শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:২২ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ফিলিস্তিন সমস্যার ন্যায্য ও স্থায়ী সমাধান চায় চীন বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ১৫ সদস্যের দলে যাদের রাখলেন ওয়াকার দীর্ঘ বিরতি শেষে বলিউডে ফিরছেন প্রীতি জিনতা রোহিঙ্গা ইস্যুতে একসাথে কাজ করবে ঢাকা-ব্যাংকক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী গরমে পোষা প্রাণীর যত্ন দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না : কাদের সাহারা মরুভূমির গরমের মতো অনুভূত হচ্ছে : সরকারকে দায়ী করে রিজভী থাইল্যান্ড সফরকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক বললেন প্রধানমন্ত্রী চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ৭৩ জনকে বহিষ্কার করলো বিএনপি
জর্জিয়ার রানঅফ নির্বাচনঃ সিনেট নিয়ন্ত্রণে মর্যাদার লড়াই

জর্জিয়ার রানঅফ নির্বাচনঃ সিনেট নিয়ন্ত্রণে মর্যাদার লড়াই

স্বদেশ ডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতেই জর্জিয়ার সিনেট নির্বাচন জমে উঠেছে। সিনেটের এই রানঅফ নির্বাচন পরিনত হয়েছে মর্যাদার লড়াইয়ে। নানা কারণে এবার আলোচনায় আসা জর্জিয়া এখন সকল আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান দুই পক্ষই সিনেটের নিয়ন্ত্রণ নিতে এই দুটি আসনে জয় পেতে মরিয়া। ইতিমধ্যে প্রায় এক মিলিয়ন ভোটার আগাম ভোট দিতে এবসেন্টি ব্যালটের অনুরোধ পাঠিয়ে দিয়েছেন জর্জিয়ার নির্বাচন কতৃপক্ষের কাছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মতো ডাকযোগে ব্যালটের স্রোত দেখে মাথায় হাত পড়েছে রিপাবলিকান শিবিরের। আগামী ৫ জানুয়ারি এই রানঅফ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তবে এর সবকিছু নির্ভর করছে জর্জিয়ার ভোটারদের মেজাজ-মর্জির উপর।

তারা কি যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যত ডেমোক্রেট পার্টির উপর ছেড়ে দেবে না ক্ষমতার কেন্দ্রে ভারসাম্য বজায় রাখবে তা বলা মুশকিলএখন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাচনী ফলাফল মানতে অনীহা ও জর্জিয়ার রিপাবলিকান নেতৃত্বের উপর চাপ সৃষ্টি ভোটাদের মাঝে প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করা হচ্ছে। পক্ষান্তরে রিপাবলিকানদের তুলনায় ডেমোক্রেটরা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন এমনটা বলছেন পর্যবেক্ষকরা। ১শ আসনের মার্কিন উচ্চকক্ষ সিনেটে এখন রিপাবলিকানদের আসন হচ্ছে ৫০ এবং প্রতিপক্ষ ডেমোক্রেট পার্টির আসন ৪৮।
বাইডেনকে হোয়াইট হাউসে নিবিঘ্ন ভাবে কাজ করতে প্রয়োজন সিনেটের সার্বিক সহযোগিতা। আর এর জন্য দরকার সিনেটে ডেমোক্রেটদের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা। ডেমোক্রেটরা জর্জিয়ার দুটি সিনেট আসনে বিজয় পেলে সিনেটে অনুপাত হবে ৫০;৫০। তখন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের টাই ব্রেকিং ভোটের জোরে ডেমোক্রেটরা সিনেটে তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
অন্যদিকে,রিপাবলিকানরা চাইছে অত্যন্ত ১টি আসন হলেও জিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অক্ষুণ্ণ রাখতে। জর্জিয়ার এ দুটি সিনেট আসনে গত ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে কোন প্রার্থী ৫০ ভাগ ভোট না পাওয়ায় এই নির্বাচন রানঅফ ঘোষণা করা হয়। জর্জিয়া রাজ্যের আইন অনুযায়ী বিজয়ী হতে কাষ্টিং ভোটের শতকরা ৫০ ভাগ ভোট পেতে হয় সিনেটের প্রার্থীদের।
একটি আসনে ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান সিনেটর ডেভিড প্রারডু তাঁর অর্ধেকেরও কম বয়সী চ্যালেঞ্জার জন অসফের মোকাবিলা করছেন।
৭০ বছরের প্রারডুর বিরুদ্ধে লড়ছেন ৩৩ বছরের ডেমোক্রেট জন অসফ। অন্য আসনে গভর্নর কর্তৃক দুই বছর আগে নিয়োগ পাওয়া বর্তমান সিনেটের কেলী লাফলার মুখোমুখি হচ্ছেন ডেমোক্রেট রাফায়েল ওয়ারনকের সাথে। দীর্ঘ ২৫ বছর যাবৎ আটলান্টায় একজন কৃষ্ণাঙ্গ ধর্ম যাজক হিসাবে কাজ করা রাফায়েল ৩ নভেম্বর লাফলারের চাইতে বেশী ভোট পেলেও ৫০ ভাগের মার্জিন অতিক্রম করতে ব্যার্থ হন।
এদিকে,সিনেটর ডেভিড প্রারডুর শেয়ার কেলেঙ্কারি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ও এফবিআই তদন্ত চালালেও তাঁর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আনা হয়নি।
প্রারডুর বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি পেনডামিক শুরু হওয়ার ঠিক আগে রাষ্ট্রীয় গোপনীয় ব্রিফিংয়ে অর্থনৈতিক মন্দার পূর্বাভাস পেয়ে তাঁর শেয়ার বিক্রি করে ফেলেন। আটলান্টা ভিত্তিক ফাইন্যান্সিয়াল টেকনলজি কোম্পানি কার্ডিলিক্সের ১ মিলিয়ন ডলার মূল্যের শেয়ার ছিল প্রারডুর। তবে ডেভিড প্রারডু অনৈতিক কিছু করেননি বলে দাবী করেন।
প্রারডু জন অসফের সাথে আগামী ৬ ডিসেম্বর একটি বিতর্কে অংশগ্রহণ করতে অসম্মতি জানিয়েছেন। আটলান্ট প্রেসক্লাব এই বিতর্কের আয়োজন করেছে। তবে লাফলার এই বিতর্কে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী রাফায়েলের মোকাবিলায় অবতীর্ণ হবেন। জন অসফ প্রারডুর সমালোচনা করে পালিয়ে না থেকে সামনে আসার আহবান জানিয়েছেন।
গত ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে ডেভিড প্রারডু ২৪ লক্ষ ৬২ হাজার ৬শ ১৭ অথাৎ ৪৯ পয়েন্ট ৭ শতাংশ ভোট ও জন অসফ ২৩ লক্ষ ৭৪ হাজার ৫ শ ১৯ অথাৎ ৪৭ পয়েন্ট ৭ শতাংশ ভোট লাভ করেন। অন্যদিকে,রাফায়েল ওয়ারনক ১৬ লক্ষ ১৭ হাজার ৩৫ অথাৎ ৩২ পয়েন্ট ৯ শতাংশ ও লাফলার ১২ লক্ষ ৭৩ হাজার ২ শ ১৪ অথাৎ ২৫ পয়েন্ট ৯ শতাংশ ভোট পান। রিপাবলিকান শিবিরে জর্জিয়া এখন এক ভয়ানক দুস্বপ্নের নাম। দীর্ঘ ২৮ বছর এক নাগাড়ে জর্জিয়ানরা রিপাবলিকান পার্টিকে ভোট দিয়ে এলেও এবার লাল বৃত্ত ভেঙে বেরিয়ে এসেছে। রাজ্য জুড়ে বইছে নীল হাওয়ার ঝড়। আর এই পরিবর্তনের মূলে রয়েছেন উদীয়মান ডেমোক্রেট তারকা কৃষ্ণাঙ্গ নারী স্ট্রেসি আব্রাহাম। ২০১৮ সালে মিডটার্ম নির্বাচনে রাজ্যের গভর্নর পদে লড়ে সামান্য ব্যবধানে বর্তমান রিপাবলিকান গভর্নর ব্রায়ান ক্যাম্পের কাছে হেরে যান। স্ট্রেসি জর্জিয়াকে খোলে-নলচে পাল্টে দেন। তিনি জর্জিয়ার তৃণমূল পর্যায়ে ডেমোক্রেট পার্টিকে সংগঠিত করতে তাঁর নিজের হাতে গড়া সংগঠন ফেয়ার ফাইটের মাধ্যমে কাজ শুরু করেন। যার ফসল এবার বিজয়ের মধ্যদিয়ে ঘরে তুলে আনলো ডেমোক্রেটরা। এই ষ্ট্রেসি আব্রাহাম এখন রিপাবলিকানদের শিরপিড়ার কারণ।
আসছে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ইতিমধ্যে এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৯ লক্ষ ৪০ হাজারের বেশী এবসেন্টি ব্যালটের অনুরোধ পাঠিয়েছেন ভোটাররা। রিপাবলিকান
পার্টির নেতৃত্বকে যা রীতিমত ভাবিয়ে তুলেছে। এরমধ্যে সাউথ ক্যারোলিনায় ফান্ড রাইজিংয়ে রেকর্ড সৃষ্টিকারী ডেমোক্রেট সিনেট প্রার্থী ও হাই প্রোফাইল সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামকে চ্যালেঞ্জ জানানো জ্যামি হ্যারিসন তাঁর পাশের রাজ্য জর্জিয়ার রানঅফ নির্বাচনের জন্য একটি আলাদা ফান্ড গঠনের কাজ শুরু করেছেন।
জর্জিয়ায় জো বাইডেন,বারাক ওবামা সহ হাই প্রোফাইল ডেমোক্রেট নেতৃবৃন্দ তাঁদের প্রার্থীদের প্রচার কাজে শরিক হবেন আসছে দিনে। অপরদিকে রিপাবলিকান পার্টির শীর্ষ নেতৃত্ব প্রচারনায় অংশ নেবেন। এরমধ্যে থাকতে পারেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও।
সিনেট জুডিশিয়ারী কমিটির চেয়ারপারম্যান লিন্ডসে গ্রাহাম ফক্স নিউজের সাথে এক ইন্টারভিউয়ে বলেন,জর্জিয়ার রানঅফ নির্বাচন রিপাবলিকানদের জন্য দুস্বপ্নের কারণ হয়ে উঠছে। ডেমোক্রেটরা যদি জর্জিয়ার আসন দুটি জিতে নেয় তবে আমেরিকার ব্যালেন্স অব পাওয়ার অথাৎ ক্ষমতার ভারসাম্য মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে। সিনেটের মেজরেটি লিডার মিচ ম্যাককর্ণেল তাঁর নেতৃত্ব হারাবেন। সমাজতন্ত্রী বার্নি সেন্ডার্স সিনেটে বাজেট কমিটির চেয়ারপারম্যান নির্বাচিত হবেন। ডেমোক্রেটরা হাউস,সিনেট,প্রেসিডেন্সি সব ক্ষমতা পেয়ে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করবে।
এমনকি ডেমোক্রেটরা ইউএস সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান ব্যাবস্হায় ও পরিবর্তন আনবে। ইউএস সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের সংখ্যা ৯ থেকে বাড়িয়ে ১৩ তে উন্নীত করতে পারে। রিপাবলিকানরা এই অবস্থা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারেন না।
সিনেটর গ্রাহাম জর্জিয়ার রানঅফ নির্বাচনে সকল রক্ষনশীলদের এগিয়ে আসার আহবান জানান। তিনি নিজের নির্বাচনী তহবিল থেকে জর্জিয়ার রানঅফ নির্বাচনে ১ মিলিয়ন ডলার অনুদান প্রদানের ঘোষনা দিয়ে বলেন,প্রয়োজনে আমি এই অনুদান ডবল করে দেব। তবে ফান্ড রাইজিংয়ের পাশাপাশি এব্যাপারে পার্টির সবাইকে একযোগে এখনই কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877