্রিয়তা’। অর্থাৎ মমতার একক জনপ্রিয়তা টপকে বিজেপি জয় ছিনিয়ে নিতে পারবে না।

এ ছাড়া রাজ্যে উন্নয়নের ধারাবাহিকতাও বজায় রেখেছে তৃণমূল। এই হিসাবে বিজেপির উন্নয়নের বুলি কিছুটা হলেও এখানে মার খাবে। এর পরের পয়েন্ট হলো দুর্নীতি। রাজ্যে দুর্নীতিও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখেছে মমতা সরকার। কিন্তু তাই বলে, মমতার সামনের পথটাও খুব একটা মসৃণ নয়। দলের বেশ কয়েকজন শীর্ষনেতা দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এর মধ্যে সাবেক মন্ত্রী থেকে দীর্ঘদিনের পুরনো নেতাও রয়েছেন। এ ছাড়া ২০১১ সালে সরকার গঠনের পর দুই মেয়াদ শাসনের পর বেশকিছু দুর্নাম কুড়িয়েছে তৃণমূল। এখানেই তৃণমূলের দুর্বলতা। তবে সর্বোপরি মমতা-মোদি কারও জন্যই হিসাব অতটা সহজ নয়। অর্থাৎ কঠিন লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই যেতে হবে দুজনকে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877