স্বদেশ ডেক্স: বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শুরুটা ১৯৯৯ সালে। কিন্তু ভারতের সঙ্গে সাক্ষাৎ নিজেদের তৃতীয় বিশ্বকাপে; ২০০৭ সালে। প্রথম সাক্ষাতেই বাজিমাত টাইগারদের। ভারতের বিপক্ষে বিশ্বকাপে পাওয়া একমাত্র জয়টি এখনো টাইগারদের ভক্তদের কাছে স্মরণীয়। দিন-তারিখও হয়তো অনেকের মুখস্থ! যাদের ভুলো মন; তাদের আরেকবার স্মরণ করে দিচ্ছি। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপের আয়োজক ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৭ মার্চ ২০০৭ সালে ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর রাজধানী পোর্ট অব স্পেনের মুখোমুখি হয় রাহুল দ্রাবিড়ের ভারত এবং হাবিবুল বাশার সুমনের বাংলাদেশ।
ম্যাচে ৫ উইকেটের জয় পায় লাল-সবুজরা। বিশ্বকাপে দুদলের তিন দেখায় জয় কেবল ওই একটিই। এর পর ২০১১ এবং ২০১৫ সালে খেললেও ভারতকে হারাতে পারেনি। মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা, আবদুর রাজ্জাক এবং মোহাম্মদ রফিকের দুর্দান্ত বোলিংয়ে মাত্র ১৯১ রানে গুটিয়ে যায় ভারত। সৌরভ গাঙ্গুলী (৬৬ রান) এবং যুবরাজ সিং (৪৭ রান) ছাড়া ভারতের হয়ে আর কেউ সেদিন ব্যাটিংয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি। বীরেন্দ্র শেবাগ ২, রবিন উথাপ্পা ৯, শচিন টেন্ডুলকার ৭, অধিনায়ক দ্রাবিড় ১৪; মহেন্দ্র সিং ধোনি, হরভজন সিং এবং অজিত আগারকার রানের খাতাই খুলতে পারেননি। জহির খান এবং মুনাফ প্যাটেল দুই বোলারের সমান ১৫ রানের সুবাদে দুশ ছুঁই ছুঁই সংগ্রহ পায় ভারত। মাশরাফি ৩৮ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন।
এ ছাড়া রাজ্জাক ও রফিক সমান ৩টি করে উইকেট শিকার করেন। লক্ষ্যটা ছোট; কিন্তু বিশ্বকাপের বড় মঞ্চে তৃতীয়বার অংশ নেওয়া একটি দলের জন্য পাহাড়সমই। তার ওপর প্রতিপক্ষ যখন ভারত, তখন ভয়টা আরও বেশিই। কিন্তু পোর্ট অব স্পেনে সেদিন ভয় পায়নি বাংলাদেশ। বিশেষ করে তিন তরুণ- তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম এবং সাকিব আল হাসান। এই তিন জনের ক্যামিও হাফ সেঞ্চুরিতে শচিন, সৌরভ, দ্রাবিড়ের ভারতকে মাটিতে নামিয়ে আনে টাইগাররা।
ভারতকে হারিয়ে সেবার সুপার এইটেও জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ। আগের আসরের রানার্সআপ ভারত, সেবার (২০০৭ বিশ্বকাপে) গ্রুপপর্বেই বিদায় নেয়। আগেই বলেছি ব্যাটিংয়ে তিন তরুণের সওয়ার হয়ে বিশ্বকাপে ভারতকে হারানোর স্বাদ আস্বাদন করে বাংলাদেশ। পোর্ট অব স্পেনের ওই ম্যাচের আগে তামিম খেলেন মাত্র ৪ ম্যাচ। পঞ্চম ম্যাচেই নিজের জাত চেনান।
জহির খান, মুনাফ প্যাটেল, হরভজনদের বিরুদ্ধে ৫৩ বলে ৫১ রানের দুরন্ত ইনিংস খেলেন। নিজের ১২তম ওয়ানডেতে খেলতে নেমে সেদিন আউটই হননি মুশফিক। ধীরস্থির থেকে ব্যাট করে ১০৭ বলে ৫৬ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন বাংলাদেশের ব্যাটিং নির্ভরতার প্রতীক মুশফিক। তামিম-মুশফিকের চেয়ে কিছুটা অভিজ্ঞ ছিলেন সাকিব। ভারতের বিপক্ষে পোর্ট অব স্পেনের ওই ম্যাচের আগে ২০ ম্যাচ খেলা হয়ে গেছে তার। এমনকি আগের ম্যাচে কানাডার বিপক্ষে সেঞ্চুরিও করেন। তবে ভারতের বিপক্ষে সেঞ্চুরি না পেলেও ৮৫ বল থেকে দলের প্রয়োজনীয় ৫৩টি রান এনে দেন সাকিব।
শাহরিয়ার নাফিস (২), আফতাব আহমেদ (৮), হাবিবুল বাশার (১) ভারতের ম্যাচে ব্যাটিংয়ে নামলেও অবদান রাখতে পারেনি। মুশফিক, তামিম, সাকিবের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়েই ম্যাচ জিতে যায় বাংলাদেশ। পোর্ট অব স্পেনে পাওয়া সেই জয়ের বয়স এক যুগ পেরিয়ে গেছে। ১২ বছরে অনেকবার দুদলের সাক্ষাৎ হয়েছে। বিশ্বকাপে আজ চতুর্থবারের মতো মাঠে নামবে বাংলাদেশ-ভারত। ইংল্যান্ডের বার্মিংহামের এজবাস্টনে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে। বার্মিংহামে আরেকটি পোর্ট অব স্পেনের গল্পগাথা রচনা করবে টাইগাররা-এমনটাই প্রত্যাশা সবার।