স্বদেশ ডেস্ক:
স্বায়ত্তশাসিত উইঘুর অঞ্চল থেকে প্রখ্যাত তুর্কি দার্শনিক মাহমুদ খাশগারির ভাস্কর্য সরিয়ে ফেলেছে চীন। গত বছরের ২৮ নভেম্বরের পর থেকে স্যাটেলাইট চিত্রে তা আর দেখা যাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক রেডিও ফ্রি এশিয়ার (আরএফএ) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘চীনের উত্তর-পশ্চিমে জিনজিয়ান প্রদেশ কর্তৃপক্ষ মাহমুদ খাশগারির ভাস্কর্য সরিয়ে ফেলেছে।’
মাহমুদ খাশগারি একজন প্রখ্যাত দার্শনিক। একাদশ শতাব্দীতে ‘গ্র্যান্ড তুর্কি অভিধান’ সংকলন করেছিলেন তিনি। কাশগরে (চীনা কাশিতে) ওপাল জনপদের বাইরে একটি মাজারের আঙিনায় তার ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছিল।
৮০ দশকের শুরুর দিক থেকে বর্তমান সময় পর্যন্তও চীনের অনেক দার্শনিক ও গবেষক মাহমুদ খাশগারিকে নিয়ে অনেক গবেষণা করেছেন। তাকে নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে একাধিক প্রবন্ধ ও গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন চীনের গবেষকরা।
মাহমুদ খাশগারির মৃত্যুর স্থানটি ১৯৮০ সারের শুরুর দিকে উইঘুর মুসলিমদের অর্থায়নে সংস্কার করে একটি মাজার তৈরি করা হয়। সেখানে তার সাত মিটার লম্বা একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়। পরে তা চীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হয়ে ওঠে। দেশ ও বিদেশের অনেক পর্যটকরা এ স্থানটিতে ভ্রমণ করতে আসেন। কিন্তু সম্প্রতি স্যাটেলাইট চিত্রে উইঘুরদের ওই অঞ্চলে মুসলিম প্রখ্যাত দার্শনিকের ভাস্কর্যটি আর ধরা পড়ছে না।
গত বছর জিনজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় জার্নালে চীনা ভাষায় একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। নিবন্ধটি নৃতাত্ত্বিক হান অধ্যাপক গাও বো প্রকাশ করেন। তার ওই গবেষণা নিবন্ধে খাশগারি সম্পর্কে ঐতিহাসিক অনেক বিষয়কে সন্দেহমূলক দাবি করে আলোচনা উপস্থাপন করা হয়।
ওই নিবন্ধে চীনা গবেষক গাও বো খাশগারির ঐতিহাসিক জীবনী সম্পর্কে বিতর্ক উপস্থাপন করেন। তিনি দাবি করেন, ‘খাশগারি যে উইঘুর ছিলেন কিংবা ওপাল তার নিজের জন্মস্থান ছিল, এ ব্যাপারে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই।’
গাও বোর’র ওই নিবন্ধ প্রকাশ হওয়ার কয়েকমাস পরেই খাশগারির ওই ভাস্কর্যটি দেখা যাচ্ছে না। রেডিও ফ্রি এশিয়া স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ওই স্থানটি জুম ইন করে দেখার চেষ্টা করেছে। কিন্তু গত বছরের ২৮ নভেম্বরের পর থেকে স্যাটেলাইটে ওই স্থানটিতে সেটি দেখা যাচ্ছে না।
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দার্শনিকদের মধ্যে অন্যতম মাহমুদ খাশগারি। উইঘুর মুসলিম ও তুর্কিদের কাছে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ তিনি। পৃথিবী জুড়ে এখনো তাকে নিয়ে গবেষণা হয়। উইঘুর সম্প্রদায় তাদের জীবনের অংশ হিসেবে সম্মান প্রদর্শন করেন খাশগারির প্রতি। ২০১০ সালে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেট দাভুতোগলু ওই মাজারটি ভ্রমণ করেন।
তুরস্কের ইজমিরের এজ বিশ্ববিদ্যালয়ের তুর্কি ওয়ার্ল্ড স্টাডিজ সেন্টারের অধ্যাপক আলিমঞ্জন এনায়েত ভাস্কর্যটি অপসারণের ঘটনাকে উইঘুর এবং সমস্ত তুর্কি জনগণের ওপর মারাত্মক আঘাত বলে অভিহিত করেন।
রেডিও ফ্রি এশিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওই অধ্যাপক বলেন, ‘মাহমুদ খাশগারি তুরস্কের ইতিহাস ও সংস্কৃতির পিতামহ। তিনি তুরস্কের গৌরব। ওই ভাস্কর্য ধ্বংস করে চীন তুরস্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এটি তুরস্কের জনগণের বিশ্বাসের ওপর চরম আঘাত।’
অধ্যাকপ এনায়েত উল্লেখ করেন, ১৯৪৯ উইঘুরদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই চীন সরকার প্রতিনিয়ত উইঘুর সংস্কৃতি আক্রমণ করেছে এবং উইঘুর জনগণ ও তাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে সম্পর্ক ছিন্ন করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, ‘শতশত উইঘুর স্থাপত্য ধ্বংস, বুদ্ধিজীবীদের কারাগারে বন্দী রাখা, ঐতিহাসিক শত শত অবকাঠামো ধ্বংস করা উইঘুরদের প্রতি চীন সরকারের একটি সুস্পষ্ট ষড়যন্ত্র।’
এ বিষয়ে ওয়াশিংটনভিত্তিক উইঘুর মানবাধিকার প্রকল্পের (ইউএইচআরপি) গবেষণা পরিচালক হেনরিক সাজাডজিউভস্কির সঙ্গে কথা বলেছে রেডিও ফ্রি এশিয়া। হেনরিক সাজাডজিউভস্কি বলেন, ‘বিংশ শতাব্দীতে ফ্যাসিবাদী শাসনের মাধ্যমে চীন বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীকে জাতিগতভাবে দমন-নিপীড়ন চালাচ্ছে।’