রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৪:১৯ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
স্বেচ্ছাসেবক লীগের র‌্যালি থেকে ফেরার পথে ছুরিকাঘাতে কিশোর নিহত দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চরম তাপপ্রবাহ আসন্ন বিপদের ইঙ্গিত দ্বিতীয় ধাপে কোটিপতি প্রার্থী বেড়েছে ৩ গুণ, ঋণগ্রস্ত এক-চতুর্থাংশ: টিআইবি সাড়ে ৪ কোটি টাকার স্বর্ণসহ গ্রেপ্তার শহীদ ২ দিনের রিমান্ডে ‘গ্লোবাল ডিসরাপ্টর্স’ তালিকায় দীপিকা, স্ত্রীর সাফল্যে উচ্ছ্বসিত রণবীর খরচ বাঁচাতে গিয়ে দেশের ক্ষতি করবেন না: প্রধানমন্ত্রী জেরুসালেম-রিয়াদের মধ্যে স্বাভাবিককরণ চুক্তির মধ্যস্থতায় সৌদি বাইডেনের সহযোগী ‘ইসরাইলকে ফিলিস্তিন থেকে বের করে দাও’ এসএমই মেলার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ইরান ২ সপ্তাহের মধ্যে পরমাণু অস্ত্র বানাতে পারবে!
ভূমিকম্পের পূর্বাভাসে সক্ষম প্রাণী

ভূমিকম্পের পূর্বাভাসে সক্ষম প্রাণী

স্বদেশ ডেস্ক: সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী হয়েও, ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিতে পারার ক্ষমতা নেই মানুষের। অন্য দিকে, আমাদের আশপাশে খুব পরিচিত এমন কিছু প্রাণী রয়েছে, যারা নিজেদের বিভিন্ন আচার-আচরণের মধ্য দিয়ে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস প্রদান করতে সক্ষম।

ঘোড়া: গৃহপালিত পশুগুলোর মধ্যে ঘোড়া অন্যতম। এই ঘোড়ার মধ্যেও রয়েছে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস বুঝতে পারার সক্ষমতা। ১৯৯৭ সালের ১৮ জুলাই তাংসাং শহরের কথাই বলা যেতে পারে। হঠাৎ করেই দেখা গেল, ঘোড়াগুলো তাদের খাবার খাওয়া ফেলে রেখে লাফালাফি করতে শুরু করেছে।
এক সময় এদের আচরণে এতটাই বেশি অস্বাভাবিকতা চলে আসে যে, এরা একে অপরকে লাথি মারতে শুরু করে দিলো এবং বাঁধন ছিঁড়ে ছোটাছুটি করতে লাগল। এর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ৭৮ মাত্রায় ভূমিকম্প এসে হানা দেয় তাংসাং শহরের বুকে। এসব আচরণের অস্বাভাবিকতার মাধ্যমে ঘোড়ারাও ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিয়ে থাকে আমাদের।

কুকুর: আমাদের চারপাশে চলাফেরা করা প্রাণীদের মধ্যে কুকুর একটি অতি সাধারণ পোষা প্রাণীর নাম। তবে এই প্রাণীর রয়েছে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিতে পারার অদ্ভুত ক্ষমতা। ১৯২০ সালে চীনের হাইয়ানে সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প হয়, যার মাত্রা ছিল ৮৫। দেখা গিয়েছিল, ওই সময় এলাকার সব কুকুওরগুলো অদ্ভুতভাবে জোরে জোরে ডাকাডাকি শুরু করে দিয়েছিল। আবার, ১৯৬৬ সালে উত্তর চীনের সিংতাইয়ে ৬৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। ভূমিকম্পের আগে সেই এলাকার কুকুরগুলোও দলে দলে ডাকাডাকি ও ছোটাছুটি শুরু করে দিয়েছিল। ২০১১ সালের মার্চে ভয়াবহ সুনামির পর ডিসেম্বর ও ২০১২ সালের জানুয়ারিতে জাপানের বিজ্ঞানীরা পোষা প্রাণীর মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগের মধ্য দিয়ে একটি গবেষণা কার্য সম্পাদন করেন। যেখানে ১২০০ কুকুরের মালিক অংশগ্রহণ করেন। ওই গবেষণা থেকে জানা যায়, ভূমিকম্পে শুরুর কয়েক সেকেন্ড ও মিনিট আগে থেকে প্রায় ৬০ ভাগ কুকুর অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। তবে ১৭ ভাগ কুকুর কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করতে থাকে। যেমনÑ অস্থানীররা, মালিকের কাছ ঘেঁষে থাকা, বিকটভাবে ডাকাডাকি, দৌড়াদৌড়ি, গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যাওয়া প্রভৃতি।

হাতি:হাতির মধ্যেও ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিতে পারার অদ্ভুত ক্ষমতাটি বিদ্যমান। এ সময় তারা অশান্ত হয়ে ছোটাছুটি করতে থাকে। শুঁড় তুলে তীব্রভাবে কান্নাকাটি করতে শুরু করে। চীনের এক রাজ্যে একবার মে মাসের শুরুতে দেখা গেল যে, হাতিরা শুঁড় তুলে বিকটভাবে কান্নাকাটি শুরু করেছে। তাদের আচরণও বেশ অশান্ত। খাবারের প্রতিও মনোযোগ নেই। পরে ১২’মে তারিখে এক ভূমিকম্প এসে আঘাত হানলো ওই অঞ্চলে। আর হাতিগুলো এমন আচরণ শুরু করেছিল যেখানে, সেটি ছিল ভূমিকম্প আঘাত হানা অঞ্চলটির থেকে ৬০০ মাইল পশ্চিমের একটি চিড়িয়াখানায়।

ইঁদুর: ইঁদুরের মধ্যেও ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিতে পারার যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। সুপ্রাচীন ৩৭৩ সালে গ্রিসে একবার ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল। যার আগের দিন সমস্ত ইঁদুরদের গ্রিস ছেড়ে চলে যেতে দেখা যায়। চীনের হেইচেংয়ে একবার দেখা গেল, প্রচ- শীতের ঠা-াকে উপেক্ষা করেও ইঁদুরগুলো তাদের গর্ত থেকে দলে দলে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। ছন্নছাড়া ভাবে তারা ছোটাছুটিও করতে শুরু করল। পরে ১৯৭৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ভূমিকম্প হয়। যার মাত্রা ছিল ৭৩। প্রশাসন সেসময় প্রাণীদের এমন অস্বাভাবিক আচরণ পর্যবেক্ষণ করে হেইচেং ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন সাধারণ মানুষদের। যার ফলে বেঁচে গিয়েছিল অসংখ্য মানুষের প্রাণ।

ব্যাঙ: সারাবিশ্বে এখনও পর্যন্ত চার হাজার ৭৪০ প্রজাতির ব্যাঙের দেখা মিলেছে। জল অথবা স্থল উভয় জায়গাতেই ব্যাঙের অবাধ বিচরণ আমাদের পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ব্যাঙদের মধ্যেও রয়েছে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিতে পারার অদ্ভুত ক্ষমতাটি। লক্ষ্য করা যায়, ভূমিকম্পের আগে ব্যাঙেরা তাদের আবাসস্থল ফেলে রেখে দূরে সরে আসে ও দলে দলে ঘুরতে থাকে। ইতালির এক শহরে ব্যাঙদের নিয়ে গবেষণা করছিলেন একদল বিজ্ঞানী। হঠাৎ এক দিন তারা লক্ষ্য করলেন, নিজেদের আবাসস্থল থেকে উধাও হয়ে গেছে সব ব্যাঙ। এর পরপরই সেখানে আঘাত হানে ভয়ঙ্কর এক ভূমিকম্প। আর এর এক দিন পরই দলে দলে নিজেদের পুরনো আবাসস্থলে পুনরায় ফিরে আসে সব ব্যাঙ। যুক্তরাজ্যের ওপেন ইউনিভার্সিটির গবেষক র‌্যা চেল গ্রান্টের মতে, তারা প্রায় চার বছর যাবত এই ব্যাঙগুলো নিয়ে গবেষণা করছিলেন। যেখানে তারা সেই চার বছরের মধ্যে একবারের জন্যও নিজেদের আবাসস্থল ফেলে নড়তে দেখেননি সেই ব্যাঙগুলোকে। বিজ্ঞানীদের মতে, ভূমিকম্পের আগে ভূগর্ভ থেকে এক ধরনের চার্জড পার্টিকেলস নির্গত হয়। যা পানির সঙ্গে মিশে রাসায়নিক পরিবর্তনের সূচনা করে। যে পরিবর্তনের মাধ্যমেই ব্যাঙসহ বেশকিছু প্রাণীরা ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পেতে সক্ষম।
সাপ: হাত-পা-বিহীন মাংসাশী বিষধর প্রাণী হিসেবেই সাপ আমাদের কাছে বেশি পরিচিত। সাপ একটি সরীসৃপ প্রাণী। আটলান্টিক ছাড়া পৃথিবীর সকল মহাদেশেই সাপের উপস্থিতি দেখা যায়। তা হতে পারে সমুদ্রে গভীর তলদেশ বা স্থলভাগ অথবা পর্বতের সুউচ্চ শানুদেশে। এই সাপের মধ্যেও ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিতে পারার ক্ষমতার পরিচয় মিলেছে। দেখা যায় এ সময় তারা গর্ত থেকে বের হয়ে আসে। তাদের আচরণেও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। ১৯৭৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি চীনের হেইচেং শহরে যে ৭৩ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল, সেখানেও দেখা গেছে সাপেরা তাদের শীতনিদ্রা ছেড়ে গর্ত থেকে বের হয়ে আসে। প্রচ- ঠা-ায় সহ্য করতে না পেরে বরফের ওপর এদের মৃতদেহ পড়ে থাকতেও দেখা যায়। তবুও এরা গর্তে ফিরে যায়নি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877