স্বদেশ ডেস্ক: মহামারির মধ্যে বড়দিনকে ঘিরে পোশাক রপ্তানি বাড়বে বলে আশায় ছিলেন তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা। কিন্তু রপ্তানি খাতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব শুরু হওয়ায় গত নভেম্বরে প্রধান পণ্য তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমেছে ৬ শতাংশের বেশি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, নভেম্বরে ২৩৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৫১ কোটি ডলার। উদ্যোক্তাদের শঙ্কা, সামনে আরো খারাপ দিন আসছে। আগামী মৌসুমকে কেন্দ্র করে হাতে রপ্তানি আদেশ অনেক কম। তাদের মতে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে রপ্তানি নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। পশ্চিমের অনেক দেশে আংশিক লকডাউন শুরু হয়েছে।
সূত্র জানায়, একটি তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ফ্রান্সভিত্তিক একটি বিখ্যাত ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ৬০ লাখ পিস প্যান্ট নেয়ার আদেশ দিয়েছিল। সব পণ্য প্রায় প্রস্তুত। এ অবস্থায় ক্রেতা প্রতিষ্ঠান পণ্য জাহাজিকরণের তারিখ এক মাস পিছিয়েছে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের শঙ্কায় রপ্তানি কমার পাশাপাশি নতুন রপ্তানি আদেশও কমেছে। এক অনুষ্ঠানে বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, বিশ্ববাজারে পোশাকের চাহিদা কমেছে ৬০ শতাংশ। রাতারাতি এই চাহিদা পূরণ হওয়া সম্ভব নয়। শিগগিরই রপ্তানিতে গতি ফেরার সম্ভাবনা কম।
সাধারণত রপ্তানি পরিস্থিতির আগাম চিত্র পাওয়া যায় ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশনের (ইউডি) তথ্যে বিজিএমইএ’র তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে ইউডি গত তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। ইউডি’র পরিসংখ্যানেই আগামী মাসগুলোর রপ্তানি চিত্রের আগাম ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ তথ্যে দেখা গেছে, অক্টোবরে ধাক্কার পর নভেম্বরে ফের প্রবৃদ্ধিতে ফিরেছে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক রপ্তানি আয়। আর চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ যে আয় করেছে, তার ৪৫ শতাংশই এসেছে নিট পোশাক থেকে।
ইপিবি’র তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের এই ৫ মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১ হাজার ২৮৯ কোটি ৪৫ লাখ (১২.৮৯ বিলিয়ন) ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১.৪৮ শতাংশ কম। তবে নিট পোশাক রপ্তানিতে উল্লম্ফন হয়েছে। মোট পণ্য রপ্তানির ৪৫ শতাংশই এসেছে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে। এই ৫ মাসে ৭১৩ কোটি ৬৩ লাখ (৭.১৩ বিলিয়ন) ডলারের নিট পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা লক্ষ্যের চেয়ে ৮.৫ শতাংশ এবং গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৫ শতাংশ বেশি। জুলাই-নভেম্বর সময়ে নিট পোশাক রপ্তানির লক্ষ্য ছিল ৬৮০ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ৬৫৭ কোটি ৮১ লাখ ডলার। এই ৫ মাসে উভেন পোশাক রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৫৭৫ কোটি ৮৩ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮.২৯ শতাংশ এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৪.৪৪ শতাংশ কম।
বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, আশা ছিল ২৫শে ডিসেম্বরের বড়দিনকে সামনে রেখে পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াবো। কিন্তু এখন আর সেটা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দেশে নতুন করে লকডাউন শুরু হয়েছে। নতুন অর্ডারও তেমন দিচ্ছে না। বায়াররা অতি প্রয়োজনীয়, যেগুলো না হলেই নয়, তেমন পোশাক কিনছেন।