শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৪৮ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
জাপা নেতাকে হত্যার পর লাশ পুঁতে রাখে রোহিঙ্গা যুবক

জাপা নেতাকে হত্যার পর লাশ পুঁতে রাখে রোহিঙ্গা যুবক

স্বদেশ ডেস্ক: কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা যুবক আনসার উল্লাহকে মাসে ১২ হাজার টাকা বেতনে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি দিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির নেতা আনোয়ার হোসেন। তাকে পুলিশে ধরিয়ে না দিয়ে চাকরি দেওয়ার মাসুল গুনতে হয়েছে তার নিজের জীবন দিয়ে। থাকা-খাওয়াসহ গরুর খামারে চাকরি পাওয়া আনসার উল্লাহ নিজের মালিককে খুন করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পাশেই মাটিতে পুঁতে রাখে। ঘটনার এক মাস পর মাটি খুঁড়ে লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার দরবেশহাট এলাকায় সংঘটিত মর্মান্তিক এ ঘটনায় আনসার উল্লাহসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, ক্যাম্প থেকে পালিয়ে অবৈধ পন্থায় গরুর খামারে চাকরি নেওয়া আনসার উল্লাহকে বকা দিয়েছিলেন আনোয়ার। এর জেরে মালিককে ছুরিকাঘাতে খুন করে লাশ পুঁতে রেখেছিল সে। জানা গেছে, গত শুক্রবার গভীর রাতে উপজেলার দরবেশহাট এলাকায় নিজ বাড়ির অদূরে নিজের গরুর খামারের পাশ থেকে আনোয়ারের লাশ উদ্ধার করা হয়। লোহাগাড়া উপজেলার দরবেশহাট এলাকার মৃত আহমদ মিয়া সওদাগরের সন্তান তিনি। আনোয়ার লোহাগাড়া উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। সদ্য সমাপ্ত লোহাগাড়া সদর ইউপি নির্বাচনে জাতীয় পার্টির দলীয় প্রার্থী হিসেবে লাঙল প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছিলেন তিনি।

খুনের ঘটনায় উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা আনসার উল্লাহ ও লোহাগাড়ার দরবেশহাট এলাকার স্থানীয় এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২৯ ডিসেম্বর রাত ৮টার দিকে দরবেশহাট সওদাগরপাড়ার নিজ খামারবাড়িতে ছিলেন আনোয়ার। সেখান থেকে উপজেলা সদরের ফোরকান টাওয়ারের বাসায় ফেরার উদ্দেশে বের হন। এর পর থেকেই তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় ৩১ ডিসেম্বর আনোয়ারের ছোটভাই সেলিম লোহাগাড়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এ ছাড়া আনোয়ারকে দ্রুত জীবিত উদ্ধারের দাবিতে পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছিল। জাতীয় পার্টি লোহাগাড়া উপজেলা শাখার উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন হয়েছিল।

লোহাগাড়া থানার ওসি জাকির হোসাইন মাহমুদ জানান, গত ২১ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন আনোয়ারের স্ত্রী নার্গিস আক্তার। এর পর পুলিশ বিভিন্ন সোর্স ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে নিখোঁজ আনোয়ারকে উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। বিভিন্ন মাধ্যমে পুলিশ নিশ্চিত হয় ঘটনার সঙ্গে খামারের কর্মচারী জড়িত। দরবেশহাট সওদাগরপাড়ার ইদ্রিসের ছেলে আসিফ ও কর্মচারী উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আবদুস সালামের ছেলে আনসার উল্লাহকে আটক করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আনসার উল্লাহ আনোয়ারের লাশ মাটিচাপা অবস্থায় আছে বলে নিশ্চিত করে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার কর্মচারীরা মালিককে হত্যা করে তার খামারের পেছনে গর্ত করে পুঁতে রাখার কথা জানায়।

ওসি আরও বলেন, গ্রেপ্তার দুজনের তথ্যে শুক্রবার গভীর রাতে লোহাগাড়া সদরের দরবেশহাট সওদাগরপাড়া এলাকায় খামারের পাশ থেকে লাশ উদ্ধার করি। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে আনসার উল্লাহ কক্সবাজারে এসে কুতুপালং ক্যাম্পে বসবাস শুরু করে। বছরখানেক আগে ক্যাম্প থেকে পালিয়ে সাতকানিয়ার কেরানিহাট আসে। সেখানে কিছু দিন একটি দোকানে চাকরি করে। ঘটনার তিন মাস আগে মাসিক ১২ হাজার টাকা বেতনে আনোয়ারের খামারে চাকরি নেয়। বেতন নিয়ে আনসার ও আনোয়ারের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। আনোয়ার তাকে বকা দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সে ছুরিকাঘাত করে আনোয়ারকে খুন করে লাশ মাটিতে পুঁতে রাখে। পরে ক্যাম্পে পালিয়ে যায়। গ্রেপ্তার দুজনকে আনোয়ার হোসেন হত্যা মামলায় আদালতে পাঠানো হয়েছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877