স্বদেশ ডেক্স: বাংলাদেশে আজ থেকে হজ যাত্রীদের জন্য প্রথমবারের মত প্রি-ইমিগ্রেশনের সেবা চালু হওয়ার কথা থাকলেও সার্ভার জটিলতায় তা সম্ভব হয়নি।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র জনসংযোগ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বিবিসি বাংলাকে এই তথ্য জানিয়েছেন।
‘আজকের মধ্যে এটি সমাধান করা সম্ভব হবে কি-না সে সম্পর্কেও এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না,’ জানিয়েছেন তিনি।
হজ সেবা উন্নয়নের জন্য ‘ভিশন ২০৩০’ গ্রহণ করেছে সৌদি আরব। এটির অধীনে পরিচালিত ‘মক্কা রুট ইনিশিয়েটিভ ফ্রেমওয়ার্ক’ কর্মসূচীর আওতায় ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এই সেবা দেয়া শুরু হওয়ার কথা ছিল।
২০১৮ সালে সর্ব প্রথম এই কর্মসূচীর আওতায় নিজেদের হজ যাত্রী সেবা দেয়া শুরু করে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া।
আর এবছর এই সেবা চালু হচ্ছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মুহাম্মদ আব্দুল হামিদ জমাদ্দার বলেছেন, ‘এসব দেশে প্রি-ইমিগ্রেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অর্থাৎ যে কষ্টটা হাজীরা জেদ্দায় করতো টা না করে ঢাকাতেই ইমিগ্রেশন করা যাবে। বিষয়টা এমন যে ঢাকায় মক্কার একটা অফিস থাকবে, যেটা এই সেবা দেবে।’
এবছর বাংলাদেশ থেকে মোট হজ যাত্রীর সংখ্যা প্রায় এক লাখ ২৬ হাজার। এর মধ্যে ৬০-৬৫ হাজার যাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছানোর আগেই ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনের সুযোগ পাবেন, মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে।
বিবিসি বাংলাকে মিস্টার জমাদ্দার বলেন, এরই মধ্যে সৌদি আরবের কর্মকর্তারা বাংলাদেশে এসেছেন। বিমানবন্দরে ১৫-১৬ টা কাউন্টার খোলা হয়েছে।
হাজীরা কী সুবিধা পাবেন?
এয়ারপোর্টে নামলে জেদ্দাতে হজ যাত্রীদের সাধারণত লম্বা লাইন থাকে।
জমাদ্দার বলেন, ‘ঢাকা থেকে রওয়ানা হওয়ার পর ৭-৮ ঘণ্টা সফর করে জেদ্দায় পৌঁছান এহরাম বাঁধা অবস্থায়। সেখানে বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন শেষ হতে লাগে আরো ৭-৮ ঘণ্টা।’
‘আর সেখান থেকে মক্কায় যেতে আরো ৩-৪ ঘণ্টা লাগে। সব মিলিয়ে একজন হাজীকে প্রায় ২৪-২৫ ঘণ্টা রাস্তায় থাকতে হয়। যেটা খুবই ভোগান্তির,’ বলেন তিনি।
সেই ভোগান্তি এবার দূর হবে বলে আশা করছেন তিনি।
ঢাকায় ইমিগ্রেশন শেষে এহরাম বেঁধে বিমানে উঠে জেদ্দায় পৌঁছানোর পরেই লাগেজ নিয়ে কোন ধরণের প্রক্রিয়ার সম্মুখীন না হয়েই নিজস্ব গন্তব্যে যেতে পারবেন হাজীরা, বলেন তিনি।
প্রি-অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশনে কী থাকছে?
প্রি-অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ঢাকা বিমানবন্দরে হাজীদের যেসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে, তা হল-
•হাতের ১০ আঙুলের ছাপ গ্রহণ
•পাসপোর্ট স্ক্যান
•ছবি তোলা
•লাগেজে নির্দিষ্ট রঙের স্টিকার লাগানো
•ঢাকা হজ ক্যাম্পে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে ভ্রমণকারী হজ যাত্রীদের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা
•বিমান বন্দরের মূল টার্মিনালে সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সে ভ্রমণকারী হজ যাত্রীদের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা
•সর্বশেষ বিমানবন্দরের ১১ নম্বর গেটে স্থাপিত সৌদি আরবের প্রি-অ্যারাইভ্যাল ইমিগ্রেশন কাউন্টারে সৌদি ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা
এসব কাজ সম্পন্ন করতে হজ যাত্রীদের ফ্লাইটের ৮ ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে।
সব ফ্লাইটের হজ যাত্রীরা এই সেবা এবছর পাবেন না। বাংলাদেশ বিমান ও সৌদি এয়ার লাইন্সের সাথে বৈঠকের পর ধর্ম মন্ত্রণালয় এবার ১৪৮ টি ফ্লাইট নির্ধারণ করেছেন যার যাত্রীরা এবছর এই সুবিধা পাবেন। এরই মধ্যে তাদের তালিকা প্রকাশ করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
এসব ফ্লাইট কিভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তর মিস্টার জমাদ্দার বলেন, “ফ্লাইটের সময়ে পার্থক্যের ভিত্তিতে এই ফ্লাইটের এই তালিকা নির্ধারণ করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, ‘একটা ফ্লাইট থেকে আরেকটা ফ্লাইটের যাত্রীদের ইমিগ্রেশন করতে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা লেগে যায়। কারণ প্রতিটি ফ্লাইটে ৪১৯-২০ জন যাত্রী থাকেন।’
‘তাই যেসব ফ্লাইটের মাঝে সাড়ে তিন বা চার ঘণ্টার বিরতি রয়েছে সে সব ফ্লাইটের হাজীরাই এই সুবিধা পাবেন।’
এবছর সব হজ যাত্রীদের এই সুবিধা দেয়া না গেলেও আগামী বছর এই সেবার পরিধি বাড়ানো হতে পারে বলে তিনি জানান।