স্বদেশ ডেস্ক:
নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের বিষয়ে সংবিধানে আইন প্রণয়নের কথা বলা হলেও স্বাধীনতার ৫০ বছরেও কোনো সরকার আইনটি করার উদ্যোগ নেয়নি। প্রতি ৫ বছর পর রাষ্ট্রপতি একটি পদ্ধতি অবলম্বন করে নতুন কমিশন গঠন করেন। বর্তমান কেএম নূরুল হুদা কমিশন গঠন করা হয়েছিল সার্চ কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে। তার আগের কমিশনও প্রায় একই পদ্ধতিতে গঠন করা হয়েছিল। আরেকটি নতুন ইসি গঠনে এক বছরেরও কম সময় হাতে আছে। এর মধ্যে আইন প্রণয়ণের কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এবারও সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আমাদের সময়কে বলেন, যেভাবে মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশ মোতাবেক নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়ে থাকে, এবারও সেভাবেই হতে পারে। এর বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে আমার জানা নেই। আইন প্রণয়ণের বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি মন্ত্রী।
সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের (৩) ধারা অনুযায়ী, কোনো নির্বাচন কমিশনারের পদের মেয়াদ তার কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে পাঁচ বছর হবে। বর্তমান কেএম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি শপথ গ্রহণ করে দায়িত্ব পালন শুরু করে। সে হিসাবে ২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাদের মেয়াদ রয়েছে। এরপরই নতুন কমিশন দায়িত্ব নেবে। এক্ষেত্রে চলতি বছরের শেষভাগেই ইসি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।
নতুন কমিশন গঠন বিষয়ে সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের (১) ধারায় বলা আছে, [প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া] বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করিবেন।
২০১২ সালে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান নির্বাচন কমিশন গঠন করতে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চার সদস্যের সার্চ কমিটি করেছিলেন। ওই কমিটিতে আপিল বিভাগের তৎকালীন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন প্রধান ছিলেন। সদস্য ছিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান। সেই সার্চ কমিটির কাছে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত আওয়ামী লীগসহ ২৩টি দল নাম পাঠিয়েছিল। তবে বিএনপিসহ ১৬টি দল নাম প্রস্তাব করেনি। বিএনপি ও তাদের জোটের দলগুলো সেই সার্চ কমিটির বিরোধিতা করেছিল।
২০১৭ সলে নতুন কমিশন গঠনে বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদও একই ফর্মুলা অনুসরণ করেন। তবে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং নারী প্রতিনিধি হিসেবে দুজনকে অন্তর্ভুক্ত করে কমিটির আকার বাড়িয়েছিলেন। এর আগে নতুন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতি ৩১টি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে অভিমত নেন। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নাম প্রস্তাব চায় সার্চ কমিটি। পাশাপাশি সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মতামতও নেওয়া হয়। পরে রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে পাওয়া নামের তালিকা থেকে সার্চ কমিটি ১০ জনের নামের তালিকা রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে তুলে দেয়। ওই তালিকা থেকে সাবেক সচিব কেএম নূরুল হুদাকে প্রধান করে নতুন ইসি গঠন করে দেন রাষ্ট্রপতি।
স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ১২টি নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। প্রথম প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন বিচারপতি এম ইদ্রিস। তার কমিশনের মেয়াদ ছিল ১৯৭২ সালের ৭ জুলাই থেকে ১৯৭৭ সালের ৭ জুলাই। ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করে এই কমিশন। প্রথম থেকে ছয়জন সিইসি ছিলেন বিচারপতি। ১৯৯৬ সালের ৯ এপ্রিল প্রথম কোনো আমলাকে সিইসি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে সাবেক আমলা মোহাম্মদ আবু হেনা সিইসির দায়িত্ব নেন। তার অধীনে ১৯৯৬ সালের জুনে সপ্তম জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অষ্টম সিইসি হিসেবে এমএ সায়ীদ দায়িত্ব নেন ২০০০ সালের ২৩ মে। তিনি ২০০৫ সালের ২২ মে পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় তার কমিশনের অধীনে।
দেশের ইতিহাসে অন্যতম আলোচিত কমিশন আজিজ কমিশন। বিচারপতি এমএ আজিজ ২০০৫ সালের ২২ মে সিইসির দায়িত্ব নেন। ব্যাপক রাজনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি নবম জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। পরে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার তফসিলটি বাতিল করে। ২১ জানুয়ারি পদত্যাগ করেন এমএ আজিজ।
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আজিজের উত্তরসূরি হন এটিএম শামসুল হুদা। তার কমিশন ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নবম জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা করে। তার মেয়াদ ছিল ২০০৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।