স্বদেশ ডেস্ক: শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রামে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ প্রবল হয়ে উঠেছে। ক্রমেই বাড়ছে শনাক্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৫৭২ জনের নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছেন ২৩৩ জন। মারা গেছেন দু’জন। আইসিইউ সংকটে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে বরাবরের মতো অভিযোগ স্বজনদের।
অনুসন্ধানেও মিলেছে আইসিইউ সংকটের তথ্য। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ সরকারি-বেসরকারি সবক’টি হাসপাতালে প্রথম ঢেউয়ের মতো আইসিইউ’র হাহাকার শোনা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে চোখ কপালে তোলার মতো বিল বানিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ উঠেছে।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী বলেন, আইসিইউ জরুরি এমন রোগীর সংখ্যা ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকে বাড়তে থাকে। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্বাসকষ্টজনিত রোগী হু হু করে বাড়ছে। এর মধ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যাও আগের চেয়ে অনেক বেশি। ফলে আইসিইউ শয্যা নিয়ে টানাপড়েন চলছে। এমনও হয়েছে সকালে সিট খালি হলেও সন্ধ্যায় আবার ফিলআপ হয়ে গেছে।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেয়া তথ্য মতে, চট্টগ্রামে সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা রয়েছে ৩০টি। যদিও এর মধ্যে হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালের ১০টি আইসিইউতে ভেন্টিলেটর সুবিধা নেই। সেই সিটগুলোতে গত কয়েক মাসে একজন রোগীও ভর্তি হননি। বাকি ২০টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে সবক’টিতে রোগী ভর্তি আছে।
অন্যদিকে নগরীর বেসরকারি হাসপাতালগুলোর ১৩২টি আইসিইউ শয্যার বিপরীতে সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী ৬৩ জন কোভিড রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাকিগুলোতেও শ্বাসকষ্টজনিত রোগী ভর্তি রয়েছে। ফলে আইসিইউ সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বী।
বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ সেবা অত্যন্ত ব্যয়বহুল দাবি করে অনাগত সময়ের কথা ভেবে সরকারি হাসপাতালগুলোর আরো সক্ষমতা বৃদ্ধির দাবি তুলছেন স্বাস্থ্যসেবা খাতের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিবর্গ। সামান্য একটু উদ্যোগ নিলে অল্প সময়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য আরো ৮টি ডেডিকেটেড আইসিইউ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. অসীম কুমার নাথ এ প্রসঙ্গে বলেন, ৮টি আইসিইউ সিট হাসপাতালে সেটআপ করা আছে। আদালতের নির্দেশ থাকার পরও সেগুলো চালু করা যাচ্ছে না। শুধুমাত্র ৮টি মনিটর আর লোকবল নিয়োগ দিলে দু-একদিনের মধ্যেই এই ৮টি শয্যা চালু করা সম্ভব। তবে করোনার চিকিৎসায় আইসিইউ খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয় জানিয়ে তিনি বলেন, করোনায় অক্সিজেন আর হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা সবচেয়ে বেশি দরকার। সেসব ক্ষেত্রে আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। চট্টগ্রামে এখন করোনা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। শনাক্তের হার কিছুদিন ধরেই বাড়ছে। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর সর্বোচ্চ জোর দিতে হবে।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১ হাজার ৫৭২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৩৩ জন করোনা শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ২০৭ জন নগরের ও ২৬ জন উপজেলার বাসিন্দা। এ নিয়ে চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত শনাক্ত ২৬ হাজার ৬৪৩ জন। যার মধ্যে ২০ হাজার ২৬৩ জন নগরের, ৬ হাজার ৩৮০ জন উপজেলার বাসিন্দা। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে করোনায় দু‘জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগের দিনও দুইজন মারা গেছেন। এ নিয়ে করোনায় মারা গেছেন মোট ৩২৪ জন। এর মধ্যে ২২৯ জন নগরের ও ৯৫ জন উপজেলার বাসিন্দা।