স্বদেশ ডেস্ক:
বর্তমানে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর বিল বকেয়া প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার। বছরের পর বছর এসব বিল বকেয়া পড়ে আছে। তবে কোভিড ১৯-এর কারণে এবার অনেক বেশি গ্যাস বিল জমা পড়েছে। বেশি পরিমাণ বিল বকেয়ার কারণে বিপাকে পড়েছে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো। বিদেশ থেকে আমদানি করা এলএনজি বিল, বিদেশি কোম্পানিগুলোর গ্যাস বিল পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে। গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো তাদের জমিয়ে রাখা এফডিআর ভাঙিয়ে বিল পরিশোধ করছে। এ অবস্থায় গ্যাস বিল আদায়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে জ্বালানি বিভাগ। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিল আদয়ে কঠোর অবস্থানে থাকার। এই কঠোর নির্দেশনা পালনে গ্যাস বিতরণ কোম্পানির কর্মীরা ছোট ছোট শিল্পমালিকদের ওপর কঠোর হলেও বড় শিল্পমালিকদের ধারেকাছেও যেতে পারছেন না।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আমদানি করা লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাসের (এলএনজি) বিল প্রতিমাসে কয়েক হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। এ ছাড়া যেসব বিদেশি কোম্পানি গ্যাস উত্তোলন করছে, তাদের কাছ থেকে কেনা গ্যাসের বিলও পরিশোধ করতে হচ্ছে। এসব বিল পরিশোধ গ্রাহকের বিল পাওয়ার ওপর নির্ভরশীল। এখন একসঙ্গে অনেক বিল জমা পড়ে যাওয়ায় সংকটে বিতরণ কোম্পানিগুলো। এ অবস্থায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে বিল আদায়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে বিল আদায়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার গ্যাসের বিলখেলাপিদের তালিকা করার নির্দেশ দিয়ে জ্বালানি বিভাগ বিতরণ কোম্পানিগুলোকে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির মতো প্রতিষ্ঠানকে খেলাপি গ্রাহকদের হালনাগাদ তালিকা করে দ্রুত তা মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। বকেয়া পরিশোধ না করলে সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণের কাজ নিয়মিত পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মনিটরিং করবেন। একই সঙ্গে জ্বালানি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (অপারেশন) এবং অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) তদারকি করবেন। বকেয়া বিল পরিশোধের বিষয়টি ছাড়াও অবৈধ গ্যাস সংযোগ ও গ্যাস পাইপলাইন অপসারণ মনিটরিং কমিটিও তদারকের কথা বলা হয়েছে।
তিতাস গ্যাস সূত্রে জানা যায়, তিতাসেরই গ্যাস বিল বকেয়া পড়েছে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা। বাকি বকেয়া অন্য বিতরণ কোম্পানিগুলোর। জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, করোনার কারণে বিল আদায় প্রক্রিয়ায় সংকট তৈরি হয়। কিছুটা শিথিলতাও ছিল। সেই সুযোগ ব্যবহার করে ব্যবসায়ীরা বিল দিচ্ছে না ঠিকমতো। কোভিড থাকলেও ব্যবসাবাণিজ্য ও কারখানা সবই চলছে। গ্যাসের ব্যবহার না হলে তো গ্যাস বিল হতো না। গ্যাস বিল আদায় না হলে এলএনজি আমদানি সংকটে পড়বে। ভেঙে পড়বে সরবরাহ ব্যবস্থা।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত অক্টোবর পর্যন্ত সরকারি বেসরকারি খাতের গ্রাহকদের কাছে প্রায় দশ হাজার কোটি টাকা বকেয়া জমেছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কাছে বকেয়া রয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকা। সরকারি কেন্দ্রগুলোর কাছে পাওনা ১ হাজার ৯৮ কোটি টাকা। বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর বকেয়া ১ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। সরকারি-বেসরকারি শিল্পমালিক যারা ক্যাপটিভ পাওয়ার ব্যবহার করেন, তাদের কাছে বকেয়া ১ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানে বকেয়া ৬৫ কোটি টাকা আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বকেয়া ১ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা।
সার কারখানাগুলোর কাছে বিতরণ কোম্পানিগুলো পাবে ২২৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কারখানা বাকি রেখেছে ৩৫ কোটি আর বেসরকারি সার কারখানায় বকেয়া ৯৩ কোটি টাকা। শিল্পখাতে গ্যাস বিক্রি বাবদ পাওনা রয়েছে ১ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেশি বকেয়া বেসরকারি শিল্পমালিকদের কাছে। এর পরিমাণ ১ হাজার ৬১১ কোটি টাকা। সরকারি কারখানায় বকেয়া জমেছে ৪৪ কোটি টাকা। বাণিজ্যিক খাতে বকেয়া ৯৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে হোটেল-রেস্টুরেন্ট মালিকরা ২১ কোটি টাকার বিল বাকি রেখেছেন। ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প উদ্যোক্তাদের বকেয়া জমেছে ৭৮ কোটি টাকা। আবাসিক খাতে বকেয়া বিলের পরিমাণ ২ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি খাতে বাকি বিলের পরিমাণ ৩৪৮ কোটি টাকা। বাসাবাড়ির মালিকদের কাছে পাওনা ২ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া সিএনজি স্টেশন মালিকরা ৮৫৪ কোটি টাকা আর চা বাগান মালিকরা ১০ কোটি টাকা বকেয়া রেখেছেন।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিতাসের এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, গ্যাস বিল বকেয়া থাকলেও বড় শিল্পমালিকদের কাছে আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো গুরুত্ব পায় না। কারণ এসব শিল্পমালিকের সঙ্গে সরকারের উচ্চপর্যায়ের লোকদের যোগাযোগ। ফলে কারও লাইন বিচ্ছিন্ন করতে গেলেই নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সর্বোচ্চ নিচের দিকে ছোট ছোট শিল্পমালিকদের গ্যাস বিল পরিশোধে চাপ দিতে পারে।