স্বদেশ ডেস্ক: শেষ মুহূর্তে হজ মেডিক্যাল টিমে মনোনয়নপ্রাপ্ত ৫৪ নার্সের মনোনয়ন বাতিল করে নতুন ৫৪ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে চলছে সমালোচনা। বাদপড়াদের অভিযোগ, মোটা অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। নতুন তালিকায় অন্তর্ভুক্তদের ভাষ্য-প্রথম তালিকার ৫৪ নার্সই ঘুষ ও তদবিরের মাধ্যমে হজ মেডিক্যাল টিমে জায়গা পেয়েছিলেন। ওই তালিকা স্বচ্ছ ছিল না।
গত ২৬ মে এবারের হজ মৌসুমে সৌদি আরবে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের চিকিৎসাসেবা দিতে ২০৭ সদস্যের হজ মেডিক্যাল টিম ঘোষণা করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। তাদের মধ্যে ৯০ চিকিৎসক, ৭৫ নার্স/ব্রাদার্স, ৩৪ ফার্মাসিস্ট ও ৮ স্বাস্থ্য সহকারী/প্যারামেডিকিস ও ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান ছিলেন।
কিন্তু গত ২৯ জুন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব (হজ) এসএম মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত হজ চিকিৎসক দল পুনর্গঠনের বিজ্ঞপ্তিতে নার্স-ব্রাদার্স ৭৫ জনের মধ্যে ক্রমিক নম্বর ১ থেকে ৫৪ নম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপ্রাপ্ত নার্সের মনোনয়ন বাতিল করা হয়। নতুন ৫৪ জনের নাম যোগ করে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এ ঘটনায় ধর্ম মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
দুই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, ৫৪ জনের নাম বাতিল করে নতুন ৫৪ জনকে অন্তর্ভুক্ত করার পেছনে গোয়েন্দা প্রতিবেদন এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। কারণ অনিয়ম ও তদবিরের মাধ্যমে ৫৪ নার্স হজ মেডিক্যাল টিমে স্থান পেয়েছিলেন। এ কারণে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আগের তালিকা বাদ দেওয়ার নির্দেশনা ছিল। বাদপড়া নার্সদের কেউ কেউ বলছেন, এমপি-মন্ত্রী ও সচিবদের তদবির নিয়ে নতুন ৫৪ জন হজ টিমে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, যা নজিরবিহীন। কর্মকর্তারা জানান, চলতি বছরের মার্চ থেকে হজ মেডিক্যাল টিম গঠনের কাজ শুরু হয়। এই টিমে জায়গা পেতে বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে তদবির করতে থাকেন। এমপি, মন্ত্রী ও প্রশাসনের অনেকে এ তদবিরে জড়িয়ে পড়েন। তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পছন্দের চিকিৎসক-নার্সদের তালিকা পাঠিয়ে সুপারিশ করেন।
সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সিন্ডিকেট হজ মেডিক্যাল টিম গঠনে ভূমিকা রাখে। তারা জনপ্রতি ২ থেকে ৩ লাখ টাকা নিয়ে নার্স-চিকিৎসকদের টিমে অন্তর্ভুক্ত করেন। এ বিষয়ে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রতিবেদন দেয়। তার পরই মূলত ৫৪ জনের নাম বাতিল করা হয়। ৫৪ জনের নাম বাতিল করে নতুনদের অন্তর্ভুক্ত করা হলেও বহুদিন ধরে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে প্রতিবছরই এমন অনিয়ম হয়ে আসছে। জানা গেছে, আগে মনোনয়নপ্রাপ্ত ৫৪ নার্স ইতোমধ্যে হজ ভিসার জন্য পাসপোর্ট জমা দেওয়া, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও টিকাদান সম্পন্ন করেছেন। তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামেও অংশ নিয়েছেন। কর্মস্থল ও স্বজনদের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে সৌদি আরব যাওয়ার প্রস্তুতিও সেরেছেন।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে সৌদি আরবের উদ্দেশে তাদের অনেকের ঢাকা ছাড়ার কথা ছিল। কিন্তু তাদের নাম বাতিল হওয়ায় তারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। চাকরি হারানোর ভয়ে প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও ৫৪ নার্সের কেউ কেউ মন্ত্রণালয়ের ‘দুর্নীতিবাজ’ কর্মকর্তাদের সমালোচনা করছেন। অভিযোগ রয়েছে, হজ টিমে যারা নতুন করে জায়গা পেয়েছেন তাদের অনেকেই এর আগে ৫-৬ বার হজ মেডিক্যাল টিমে গেছেন এবং হজ পালন করেছেন।
এ প্রসঙ্গে ধর্ম সচিব আনিছুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, বিষয়টি সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। আমাদের মন্ত্রণালয়ের (ধর্ম মন্ত্রণালয়) কোনো হস্তক্ষেপ এখানে নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পাঠানো তালিকার ভিত্তিতেই গত ২৬ মে আমরা চিকিৎসক-নার্সদের সমন্বয়ে হজ মেডিক্যাল টিম গঠন করেছি। পরে আবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ৫৪ নার্সের নাম বাতিল করার অনুরোধ জানিয়ে নতুন ৫৪ জনের তালিকা পাঠানো হয়। এখানে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। কেন আগের নাম বাতিল করে নতুন নাম যুক্ত হলো তা একমাত্র স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানে। নার্স বাতিল ও নতুন করে যুক্ত হওয়ার পেছনে আর্থিক লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে এমন প্রশ্নে ধর্ম সচিব বলেন, যদি ঘুষের বিষয়টি আসত, তা হলে চিকিৎসকদের নামও বাতিল হতো। কিন্তু সেটি হয়নি।
সুতরাং ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি সঠিক নয়। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলামকে ফোন করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বক্তব্য জানতে একাধিকার ফোন করা হয়েছে একই বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জাকিয়া সুলতানাকেও। তিনি ফোনে সাড়া দেননি।