শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

অস্থিরতা সব দলেই…

স্বদেশ ডেস্ক: বাংলাদেশে রাজনীতিতে চলছে তুমুল অস্থিরতা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটসহ সব শিবিরের জোটেই একই অবস্থা। ক্রমেই বাড়ছে এ অসন্তোষ । পাওয়া না পাওয়ার হিসাব মেলাতে পারছে না ওইসব জোটের শরিক দলগুলো। যার ফলে ফাটল দেখা দিচ্ছে জোটে। রাজনৈতিক লক্ষ্য কি তা খুুঁজে বের করতে চাচ্ছেন অনেক জোটের শরিকরা। এসব কারণে মাঠে নেই জোটগুলোর শরিক দলেরা। সরকারের বিরুদ্ধে এবং সম-সাময়িক ইস্যু নিয়ে নেই কোনো জোরালো আন্দোলনও। টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে দীর্ঘ দিনের মিত্র মহাজোটের শরিক ১৪ দলকে সাইড লাইনে ফেলে রেখেছে আওয়ামী লীগ। এ জোটের শরীকদল থেকে এমপি নির্বাচিত হলেও তাদের স্থান হয়নি মন্ত্রীসভায়। এর আগের মন্ত্রীসভায় শরিক দলের নেতাদের দেখা গেলেও এবারই প্রথম তাদের নেয়া হয়নি। অনেকটা কোনঠাসা রয়েছে এসব শরিকদলের নেতাদের। তারা এখন সরকারি দলে না বিরোধীদলে তাও ঠিকভাবে বুঝে উঠতে পারছেন না।
এর আগে আওয়ামী লীগসহ মহাজোটের বিভিন্ন কর্মসূচীতে শরিক দলের নেতাদের অগ্রভাগে দেখা গেলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তাদের কম দেখা মেলেছে। শরিকদলের অনেক নেতারাই জোটের কর্মকা-ে নিজেদের শরিকর রাখতে গিয়ে গুরুত্ব দেননি নিজ দলকে। ফলে রাজনীতির ময়দানে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে জোটের অনেক শরিকদল। বিগত একদশকে এসব দলের ছিল না উল্লেখযোগ্য কোনো কর্মকা-ে। সরকারের কোনো কোনো বিষয়ের সঙ্গে দ্বিমত থাকলেও সরকারে থাকায় ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচিও দিতে পারেনি তারা। যার ফলে মানুষের মাঝে এখন এসব দল নিয়েও নেই কোনো আগ্রহ।
সরকারের মন্ত্রীসভায় স্থান না পাওয়া, নিজের দলকে গুরুত্ব না দেয়া এবং সরকারে থেকেও বিরোধীদলের ভূমিকায় থাকা নিয়ে এসব শরিক দলের নেতাদের মাঝে বাড়ছে ক্ষোভ ও হতাশা। জোটে থাকা না থাকা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছেন তার এমটি জানা গেছে অনেক নেতার সঙ্গে আলাপকালে।
সরকারের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বিশেষ পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই মন্ত্রীসভায় শরিকদলের কোনো নেতাকে রাখা হয়নি। বিএনপির নেতৃত্বের ঐক্যফ্রন্ট মাত্র পাঁচটি আসন নিয়ে বিরোধী দলে বসতে পারছে কি না, এ নিয়েও নানা তর্ক আছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে। আসন কম হওয়ায় ঐক্যফ্রন্ট বিরোধী দল হতে পারছে না বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। আবার বিএনপি ‘কমসংখ্যক আসনের বিরোধী দল’ হলেও প্রকৃত গণতান্ত্রিক ভূমিকা পালন করবে সংসদে, এ বিষয়ে আশ্বস্ত হতে পারছেন না সরকারি দলের শীর্ষ পর্যায়ের অনেকে। ঐক্যফ্রন্টের এখন থাকা সাতটি সংসদীয় আসনের মধ্যে বিএনপির মাত্র পাঁচটি আর বাকি দুটি গণফোরামের। এ পরিস্থিতিতে সংসদের বিরোধী দল ও মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের জোরালো ভূমিকা দেখতে চায় আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক মিত্র ও সমমনা হওয়ায় মহাজোটের শরিক দলগুলো সংসদে দায়িত্বশীল বিরোধী দল হতে পারে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের কেউ কেউ।
তবে সংসদে বিরোধী দল হতে অনাগ্রহী ১৪ দলের শরিক নেতাদের মতে, একই প্রতীকে ভোট করার পর এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের বিরোধী দলে পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন আছে। সরকারের চাওয়ামতো বিরোধী দলে গেলে আদর্শিক এ জোটের ঐক্য অটুট থাকবে না বলেও তারা যুক্তি দেখাচ্ছেন। এ যুক্তি আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে না বলেও অভিযোগ তাদের। কোনো কোনো দল বিরোধী দলের আসনে না বসলেও সংসদ প্রাণবন্ত করতে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনার পক্ষেও কাজ করতে চায়।
এ প্রসঙ্গে মহাজোটের শরিক দল ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খানন মেনন জানান, সংসদে ১৪ দলের শরিকদের অবস্থান কী হবে, আমরা কি বিরোধী দল নাকি সরকারি দল, তা স্পষ্ট হয়নি। এজন্য আমাদের অনেক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে।
অন্যদিকে বিএনপির কর্মকান্ড একেবারে নেই বললেই চলে। আন্দোলনের কর্মসূচির জন্য দলটির শুভাকাক্সিক্ষ এবং মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের প্রচন্ড চাপের পরেও বিএনপির নীতিনির্ধারণী মহল এ ব্যাপারে একেবারেই নিশ্চুপ। এদিকে বিএনপি জোটের শরিক দল জামায়াতে ইসলামীরও কোনো তৎপরতা নেই।
আন্দোলন-সংগ্রামে তো নেইই, তার উপর সাম্প্রতিক সময়গুলোতে জাতীয় সংসদ ও নির্বাচন প্রশ্নে একের পর এক আপোষকামীতার যেসব সিদ্ধান্ত বিএনপি নিচ্ছে তাতে দলের ভেতরের-বাইরের সবাই একবাক্যে অবাক হচ্ছে। তাছাড়াও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্বে বিএনপি ঐক্যফ্রন্টের ওপর অধিক নির্ভরশীল হয়ে হয়ে পাত্তা দেয়নি দীর্ঘদিনের মিত্র ২১ দলকে। এনিয়ে ২১ দলের নেতারা ক্ষুব্দ বিএনপির ওপর। এর বহ্নিপ্রকাশ ঘটে জাতীয়পার্টি (জেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থের জোট ছাড়া থেকেই।
বিএনপি ঐক্যফ্রন্টের ওপর অধিক নির্ভরশীল হলেও লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে চরম ব্যার্থ হয়েছে জোটটি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সুর্নিদিষ্ট কয়েকটি লক্ষ্য নিয়ে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠন করা হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। নানা নাটকিয়তা শেষে জোটটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ভরাডুবির মধ্যে পড়ে। সংসদের ৩’শ আসনের মধ্যে মাত্র ৮টি আসনে পায় জয়ের দেখা দেখা।
নির্বাচনোত্তর ফ্রন্টের নেয়া নানা সিদ্ধান্তে এ জোটে ফাটল দেখা দেয়। যে নির্বাচনের ফল তারা প্রত্যাখান করেছিলেন, সেই সংসদেই শপথ নেন ফ্রন্টের নির্বাচিত আট সংসদ সদস্যকে। এমন নানা টানাপড়েনের কারণে গত ৫ মাস ধরে ঐক্যফ্রন্ট কোনো কর্মসূচি কার্যকর করতে পারেনি। প্রতিটি দল চলেছে যে যার মতো।
এসব ভুল বোঝাবোঝি কিংবা দূরত্ব মিটিয়ে ফের সক্রিয় হতে গত ১০ জুন রাজধানীর উত্তরায় জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রবের বাসায় বৈঠকে বসেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। বৈঠক শেষে আ স ম রব বলেন, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে জোটের পরিধি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এ লক্ষ্যে বাম গণতান্ত্রিক জোট, ২০ দলীয় জোটের বিভিন্ন শরিক দল, ইসলামী আন্দোলন সহবিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগও করেছেন জোটটির নেতারা। কিন্তু এতে তেমন কোন সাড়া পাচ্ছে না জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। যার ফলে আকার বড় করে সরকার বিরোধী আন্দোলন দাঁড় করানোর যে আশা ঐক্যফ্রন্ট করেছিল, তাতে আপাতত ছেদ পড়লো বলে মনে করেন জোটেরই অনেকে ।
বাম গণতান্ত্রিক জোট, ইসলামী আন্দোলনসহ কোনো দল ভিড়তে চাচ্ছে না ঐক্যফ্রন্টে। এ প্রসঙ্গে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনৈতিক উপদেষ্টা আশরাফ আলী আকন বলেন, ঐক্যফ্রন্টতো এখন নাই। তারা কখন কি করে তা নিয়ে আমাদের কখনো আস্থা ছিলো না এখনো নেই। তাদের আদর্শিক কোনো মিল নাই। তারা আসলে সুবিধাবাদি। তাদের সঙ্গে আমাদের আদর্শিক ও কর্মসূচীর কোনো মিল নাই। বিধায় তাদের জোটে যোগ দেয়ার প্রশ্নই আসে না।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সাবেক সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাইফুল হক জানান, ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে মিলে এক ব্যানারে, এক মঞ্চে কোনো কর্মসূচীর হওয়ার আপাতত কোনো সুখবর নেই। তবে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, এই সংসদ বাতিল, তদারকি সরকারের অধীনে গণতান্ত্রিক পরিবেশে নতুন নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে যার যার জোট ও দল ঠিক রেখেও রাজপথে আন্দোলনের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলা সম্ভব।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ও গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া বলেন, দেশের মানুষ ঐক্য চায়। তারা ভোটের অধিকার ফেরত চায়। মানুষের ভোটের অধিকার ফেরত দিতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বাংলাদেশে সরকার বিরোধী অনেক রাজনৈতিক দল আছে। সবাই পৃথক পৃথকভাবে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য কাজ করছে। কিন্তু খুব একটা সুফল মিলছে। এজন্যই আমরা সকল রাজনৈতিক দল মিলে ঐক্যবদ্ধ হতে চাচ্ছি। সরকার বিরোধী বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আশা করছি জুলাই মাসে ফ্লাটফর্মটি দাড় করাতে পারব।
এদিকে নির্বাচনের পর নানা ইস্যুতে বিকল্পধারা নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টে অস্থিরতা বিরাজ করছে। কৃষক ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুর্নীতিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে জোটের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে শরিক দলগুলো। এছাড়া তারা কি সরকারের অংশ না বিরোধী দলে, তা পরিষ্কার করতে জোটের চেয়ারম্যান অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন। জোটের এক যৌথ সভায় এ নিয়ে কথাও বলেন শরিকরা। শিগগিরই এসবের স্পষ্ট জবাবসহ জোটকে সক্রিয় করা না হলে বাংলাদেশ ন্যাপ ও কয়েকটি দল যুক্তফ্রন্ট ছাড়তে পারে।
যুক্তফ্রন্টের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া জানান, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াই করার জন্যই আমাদের রাজনীতি। শুধু সরকারের তোষামোদ করার রাজনীতি না। গত ৬ মাসে সরকারের নানা ভুল ও দুর্নীতি নিয়ে দলগতভাবে আমরা কথা বললেও জোটগতভাবে কিছুই করিনি।
তিনি জানান, রাজনৈতিক অঙ্গনে আমাদের অবস্থানটা কোথায়? এটা অবশ্যই পরিষ্কার করতে হবে। নইলে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে। আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।
যুক্তফ্রন্টের আরেক শরিক দল বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান হামদুল্লাহ আল মেহেদী জানান, এখন আমরা কি সরকারি দলে আছি না বিরোধী দলে- সে ব্যাপারে যুক্তফ্রন্টের সভায় একটা জিজ্ঞাসা ছিল। সরকারে থাকলে কীভাবে আছি আবার বিরোধী দলে থাকলে দেশে বিভিন্ন যে অনিয়ম হচ্ছে সে ব্যাপারে বিবৃতি বা কোনো কর্মসূচি পালন করিনি কেন? এসব বিষয় সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, সভায় যুক্তফ্রন্টের শরিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তফ্রন্টের মূল্যায়ন যেমন পরিষ্কার নয়, উপজেলা নির্বাচন নিয়েও আমরা অন্ধকারে ছিলাম। যুক্তফ্রন্টের রাজনীতি আসলে কী? উদ্দেশ্যই বা কী? জাতীয় নির্বাচনের পর কৃষক ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়াসহ বেশ কয়েকটি ইস্যুতে অন্যান্য রাজনৈতিক জোট কর্মসূচি পালন করলেও যুক্তফ্রন্ট করেনি।
সভায় জোটের অন্যতম শরিক ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপি চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা জানান, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াই করার জন্যই আমাদের রাজনীতি। আমরা কি তা করতে পারছি? না পারলে এই ফ্রন্টের বিষয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। রাজনীতির প্রয়োজনে নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। নৌকা মার্কায় দু’জন এমপি বানালেই ফ্রন্টের রাজনীতি শেষ হয়ে যায় না।
এ প্রসঙ্গে যুক্তফ্রন্টের অন্যতম নেতা ও বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য শমসের মবিন চৌধুরী জানান, জাতীয় সংসদে যুক্তফ্রন্টের যে দুই সদস্য আছেন, তাদের ভূমিকা আসলে কী? কৃষক ধানের মূল্য পাচ্ছে না, পবিত্র রমজানের সময় পাট শ্রমিকরা মজুরির দাবিতে রাজপথে অবস্থান নিয়েছিল; সে সময় ওই দুই সংসদ সদস্য কী ভূমিকা রেখেছেন? তারা কোনো ধরনের ভূমিকা আদৌ নিয়েছেন কি না, জাতি তো জানেই না। এমনকি আমরাও জানি না। তিনি আরও বলেন, রাজনীতি জনগণের জন্য। সুতরাং জনগণের পক্ষে রাজনীতি করতে না পারলে জনগণ কোনোদিন ক্ষমা করবে না।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877