স্বদেশ ডেস্ক: মানমন্দির কী, কেন নির্মাণ করা হয়, কী এর মাহাত্ম্য-সে ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা হয়তো নেই। কর্কটক্রান্তি কিংবা দ্রাঘিমা ছেদবিন্দুর বিস্তারিত জানেন সবাই, তাও না। এর পরও বঙ্গবন্ধু মানমন্দির ও পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের খবরে উৎসাহ-উদ্দীপনার কমতি নেই ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার নুরুল্লাগঞ্জ ইউনিয়নের ভাঙ্গারদিয়া গ্রামের বাসিন্দাদের। প্রত্যন্ত এই গ্রামের বিল ধোপাডাঙ্গা মৌজার আবাদি জমিতে দেশের প্রথম মানমন্দির নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সম্প্রতি এ তথ্য সামনে আসার পর আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকেও প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক মানুষ আসছেন এই স্থানটি দেখতে।
স্থানীয়দের এমন উচ্ছ্বাসকে বাড়াবাড়ি বলার সুযোগ নেই। কারণ সারাবিশ্বে এমন স্থান রয়েছে মাত্র দুটি। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল তার এক প্রবন্ধে জানিয়েছেন, পৃথিবীতে তিনটি পূর্ব-পশ্চিম বিস্তৃত রেখা আছে, সেগুলো হলো কর্কটক্রান্তি, মকরক্রান্তি ও বিষুব রেখা। ঠিক এ রকম চারটি উত্তর-দক্ষিণ বিস্তৃত রেখা আছে, সেগুলো হলো শূন্য ডিগ্রি, ৯০ ডিগ্রি, ১৮০ ডিগ্রি এবং ২৭০ ডিগ্রি দ্রাঘিমা। চারটি উত্তর-দক্ষিণ রেখা এবং তিনটি পূর্ব-পশ্চিম রেখা, সব মিলিয়ে বারো জায়গায় ছেদ করেছে। ১২টি বিন্দুর ১০টি বিন্দুই পড়েছে সাগরে-মহাসাগরে। এর মধ্যে শুধু দুটি ছেদবিন্দু পড়েছে স্থলভাগে। এর একটি পড়েছে সাহারা মরুভূমিতে আর অন্য বিন্দুটি বাংলাদেশে। আরও নির্দিষ্ট করে বললে কর্কটক্রান্তি এবং ৯০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমার ছেদবিন্দুটি পড়েছে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার এই গ্রামে।
ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুকতাদিরুল আহমেদ জানান, প্রায় চার বছর আগে এ স্থানটি নিয়ে সরকারি পর্যায়ে আলোচনা শুরু হয়। এরই মধ্যে সংশ্নিষ্টরা স্থানটি পরিদর্শন করেছেন। বঙ্গবন্ধু মানমন্দির ও পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ১৫-২০ একর জায়গা লাগবে। সার্ভের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই এ প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পাঠানো হবে।
ফরিদপুর শহর থেকে ভাঙ্গা যাওয়ার সড়কে পুখুরিয়া নামক স্থান থেকে সদরপুর উপজেলার দিকে যেতে স্থানীয় বাইশরশী শিবসুন্দর একাডেমি সংলগ্ন নুরুল্লাগঞ্জমুখী রাস্তা ধরে তিন কিলোমিটার এগোলে ভাঙ্গারদিয়া গ্রাম। জানা যায়, বিল ধোপডাঙ্গা মৌজায় বারেক মাতুব্বর, ইকবাল মাতুব্বর, কুটি পাগলা, জাকির হোসেন, ইউসুফ মাতুব্বর, আজিজুল মাতুব্বর, শাহজাহান শেখ ও মোফাজ্জেল হোসেনের মোট প্রায় পাঁচ একর কৃষিজমিকে প্রাথমিকভাবে সম্ভাব্য এই প্রকল্পের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে।
নির্ধারিত জমিটির একাংশের মালিক আলফু মাতুব্বরের ছেলে কৃষক বারেক মাতুব্বর জানান, গত চার বছরে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের একাধিক টিম তার জমি এলাকা সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে গেছে। কী কারণে করেছে, তা স্পষ্ট করে তাকে কিছু জানানো হয়নি। এই প্রতিবেদকের কাছে পুরো ব্যাপারটি জানতে পেরে তিনি বলেন, আমি একা না, এই বিখ্যাত জায়গাটির পরিচিতি যাতে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে সেজন্য এলাকার সকলেই আমরা ন্যায্য দামে সরকারকে জমি লিখে দিতে রাজি আছি।