সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৩৯ অপরাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্রের ইলেক্টোরাল ভোট আজ

যুক্তরাষ্ট্রের ইলেক্টোরাল ভোট আজ

স্বদেশ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের ইলেক্টোরাল কলেজের ইলেক্টররা আজ সোমবার (বাংলাদেশ সময় সোমবার রাত) ইলেক্টোরাল ভোটে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে সভায় মিলিত হচ্ছেন। বহুল আলোচিত এই ইলেক্টোরাল ভোট আসলে সাধারণ ভোট (পপুলার) পরবর্তী প্রক্রিয়ার অংশ মাত্র। এই ভোট ভিন্ন ভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজ্যে অনুষ্ঠিত হবে। তবে বেশিরভাগ রাজ্যের রাজধানীতে আইনসভায় এই ইলেক্টোরালরা মিলিত হয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্য মিশিগান, পেনসিলভেনিয়া, উইসকনসিন ও জর্জিয়াসহ অনেক রাজ্য এই ভোট অনুষ্ঠান লাইভ সম্প্রচার করবে। কোনো রাজ্যে এই ইলেক্টোরাল ভোটের অনুষ্ঠান পূর্বাঞ্চলীয় সময় সকাল ১০টায় শুরু হবে।  আবার কোনো রাজ্যে তা বিকেল অথবা সন্ধ্যায়। তবে বেশিরভাগ রাজ্যে এই অনুষ্ঠান শুরু হবে দুপুরে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত জোসেফ বাইডেনের পক্ষে যে রাজ্য ২৭০ ইলেক্টোরাল ভোট যোগ করতে সবচেয়ে বেশি ৫৫টি ইলেক্টোরাল ভোট প্রয়োগ করবে সেই ক্যালির্ফনিয়ায় এই ইলেক্টোরাল ভোটের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে পূর্বাঞ্চলীয় সময় বিকেল ৫ টায়।

৫০টি রাজ্যের বাইরে ওয়াশিংটন ডিসিতেও এই ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ডেলাওয়ার রাজ্যের ইলেক্টোরাল ভোট দিতে রাজ্যের ইলেক্টররা একটি জিমনেশিয়ামে মিলিত হবেন।

নেভাদা একমাত্র রাজ্য যেখানে এবছর এই অনুষ্ঠান হবে ভার্চ্যুয়ালি। ইলেক্টররা তাদের অফিশিয়াল ব্যালট কাস্টিংয়ের মাধ্যমে এই ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এটি আসলে নির্বাচিত ইলেক্টরদের একটি গতানুগতিক কাজ। এ সকল ইলেক্টর গত ৩ নভেম্বরের পপুলার ভোটের সত্যায়ন করবেন। তবে এই ইলেক্টররা একটি পেপার ব্যালটের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টকে তাদের ভোট দেবেন। প্রত্যেক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর এই ১৪ ডিসেম্বর প্রতিটি রাজ্যের নির্বাচিত সম্মানিত ইলেক্টররা সভায় মিলিত হয়ে রাজ্যের পক্ষে এই আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। এখানে ৩৩টি রাজ্য ও ওয়াশিংটন ডিসির আইন হচ্ছে যে, প্রার্থী এসব রাজ্যের পপুলার অথাৎ জনগণের ভোটে জয়লাভ করবেন নির্বাচিত ইলেক্টররা সেই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর পক্ষেই তাদের ইলেক্টোরাল ভোট কাস্ট করবেন। কিন্তু ১৭টি রাজ্যের নির্বাচিত ইলেক্টরদের এই ধরনের বাধ্যবাধকতা নেই। মানে হচ্ছে, তারা চাইলে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নিজের ভোট দিতে পারেন।

তবে এ ধরনের ইলেক্টর পছন্দ করা হয় পার্টি থেকেই। যারা দলের কর্মী, সরকারি কর্মকর্তা, পার্টির বড় চাঁদাদাতা এবং এমন মানুষ যারা প্রার্থী এবং পার্টির সঙ্গে অত্যন্ত সুসম্পর্ক ও ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। আর যারা পার্টি লাইন ক্রস করে অন্য পক্ষের প্রার্থীকে ভোট প্রদান করেন তাদের বলা হয় ফেইথলেস ইলেক্টর বা বিশ্বাসঘাতক ভোটার। এই নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষে, বাইডেনের পক্ষের কোনো ইলেক্টর ভোট দিতে পারেন এমন বিশ্বাসঘাতক ভোটারের সংখ্যা একদম শূন্য বলেই নিউইয়র্ক টাইমস তাদের এক রিপোর্টে উল্লেখ করেছে।

ইলেক্টোরাল ভোটের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে রাজ্যের সেক্রেটারি অব স্টেট ও প্রধান ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট জজের উপস্থিতিতে ভোটের ফলাফলের শিটে ইলেক্টরদের স্বাক্ষর নিয়ে গভর্নরের কাছে সার্টিফিকেশন প্রসেসের জন্য পাঠিয়ে দেয়া হবে। গভর্নর সার্টিফিকেশনসহ খাম সিলগালা করে ভাইস প্রেসিডেন্ট বরাবর সিনেটে পাঠিয়ে দেবেন। আসছে জানুয়ারির ৬ তারিখে সিনেট ও কংগ্রেসের
যৌথ অধিবেশনে এই খাম খুলে ইলেক্টোরাল ভোট গণনা হবে প্রার্থীর পক্ষে। এই যৌথ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করবেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। মঞ্চে তার পাশে থাকবেন হাউস স্পিকার নেন্সি পেলোসি। এ সময় অধিবেশন কক্ষে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস ও সিনেটের সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন।

তবে কংগ্রেসের এবারের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই এই অধিবেশনে উপস্থিত থাকতে পারবেন। নতুন কংগ্রেসের শপথ অনুষ্ঠান হবে ৩ জানুয়ারি। এই ইলেক্টোরাল ভোট গণনাকালীন কোনো বিতর্কের অনুমোদন দেয়া হবে না। তবে ফলাফল প্রকাশের পর কোনো সদস্য চাইলে আপত্তি উত্থাপনের সুযোগ থাকবে। এক্ষেত্রে কোনো রাজ্যের ইলেক্টোরাল ভোট সম্পর্কে কারও আপত্তি জানাতে হলে একজন সিনেটের ও একজন কংগ্রেসম্যানের স্বাক্ষরে তা লিখিতভাবে জানাতে হবে। এরপর এ নিয়ে আলাদাভাবে সিনেটে এবং কংগ্রেসের ফ্লোরে বিতর্ক হবে। প্রত্যেক সদস্য ৫ মিনিট করে সময় পাবেন নিজের বক্তব্য তুলে ধরতে। এর ২ ঘন্টা পর তা ভোটে চলে যাবে। ডেমোক্রেটরা কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও সিনেটে রয়েছে রিপাবলিকান পার্টির আধিপত্য। জর্জিয়ার ২ অমীমাংসিত সিনেট আসন ছাড়াও ৫০ টি
সদস্য পদ রয়েছে রিপাবলিকানদের।
তখন ফ্লোরে উপস্থিত ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্সের টাই ব্রেকিং ভোটে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অক্ষুণ্ণ থাকবে যদি সিনেটে ৫০ বনাম ৫০ ফল দাঁড়ায় ভোটের। আশার কথা হচ্ছে, রিপাবলিকান কয়েকজন সিনেটর এই প্রক্রিয়ায় অংশ নাও নিতে পারেন বা ভোটদানে বিরত থাকতে পারেন।
১৮৮৭ সালে ইলেক্টোরাল কাউন্ট অ্যাক্ট পাস হবার পর মাত্র দুইবার ১৯৬৯ এবং ২০০৫ সালে এমন আপত্তি উত্থাপন হয়েছিল। এই ইলেক্টোরাল ভোট নিয়ে কোনোদিনই যুক্তরাষ্ট্রে কোনো উৎসাহ লক্ষ্য করা যায়নি। এমনকি এই ইলেক্টোরাল কলেজ সম্পর্কে আমেরিকার ভোটারের বেশিরভাগেরই তেমন কোনো ধারণা নেই। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী ফলাফল মানতে ক্রমাগত অস্বীকার ও একের পর এক মামলা দায়ের করার ফলে এ নিয়ে এবার একটি ভিন্ন রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যা এর আগে যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যক্ষ করেনি। যদিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এইসব মামলায় একের পর হেরে চলেছেন।এমনকি ইউএস সুপ্রিম কোর্টও তার নির্বাচন সংক্রান্ত দুটি মামলা ইতিমধ্যে খারিজ করে দিয়েছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877