বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৮ অপরাহ্ন

তদন্তে মিলেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁসছেন মালিক-চিকিৎসক

তদন্তে মিলেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁসছেন মালিক-চিকিৎসক

স্বদেশ ডেস্ক: রাজধানীর আদাবরের মাইন্ডএইড হাসপাতালে পুলিশের সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম শিপন হত্যা মামলার চার্জশিট প্রস্তুত করেছে পুলিশ। সব কিছু ঠিক থাকলে এ মাসেই আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। হত্যাকা-ের সঙ্গে হাসপাতালের চিকিৎসক, স্টাফসহ ১৫ জনের সরাসরি সম্পৃক্ততার তথ্যপ্রমাণ উঠে এসেছে পুলিশি তদন্তে। আলোচিত এ হত্যা মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। এদিকে আসামিদের মধ্যে দুজন দেশের বাইরে থাকায় তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা ইতোমধ্যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা উল্লেখ করেছেন- আনিসুল করিমকে হাসপাতালে নেওয়ার পর সিগারেটের কথা বলে দ্বিতীয় তলার শব্দ নিয়ন্ত্রিত একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানে তাকে পেছন থেকে দুই হাত বেঁধে পেটানো হয়। একপর্যায়ে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন আনিসুল করিম। মূলত ওয়ার্ডবয়, বাবুর্চি, রিসিপশনিস্ট, দারোয়ানসহ কর্মচারীদের দিয়েই কথিত চিকিৎসা করাতো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। দক্ষ জনবল ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ছাড়াই বিশেষায়িত এ চিকিৎসাকেন্দ্র পরিচালনা করে আসছিলেন বলে স্বীকার করেছেন হাসপাতালটির পরিচালক ফাতেমা খাতুন ময়না। এ ছাড়া নানা অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে পরিচালিত হাসপাতাল থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে চুপ থেকেছেন সংশ্লিষ্ট কিছু কর্তাব্যক্তি।

মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য আদাবরের মাইন্ডএইড হাসপাতালে গত বছরের ১০ নভেম্বর সকালে সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিমকে নিয়ে যান তার স্বজনরা। পরে সেখানকার কর্মীরা শব্দনিয়ন্ত্রিত একটি কক্ষে নিয়ে আনিসুল করিমকে মারধর করেন। তাকে উদ্ধার করে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আনিসুল করিমকে মারধরের বিষয়টি ধরা পড়ে সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজেও। সেই ফুটেজটি ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় তোলপাড়। দায়ীদের

বিচারের দাবিতে সোচ্চার হন আনিসুল করিমের বন্ধু, স্বজন ও সহকর্মী পুলিশ সদস্যরা।

এ ঘটনায় আদাবর থানায় আনিসুল করিমের বাবা মুক্তিযোদ্ধা মো. ফাইজুদ্দিন আহম্মেদ ১৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন। পরে মাইন্ডএইড হাসপাতালের মার্কেটিং ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ জয়, পরিচালক ফাতেমা খাতুন ময়না, মুহাম্মদ নিয়াজ মোর্শেদ, কো-অর্ডিনেটর রেদোয়ান সাব্বির, কিচেন শেফ মোহাম্মদ মাসুদ, ফার্মাসিস্ট তানভীর হাসান, ওয়ার্ডবয় জোবায়ের হোসেন, তানিম মোল্লা, সজীব চৌধুরী, অসীম চন্দ্র পাল, লিটন আহাম্মদ, সাইফুল ইসলাম পলাশ এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেজিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তার করে কয়েক দফা রিমান্ডে নেওয়া হয়। এদের মধ্যে শুধু আবদুল্লাহ আল মামুন জামিনে রয়েছেন। এ ছাড়া দেশের বাইরে পালিয়ে আছেন হাসপাতালের আরও দুই মালিক সাখাওয়াত হোসেন ও সাজ্জাদ আমিন। এরই মধ্যে মাসুদ, অসীম, আরিফ মাহমুদ, সজীব চৌধুরী, তানভীর হাসান ও তানিম মোল্লা হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

তদন্ত সূত্র জানায়, জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের রেজিস্টার ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন সরকারি হাসপাতালের রোগী ভাগিয়ে মাইন্ডএইড হাসপাতালে পাঠাতেন। বিনিময়ে পেতেন ২০ শতাংশ কমিশন। তাই মাইন্ডএইড হাসপাতালে চিকিৎসার নামে ভয়ঙ্কর অব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জেনেশুনেও সেখানে রোগী পাঠাতেন ২৮তম বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের এ কর্মকর্তা।

জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও আদাবর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. ফারুক মোল্লা আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমাদের তদন্তে হত্যাকা-ের সবই উঠে এসেছে। সব কিছু ঠিক থাকলে এ মাসেই চার্জশিট দেওয়া হতে পারে।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ৩৩তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন আনিসুল করিম। ৩১তম বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে। এক সন্তানের জনক আনিসুলের বাড়ি গাজীপুরে। র‌্যাব, পুলিশ সদর দপ্তরে দায়িত্ব পালন করে সর্বশেষ বরিশাল মহানগর পুলিশে কর্মরত ছিলেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877