স্বদেশ ডেস্ক:
বিদেশ থেকে আমদানি করা কম দামের পণ্য ওভারইনভয়েসের মাধ্যমে বেশি দাম দেখিয়ে বছরে ৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আন্তর্জাতিক একটি প্রতিষ্ঠানের গবেষণা প্রতিবেদন আমলে নিয়ে এ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। এর মধ্যে আল-মুসলিম গ্রুপের ১৭৫ কোটি টাকা অর্থপাচারের অভিযোগ পেয়েছে দুদক। এ ছাড়া প্রায় অর্ধশত পোশাক কারখানা মালিক দুদকের নজরদারিতে রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই) গত বছরের ৪ মার্চ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ৭৫৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার পাচার হয়। বর্তমান বাজারদরে (৮৫ টাকায় প্রতি ডলার) এর পরিমাণ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। প্রতিবেদনটিতে ১৩৫টি উদীয়মান ও উন্নয়নশীল দেশের গত ১০ বছরের (২০০৮-১৭) আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মূল্য ঘোষণার গরমিল দেখিয়ে কীভাবে দেশ থেকে অর্থ পাচার হয় সেই চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি ৩৫টি উন্নত দেশের সঙ্গে তুলনামূলক চিত্রও দেওয়া হয়েছে। একটি দেশ অন্য দেশের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানির সময় প্রকৃত মূল্য না দেখিয়ে কমবেশি দেখানো হয়। মূল্য ঘোষণার বাড়তি অংশের অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়। প্রতিবেদনটিতে অর্থপাচারের পরিমাণ ও পাচারের পদ্ধতির বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও পাচারকারীদের নাম নেই। জিএফআইর প্রতিবেদন আমলে নিয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক। যারা অর্থপাচার করেছে তাদের শনাক্ত করতে দুদক চার সদস্যের
একটি টিম গঠন করে। পাচারকারীদের শনাক্ত করতে মাঠে নেমে বেশকিছু তথ্য পায় দুদক। এরই মধ্যে তারা জানতে পারে পণ্য রপ্তানির আড়ালে অর্থপাচার করেছে সাভারের পোশাক রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠান আল-মুসলিম গ্রুপের একেএম নিটওয়্যার। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ১৭৫ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করেছে। কিন্তু এই টাকা দেশে আসেনি।
এ বিষয়ে দুদক সচিব ড. মুহা. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, বিদেশ থেকে আমদানি করা কম দামের পণ্য ওভারইনভয়েসের মাধ্যমে বেশি দাম দেখিয়ে অর্থপাচারের ঘটনা অনুসন্ধান করতে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। দেশের কিছু গার্মেন্টসের মালিক ইনভয়েস জালিয়াতির মাধ্যমে বছরে ৬৪ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে বলে অভিযোগ আমরা পেয়েছি। সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ওই অভিযোগে আল-মুসলিম গ্রুপের বিরুদ্ধে ১৭৫ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ ছিল। সেটিও আমাদের কমিটি অনুসন্ধান করছে। এসব বিষয়ে এনবিআর আমাদের সহযোগিতা করছে। আমরা এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট থেকেও তথ্য নিয়ে এ বিষয়ে কাজ করছি। অপর এক প্রশ্নে দুদক সচিব বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ইসির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেই অভিযোগ যাচাই-বাছাই করছে দুদক।