স্বদেশ ডেস্ক: নানা জল্পনা কল্পনা আর জটিলতার মধ্য দিয়ে অবশেষে প্রকাশ হলো এইচএসসির ফলাফল। আজ শনিবার সকাল পৌনে ১১টায় পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এসময় প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়েছেন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে সরাসরি অনুষ্ঠিত হয়নি গত বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। মহামারির কারণে এই স্তরের শিক্ষার্থীদের সরাসরি পরীক্ষা ছাড়াই মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। পরীক্ষার জন্য নিবন্ধনকৃত সব শিক্ষার্থী বিশেষ বিবেচনায় পাস হবে।
এর আগে গতকাল শুক্রবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৩০ জানুয়ারি ২০২১ তারিখ সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা ২০২০-এর ফল ঘোষণা করা হবে।
প্রতি বছর শিক্ষামন্ত্রী নির্দিষ্ট দিন সকালে বোর্ডপ্রধানদের সঙ্গে নিয়ে গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফলের অনুলিপি হস্তান্তর করেন। পরে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি ফলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। এবার মহামারির মধ্যে সেই আনুষ্ঠানিকতায়ও পরিবর্তন আসছে।
শিক্ষা বোর্ডগুলোর তথ্যানুযায়ী দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ শিক্ষার্থী এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল গত বছরের ১ এপ্রিল থেকে।
করোনার প্রকোপ বাড়তে শুরু করলে ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। তার আগে এসএসসি পরীক্ষা হয়ে গেলেও আটকে যায় এইচএসসি পরীক্ষা।
মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও পরীক্ষা নেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি না হওয়ায় গত ৭ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানান, পঞ্চম ও অষ্টমের সমাপনীর মতো এইচএসসি পরীক্ষাও নেওয়া যাচ্ছে না। সে দিন তিনি জানান, অষ্টম শ্রেণির সমাপনী এবং এসএসসি পরীক্ষার ফলের গড় করে ২০২০ সালের এইচএসসির ফল নির্ধারণ করা হবে। জেএসসি-জেডিসির ফলের ২৫ এবং এসএসসির ফলের ৭৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল ঘোষণা করা হবে।
ভিন্ন পদ্ধতির এই মূল্যায়নের কাজটি করার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিভাগ পরিবর্তনজনিত (যারা বিজ্ঞান থেকে মানবিক বা অন্য বিভাগ পরিবর্তন করেছে) কারণে যে সমস্যাটি হবে তা ঠিক করতেও বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করবে। এই বিশেষজ্ঞ কমিটি ডিসেম্বর মাসেই তাদের সুপারিশ দিয়েছে। এর পর ফল প্রকাশের প্রস্তুতি নেয় বোর্ডগুলো।
তবে বোর্ড আইনে পরীক্ষা নিয়ে ফল প্রকাশের বিধান থাকায় তা সংশোধন করে বিশেষ পরিস্থিতিতে পরীক্ষা ছাড়াই ফল প্রকাশের বিধান যুক্ত করতে হয়েছে, যা গত সপ্তাহে জাতীয় সংসদের অনুমোদন পায়।
সংসদে পাস হওয়া তিনটি বিলে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সই করার পর সোমবার রাতে ‘ইন্টারমিডিয়েট অ্যান্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট-২০২১’ ‘বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (সংশোধন) অ্যাক্ট-২০২১’, ‘বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড (সংশোধন) অ্যাক্ট-২০২১’ গেজেট আকারে জারি করে সরকার।
আইনগুলো সংশোধন হওয়ায় এখন বিশেষ পরিস্থিতে অতিমারী, মহামারী, দৈব দুর্বিপাকের কারণে বা অনিবার্য পরিস্থিতিতে কোনো পরীক্ষা গ্রহণ, ফল প্রকাশ এবং সনদ প্রদান করা সম্ভব না হলে সরকার সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপিত আদেশ দিয়ে কোনো বিশেষ বছরে শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষা ছাড়াই বা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নিয়ে প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত পদ্ধতিতে মূল্যায়ন এবং সনদ দেওয়ার নির্দেশ জারি করতে পারবে।
এই পরীক্ষার ফল পেতে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। মোবাইলের ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে ঐঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে শিক্ষা বোর্ডের নাম দিয়ে স্পেস দিয়ে রোল লিখে স্পেস দিয়ে ২০২০ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠিয়ে দিতে হবে। ফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই প্রি-রেজিস্ট্রেশনকৃত পরীক্ষার্থীদের মোবাইল নম্বরে ফল পৌঁছে যাবে।
এ ছাড়া ওয়েবসাইটwww.educationboardresults.gov.bd থেকে ফল দেখা যাবে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকেও ফল জানা যাবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় গড় পাসের হার ছিল ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ফলের সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪৭ হাজার ২৮৬ জন, যা মোট পরীক্ষার্থীর ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ। ওই বছর মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ১৩ লাখ ৩৬ হাজার ৬২৯ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন ৯ লাখ ৮৮ হাজার ১৭২ জন।