সোমবার, ২৬ মে ২০২৫, ০৮:২০ পূর্বাহ্ন

উপজেলা কেন টানতে পারেনি ভোটার

স্বদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৭ জুলাই, ২০১৯

স্বদেশ ডেস্ক: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ছয় মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের বর্জনের মধ্যে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচন জৌলুসহীন হয়ে পড়ার পাশাপাশি ভোটার উপস্থিতিও ছিল কম।

পাঁচ ধাপে অনুষ্ঠিত ৪৪৮ উপজেলা নির্বাচনে গড়ে ভোট পড়েছে ৪০ শতাংশ। ভোটের এ হার চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ে ২০ শতাংশ এবং তৃতীয় উপজেলা নির্বাচনের চেয়ে ২৭ শতাংশ কম, আর সদ্যসমাপ্ত সংসদ নির্বাচনের অর্ধেক।

বিএনপি ভোটে না থাকায় এবারের উপজেলা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। এ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক ৩ শতাধিক উপজেলায় জয়ী হলেও দলটির বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্ররা জিতেছেন অর্ধেক উপজেলায়।

এ ছাড়া জাতীয় পার্টির ৩ জন ও জেপির ১ জন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ৯৬ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। নির্বাচনের ফল পর্যালোচনায় এ তথ্য উঠে এসেছে। এ নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি নিয়ে সব মহলেই সমালোচনা হয়েছে।

জাতীয় সংসদে এই ভোটের সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। পঞ্চম ও শেষ ধাপের ভোটগ্রহণের পরের দিন ১৯ জুন জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনকে যথাযথ মর্যাদায় ফিরিয়ে আনার কাজটি আমাদের করতে হবে। কারণ রোগ এখন উপজেলা নির্বাচন পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। পাঁচ দফা উপজেলা নির্বাচনে আমাদের দলের অভিজ্ঞতা, এমনকি আওয়ামী লীগের নিজ দলের প্রার্থীদের অভিজ্ঞতা করুণ।

নির্বাচন কমিশন, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বলেও কোনো লাভ হচ্ছে না; বরং তাদের যোগসাজশ রয়েছে। ফলে নির্বাচন ও সামগ্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পর্কে জনমনে অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে জনগণ আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।

এটা নির্বাচনের জন্যই কেবল নয়, গণতন্ত্রের জন্যও বিপজ্জনক। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, এবারের উপজেলা নির্বাচনে সবচেয়ে আশঙ্কার দিক হচ্ছে ভোটারদের নির্বাচনবিমুখতা। একটি গণতান্ত্রিক দেশ ও জাতির জন্য নির্বাচনবিমুখতা অশনিসংকেত। এ নির্বাচনবিমুখতা জাতিকে গভীর খাদের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। যদিও এর দায় নিতে নারাজ নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

তৃতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ শেষে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ইসি সচিব বলেছিলেন, নির্বাচনে কত শতাংশ ভোট পড়ল, এটা নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। বিষয়টা হলো শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে কিনা। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হলেই আমরা সন্তুষ্ট।

গত ১০ মার্চ, ১৮ মার্চ, ২৪ মার্চ, ৩১ মার্চ ও ১৮ জুন পাঁচ ধাপে ৪৪৮টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ৯৬টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়। সব মিলিয়ে এ নির্বাচনে দেশের দুই-তৃতীয়াংশ উপজেলায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।

জানা গেছে, এই নির্বাচনের প্রথম ধাপে ভোটের হার ছিল ৪৩ দশমিক ৩২ শতাংশ; দ্বিতীয় ধাপে তা কমে দাঁড়ায় ৪১ দশমিক ২৫ শতাংশে। তৃতীয় ধাপে ৪১ দশমিক ৪১ শতাংশ, চতুর্থ ধাপে ৩৬ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং শেষ ধাপে ৩৮ দশমিক ৬২ শতাংশ ভোট পড়েছে।

সব মিলিয়ে পাঁচ ধাপে গড়ে ভোট পড়েছে ৪০.২২ শতাংশ। এটি একাদশ সংসদ নির্বাচনের অর্ধেক ভোটের হার। গত ৩০ ডিসেম্বরের ভোটে ৮০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন সিইসি। এর আগে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত আগের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে গড়ে ৬১ শতাংশ ভোট পড়ে।

২০০৯ সালের নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৬৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এবারের নির্বাচনে সর্বনিম্ন ভোট পড়েছে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় ৮.৬৩ শতাংশ, সর্বোচ্চ খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে ৭৯.৬৭ শতাংশ। প্রথম ধাপে ৭৯ উপজেলার মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৫৬ জন নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের মনোনয়নে; এর মধ্যে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৬ জন। ২৩ উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

দ্বিতীয় ধাপে ১২২ উপজেলার মধ্যে আওয়ামী লীগের ৭৪ জন নির্বাচিত হন; এর মধ্যে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২৩ জন। জাতীয় পার্টির ২ জন ও স্বতন্ত্র ৪৬ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তৃতীয় ধাপে ১২২ উপজেলায় আওয়ামী লীগের ৮৩ জন। এর মধ্যে ভোটে জিতেছেন ৫২ জন, বাকিরা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায়। জাতীয় পার্টির একজন, স্বতন্ত্র ৩৮ জন নির্বাচিত হন। চতুর্থ ধাপে ১০৬ উপজেলার মধ্যে আওয়ামী লীগের ৭৩ প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

এর মধ্যে ৪৯ জন ভোটে ও ২৪ জন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায়। জাতীয় পার্টি-জেপি থেকে চেয়ারম্যান পদে ১ জন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ৩২ জন ভোটে জিতেছেন এ ধাপে। পঞ্চম ধাপে ১৯ উপজেলার মধ্যে আওয়ামী লীগের ১০ প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন।

এর মধ্যে ৮ জন ভোটে ও ২ জন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায়। স্বতন্ত্র প্রার্থী ৯ জন ভোটে জিতেছেন। দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত এবারে নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের সাংসদদের সামাল দিতে হিমশিম খেয়েছে ইসি। সাংসদদের শুধু এলাকা ছাড়ার নোটিশ দিয়েছে সাংবিধানিক সংস্থাটি। জেল-জরিমানার বিধান থাকলেও আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। নির্বাচনকালে সংসদ সদস্যদের আচরণবিধি লঙ্ঘন অব্যাহত থাকায় স্পিকারের শরণাপন্ন হয়েছিল ইসি।

এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্পিকারের কাছে চিঠি দিয়েছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা। সব মিলিয়ে ২৩ জন এমপিকে এলাকা ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে একজন মন্ত্রীর এপিএসের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এ ছাড়া পক্ষপাতের দায়ে পুলিশের তিন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো সংবাদ