শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০১:৪২ অপরাহ্ন

দুর্নীতির চাপে পঙ্গু রেল

দুর্নীতির চাপে পঙ্গু রেল

স্বদেশ ডেস্ক: স্বল্প ব্যয়ে নিরাপদ ভ্রমণের জন্য পরিচিত বাংলাদেশ রেলওয়ে ঘাটে ঘাটে দুর্নীতির কারণে অনেকটাই পঙ্গু হয়ে আছে। রাষ্ট্রীয় এ পরিবহন যাত্রী চাহিদার শীর্ষে থাকা সত্ত্বেও সেবার মান বাড়ছে না। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশ রেলওয়ের শীর্ষ দশটি দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে।

দুদকের একজন পরিচালকের নেতৃত্বে গঠিত টিম রেলওয়ের আইন, বিধি, পরিচালন পদ্ধতি, সরকারি অর্থ অপচয়ের নানা দিক পর্যবেক্ষণের পর সেগুলো বিশ্লেষণ করে অনিয়মের উৎস শনাক্তসহ দুর্নীতি প্রতিরোধে একটি সুপারিশমালা দিয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজনের কাছে দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান এ পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন। এ সম্পর্কে দুদক কমিশনার বলেন, এটি বিশেষজ্ঞদের মতামত সংবলিত প্রতিবেদন নয়; কমিশনের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি টিমের প্রতিবেদন। টিম বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যাদি বিশ্লেষণের পর এটি তৈরি করেছে। প্রতিবেদনে দুর্নীতির উৎস হিসেবে বলা হয়, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল (চট্টগ্রাম) এবং পশ্চিমাঞ্চলে (রাজশাহী) বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি লিজ-হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়ে থাকে।

সেখানকার জলাশয়-পুকুর নিয়মবহির্ভূতভাবে পছন্দের লোককে লিজ দেওয়া হয়। এতে করে সরকার প্রকৃত রাজস্ব পাচ্ছে না। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার জন্য রেলওয়ের জমিতে স্থাপনা নির্মাণ করছে এবং তৃতীয় পক্ষকেও এমন সুযোগ দিচ্ছে। আবার তদারকির অভাবে রেল বিভাগের শত শত একর জমি বেদখল হয়ে আছে।

রেলের জমিতে সেখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবৈধভাবে বাসা-বাড়িসহ অবকাঠামো নির্মাণ করে ভাড়া দিচ্ছে। দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, রেলওয়ের ওয়াগন, কোচ, লোকোমোটিভ, ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট (ডিএমইউ) ক্রয়ে বড় ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম হচ্ছে। বিভিন্ন সেকশন স্টেশনের সিগন্যালিং ব্যবস্থা পুনর্বাসন ও আধুনিকীকরণ কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতি হচ্ছে। ডাবল লাইন, সিঙ্গল লাইন, ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ, ভূমি অধিগ্রহণেও দুর্নীতি হচ্ছে। রেলওয়ের ডিএস/কারখানা সৈয়দপুর, নীলফামারী, পাকশী, লালমনিরহাট, ঢাকা, চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে বিজি ও এমজি যাত্রীবাহী ক্যারেজ পুনর্বাসন নিলামে যন্ত্রাংশ বিক্রয় প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের আর্থিক ক্ষতিসাধন হচ্ছে।

এ ক্ষেত্রে ব্লাস্ট লাইনে না দেওয়া, যন্ত্রাংশ সংস্থাপন যথাযথভাবে না করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। রেলওয়ের ওয়ার্কশপগুলো কার্যকর না করে আমদানির মাধ্যমে বিভিন্নভাবে অনিয়ম ও দুর্নীতি করছে সংঘবদ্ধ চক্র। প্রতিবেদনে বলা হয়, রেলওয়ের টিকিট কালোবাজারিতে কর্মচারীরাও জড়িত। তারা দালালের মাধ্যমে আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট আগাম ক্রয় করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। পরে এসব টিকিট গলাকাটা দামে বিক্রি করে। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ যাত্রীদের। প্রভাবশালীদের কাছে ট্রেন ইজারা প্রদানের মাধ্যমেও যাত্রী হয়রানি করা হচ্ছে। তারা টিকিটের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক বাড়তি ধার্য করায় জনসাধারণ কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

আবার ট্রেনে বিক্রি করা হচ্ছে নিম্নমানের অথচ চড়ামূল্যের খাবার। কিন্তু এসব অনিয়মের মনিটরিং হচ্ছে না। দুর্নীতি রোধে সুপারিশমালা দুদকের সুপারিশমালায় বলা হয়, বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগে বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান আইবিএ, বুয়েটের সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে। নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা গ্রহণের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যেতে পারে। স্বল্প সময়ের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা যেতে পারে। আর কেনাকাটায় অনিয়ম রোধে সুপারিশমালায় বলা হয়, ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে এবং ই-টেন্ডার পদ্ধতিসহ সরকারি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। রেলওয়ের সব সম্পত্তির ডেটা এন্ট্রি অর্থাৎ তালিকা প্রস্তুত করা এবং তা নিজস্ব তত্ত্বাবধানে আনা যেতে পারে।

অডিট কার্যক্রম জোরদার করা এবং অডিট আপত্তি জরুরিভাবে নিষ্পত্তি করা যেতে পারে। পিপিআর অনুযায়ী স্বচ্ছতার সঙ্গে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির মাধ্যমে পুরনো লৌহজাত মালামাল বিক্রি করা যেতে পারে। টিকিট কালোবাজারি রোধে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার এবং নিয়মিত মনিটরিং করা যেতে পারে। যাত্রীসেবা বৃদ্ধি করা, নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেন চলাচল নিশ্চিতকরণ, পর্যাপ্ত বগি, লোকোমোটিভ ও ওয়াগন ক্রয়সহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। সর্বোপরি তদারকি কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877