মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩৫ পূর্বাহ্ন

মন্দঋণে জর্জরিত ব্যাংক খাত

মন্দঋণে জর্জরিত ব্যাংক খাত

স্বদেশ ডেস্ক:

বছর দুই আগে ব্যাংক খাতে মন্দঋণ ছিল প্রতি ১০০ টাকা খেলাপি ঋণের ৮৩ টাকা। আর দুই বছরের মাথায় এসে তা বেড়ে হয়েছে ৮৭ টাকা। গত দুই বছরে ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে এ আদায় অযোগ্য ঋণ। মন্দঋণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংক সম্পদের গুণগত মানও কমে যাচ্ছে। এসব ঋণ আদায়ের জন্য ব্যাংককে আদালতে যেতে হচ্ছে। এতে বেড়ে যাচ্ছে ব্যাংকের পরিচালনব্যয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতি তিন মাস অন্তর আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ প্রতিবেদনে ব্যাংকের সামগ্রিক আর্থিক হালনাগাদ চিত্র তুলে ধরা হয়। গত জুনভিত্তিক তথ্য নিয়ে তৈরি এ প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত দুই বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে কুঋণ।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৮ সালের জুন শেষে ব্যাংকিং খাতে মন্দ মানের খেলাপি ঋণ ছিল প্রতি ১০০ টাকায় ৮৩ টাকা। ওই বছর ডিসেম্বরে এসে তা বেড়ে হয় ৮৫ দশমিক ৯ শতাংশ। গত বছর মার্চ শেষে তা বেড়ে হয় ৮৬ শতাংশ। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এসে তা আরো বেড়ে হয় সাড়ে ৮৬ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে কুঋণ আরো বেড়ে হয় ৮৬ দশমিক ৮ শতাংশ। সর্বশেষ গত জুনে এসে হয় ৮৭ শতাংশ।

প্রচলিত নিয়মানুযায়ী খেলাপি ঋণ তিন ধরনের। কোনো ঋণ পরপর তিন মাস আদায় না হলে ওই ঋণকে নি¤œমানের খেলাপি ঋণ বলা হয়। কিন্তু ওই ঋণ পরপর ছয় মাস আদায় না হলে হয় সন্দেহজনক খেলাপি ঋণ। আর কোনো ঋণ পরপর ৯ মাস আদায় না হলেই ওই ঋণকে কুঋণ বা মন্দ মানের খেলাপি ঋণ বলা হয়।

সাধারণত কোনো ঋণ মন্দ মানের খেলাপি হলে ওই ঋণকে আদায় অযোগ্যও বলা হয়। এসব ঋণ আদায়ে ঝুঁকি থাকে বেশি। এ কারণে মন্দ মানের খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। প্রভিশন হলো ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ মুনাফা করবে তা খরচ না করে মন্দ ঋণের বিপরীতে জামানত রাখা। কারণ, ব্যাংক যে ঋণ প্রদান করে থাকে ওই অর্থ সাধারণ আমানতকারীদের অর্থ। সাধারণ আমানতকারীদের অর্থ ঝুঁকিমুক্ত রাখতেই মন্দ মানের খেলাপি ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ব্যাংকের খেলাপি ঋণের বেশির ভাগই মন্দ মানের। কারণ ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এ কারণে ঋণখেলাপিরা বছরের পর বছর ঋণ পরিশোধ না করে পার পেয়ে যাচ্ছেন। রাঘববোয়াল ঋণখেলাপিদের দেখাদেখি অন্যরাও ঋণ পরিশোধে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ছেন। এ কারণেই ব্যাংকিং খাতে মন্দ মানের খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে।

অপর দিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো মন্দ মানের খেলাপি ঋণ তিন বছরের বেশি অতিবাহিত হলে ওই ঋণকে অবলোপন করতে হয়। অবলোপন হলে খেলাপি ঋণের হিসাব থেকে আলাদা করে ব্যাংকের অন্য হিসাবে রাখতে হয়। ওই ঋণ আদায়ের জন্য ব্যাংককে মামলা করতে হয়। মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে ব্যাংকের বাড়তি ব্যয় হয়। ব্যাংক খাতের জন্য মন্দ মানের খেলাপি ঋণ একপর্যায়ে শাখের করাত হয়। এভাবে আদালতে ব্যাংকের প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা মামলার জালে আটকে আছে।

ব্যাংকাররা জানান, মন্দ মানের খেলাপি ঋণ কমাতে হলে রাঘববোয়াল ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় ব্যাংকিং খাত মন্দ ঋণের অভিশাপ থেকে বের হতে পারবে না বলে মনে করছেন তারা।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877