রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:০১ পূর্বাহ্ন

সাংবাদিক মুজাক্কিরের দাফন সম্পন্ন

সাংবাদিক মুজাক্কিরের দাফন সম্পন্ন

স্বদেশ ডেস্ক:

শুক্রবার বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার সমর্থক ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হন মুজাক্কির। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে শনিবার রাতে সেখানে তার মৃত্যু হয়। মুজাক্কিরের মৃত্যুতে নোয়াখালীর পরিস্থিতি গতকাল ছিল উত্তাল। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছে স্থানীয় লোকজন ও সেখানকার সাংবাদিক সমাজ।

রোববার বোরহান উদ্দিন মুজাক্কিরের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। রাত সাড়ে ৮টায় চর ফকিরা ইউনিয়নের আজগর আলী দাখিল মাদ্রাসা মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে চির নিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে। এর আগে রাত পৌনে ৮টায় ঢাকা থেকে স্বজনরা মুজাক্কিরের মরদেহ নিয়ে বাড়িতে পৌঁছায়।

তার জানাজায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, জনপ্রতিনিধি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠানের নেতৃবৃন্দ, বুরহানের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবরা অংশ নেন। এ সময় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাতে পুলিশ ও র‌্যাব উপস্থিত ছিল।

বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির (২৫) দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার এবং অনলাইন পোর্টাল বার্তা বাজারের স্থানীয় প্রতিনিধি ছিলেন। ২০২০ সালে নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে দর্শনে প্রথম শ্রেণিতে অনার্স পাশ করে স্নাতকোত্তরে পড়ছিলেন। পাশাপাশি সাংবাদিকতায় যুক্ত হন মুজাক্কির। তিনি চরফকিরা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নোয়াব আলী মাস্টারের ছেলে সাত ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন।

গুলিবিদ্ধ সাংবাদিক বোরহান উদ্দিন মুজাক্কির হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে সাংবাদিকরা মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন। সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা ছাড়াও আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী, উন্নয়নকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। বক্তারা মুজাক্কিরের খুনিদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের জন্য প্রশাসনকে আলটিমেটাম দিয়ে এতে প্রশাসন ব্যর্থ হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি দেন। একই দাবিতে কোম্পানীগঞ্জ, চাটখিলসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেন সাংবাদিকরা।

রোববার দুপুরের দিকে জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরফকিরা গ্রামে নিহত সাংবাদিক মুজাক্কিরের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে মা মমতাজ বেগমের শোকের মাতম। বারবার ঘরের মেঝেতে লুটিয়ে পড়ছেন মা মমতাজ বেগম। বোন ফেরদাউস, নুরনাহার, গুলজাহান, গুলনাহার ও স্বজনদের কান্নায় সেখানকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। মুজাক্কিরকে যারা হত্যা করেছে, তাদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান মা মমতাজ বেগম।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ নোয়াখালীর স্থানীয় নেতাদের নিয়ে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার আপত্তিকর নানা মন্তব্য নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে উত্তাল নোয়াখালীর রাজনীতি অঙ্গন। কাদের মির্জার বিরুদ্ধে গত শুক্রবার বিকালে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চাপরাশিরহাট বাজারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল।

মিছিলটি বিকেল ৫টায় বাজারসংলগ্ন তার বাড়ি থেকে বের হয়ে চাপরাশিরহাট মধ্যম বাজারে গেলে কাদের মির্জার অনুসারীরা মিছিলে হামলা চালায়। এ সময় সেখানে উপস্থিত পুলিশ দুপক্ষকে দুদিকে ধাওয়া করে এবং ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর কাদের মির্জার নেতৃত্বে শতাধিক অনুসারী মোটরসাইকেল ও গাড়িযোগে চাপরাশিরহাট এলাকায় যান। একপর্যায়ে গোলাগুলি শুরু হয়।

এ সময় গুলিবিদ্ধ হন সাংবাদিক বোরহান উদ্দিন মুজাক্কির। গুলিতে তার মুখের নিচের অংশ এবং গলা ঝাঁজরা হয়ে যায়। মুজাক্কির ছাড়াও গুলিবিদ্ধ অন্তত পাঁচজন। ঘটনার পর স্থানীয়রা আহতদের প্রথমে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় মুজাক্কিরকে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877