বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৯ পূর্বাহ্ন

চালু হলো দেশের প্রথম স্বয়ংক্রিয় দুগ্ধ খামার

চালু হলো দেশের প্রথম স্বয়ংক্রিয় দুগ্ধ খামার

স্বদেশ ডেস্ক: নতুন নতুন উদ্ভাবন ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের শিল্প খাতকে বিশ্বমানের পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছেন তরুণ উদ্যোক্তারা। পুরনো পদ্ধতির বদলে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তারা বাড়াচ্ছেন পণ্যের উৎপাদন ও গুণগতমান। এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই দেশের দুগ্ধশিল্পও। অন্যান্য শিল্পের মতো দুগ্ধ খামারিরাও তাদের খামার ব্যবস্থাপনা উন্নত বিশ্বের আদলে গড়ে তুলছেন।

এরই ধারাবাহিকতায় রংপুরে চালু হয়েছে দেশের প্রথম শতভাগ স্বয়ংক্রিয় দুগ্ধ খামার ইওন হাইটেক ডেইরি ফার্ম। বদরগঞ্জ উপজেলার সন্তোষপুর গ্রামে ৫০ একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে এ খামার। যেখানে হাতের স্পর্শ ছাড়াই স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায় দুধ দোহন থেকে শুরু করে তা পাস্তুরিত এবং প্যাকেটজাত করা হচ্ছে। এ ছাড়া এখানে ঘি, দই ও আইসক্রিমের মতো অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্যও উৎপাদন করা হবে হাতের স্পর্শ ছাড়া। সব পর্যায়েই মেশিন ব্যবহারের মাধ্যমে এটিকে স্বয়ংক্রিয় উৎপাদন ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা হয়েছে।

গত ৯ জানুয়ারি ফার্মে পাস্তুরিত দুধ ও দুগ্ধজাতীয় পণ্য উৎপাদনের উদ্বোধন করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। দুগ্ধশিল্পের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের পাশাপাশি এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে আশা করছি। এর মাধ্যমে দুধ আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দুধের যে ঘাটতি আছে তা পূরণ করতে সক্ষম হবে দেশ।

খামার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দেশে তিনটি আধুনিক খামারে সেন্সর প্রযুক্তি দ্বারা গরুর দেখভাল এবং দুধ দোহনে উন্নত মিল্কিং পার্লার (যেখানে মেশিনের মাধ্যমে দুধ দোহানো হয়) থাকলেও সেগুলোতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দুধ পাস্তুরিতকরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও প্যাকেটজাত করার ব্যবস্থা নেই। ইওন হাইটেক ডেইরি ফার্মই দেশে প্রথমবারের মতো গবাদি প্রতিপালন থেকে শুরু করে প্যাকেটজাত করা পর্যন্ত সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি ব্যবহার চালু করেছে। পাশাপাশি এখানে দুধের মান ঠিক রাখা এবং অ্যান্টিবায়োটিক মুক্তও করা হবে সয়ংক্রিয়ভাবে।

জানা গেছে, অস্ট্রেলিয়া থেকে বেশি দুধ উৎপাদনে সক্ষম পিওর ব্রিড হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান জাতের ২২৫টি গাভী আমদানি করে ২০১৯ সালের শেষ দিকে যাত্রা শুরু করে খামারটি। বর্তমানে এখানে ৪০০ গরু রয়েছে। উন্নত জাতের এ গরুগুলোর থাকার ছাউনিগুলো তৈরি করা হয়েছে সুইডেনের খামারের আদলে। কারণ থাকার স্থানটি গরুর অনুকূলে থাকলে দুধ উৎপাদনও বেশি হয়। এখানকার প্রতিটি গরু প্রতিদিন ২৫ লিটারেরও বেশি দুধ উৎপাদনে সক্ষম। খামারটিতে বর্তমানে প্রতিদিন দুই হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হচ্ছে।

খামারের উপদেষ্টা ড. সিরাজুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড কিংবা সুইডেনের উন্নত খামারের আদলে খামারটি তৈরি করা হয়েছে। এখানে সার্বিক নির্দেশনায় নেদারল্যান্ডসের একজন বিশেষজ্ঞ নিয়োজিত রয়েছেন। বাংলাদেশে এর আগে কয়েকটি খামারে প্রযুক্তির ব্যবহার হলেও আমাদেরটাই প্রথম যেখানে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে গোটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে। এখানে মিল্কিং পার্লারে দুধ দোহন থেকে প্যাকেটজাতকরণ পর্যন্ত দুধে কোনো হাতের স্পর্শ থাকে না। মিল্কিং পার্লারে মেশিনের মাধ্যমে একসঙ্গে ১৬টি গরুর দুধ দোহন সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সময়ের প্রয়োজন হয় মাত্র ৮ মিনিট। আমরা একদিনে সর্বোচ্চ চার হাজার লিটার পর্যন্ত দুধ উৎপাদন করতে পেরেছি। তবে সক্ষমতা বাড়ানো হবে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা প্রতিদিন দশ হাজার লিটার পর্যন্ত দুধ উৎপাদন করা।

তিনি আরও জানান, প্রতিটি গাভীর গায়ে তিনটি ‘আই ও টি’ সেন্সর বসানো রয়েছে। যার মাধ্যমে প্রতিটি গাভীর খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক অবস্থা, দুধ দোহন অবস্থা, ওষুধের সঠিক ব্যবহার, প্রজনন স্বাস্থ্য নিখুঁতভাবে মনিটরিং এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি ‘ডেল প্রো’ নামের একটি সফটওয়ার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, এন্টিবায়োটিকমুক্ত দুধ উৎপাদনের লক্ষ্যে এ খামারে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে এন্টিবায়োটিক থাকা গাভীগুলোকে আলাদা করে ফেলা হয়। ফলে কোনো অবস্থাতেই এন্টিবায়োটিক আছে এমন দুধ মূল প্রসেসিং চ্যানেলে আসে না। আবার খামারের ভেতরেই ভুট্টাসহ অন্যান্য গোখাদ্য উৎপাদন করে তা সাইলেজ প্রক্রিয়ায় সারা বছর সংরক্ষণ করা হয়। পরে অত্যাধুনিক মেশিনে গো-খাদ্য প্রস্তুত করে সঙ্গে সঙ্গে খাওয়ানো হয় বলে গাভীর দেহে আফলাটক্সিন যেতে পারে না। ফলে দুধ থাকে আফলাটক্সিনমুক্ত। মূলত ফাঙ্গাসযুক্ত খাবারের মাধ্যমে গাভীর দেহে আফলাটক্সিন পৌঁছায়।

খামারের কর্ণধার এবং ইওন গ্রুপের চেয়ারম্যান মোমিন উদ দৌলা বলেন, বাংলাদেশে এটিই প্রথম অত্যাধুনিক দুগ্ধ খামার। তবে এটি কেবল শুরু মাত্র। দেশের খামারিরা তাদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার বাড়াচ্ছেন। আগামীতে এ খাত আরও আধুনিক হয়ে উঠবে। প্রতিবছর দেশে বিপুল পরিমাণ দুধ; বিশেষ করে গুঁড়া দুধ আমদানি করা হয়। যদিও বর্তমানে দেশে দুধ উৎপাদনের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। খামারগুলোর আধুনিকায়ন হলে দুধ উৎপাদন আরও বাড়বে। খুব শিগগিরই দেশ দুধ উৎপাদনে সাবলম্বী হয়ে উঠবে বলে আশা করছি।

তিনি আরও বলেন, ভোক্তা সাধারণের কাছে নিরাপদ দুধ পৌঁছানোর লক্ষ্যেই এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানটি সম্পূর্ণরূপে দুধ পাস্তুরিত করে থাকে, যেখানে কোনো হাতের স্পর্শ নেই। আগামী মাসের মধ্যেই আমরা বাকারা ব্র্যান্ডের নামে এ দুধ বাজারজাত করতে যাচ্ছি। পরবর্তী সময়ে দই, ঘি, পনির ও ফ্লেভারড মিল্কসহ অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্যও বাজারজাত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877