রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:২৭ অপরাহ্ন

বাংলাদেশের আরেক নাম পাসপোর্ট ভোগান্তি…?

বাংলাদেশের আরেক নাম পাসপোর্ট ভোগান্তি…?

এস এম সাইদুর রহমান উলু:
পাসপোর্টপ্রাপ্তি একজন নাগরিকের অধিকার। নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র একজন নাগরিকের জন্য বাধ্যতামূলক হতে পারে, কিন্তু কোনো নাগরিকের পাসপোর্ট থাকতেই হবেএ জন্য রাষ্ট্র কাউকে বাধ্য করতে পারে না। নাগরিকত্ব প্রমাণের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত দলিল হচ্ছে পাসপোর্ট। এই দলিল না হলে একজন মানুষ দেশের বাইরে ভ্রমণ করতে পারেন না। একজন মানুষের একইসঙ্গে একাধিক দেশের পাসপোর্টও থাকতে পারে। পাসপোর্টপ্রাপ্তির জন্য দিতে হয় নির্ধারিত ফি। নবায়ন/রি-ইস্যুর জন্যও ফি লাগে। তবে পাসপোর্ট নবায়ন/রি-ইস্যুতে বিলম্বের জন্য জরিমানা ধার্য কতটা সঙ্গত তা আলোচনার দাবি রাখে। সবচেয়ে আরো মজার ব্যাপার হলো, ডিজিটাল বাংলাদেশের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পাসপোর্টের ওয়েবসাইটে ফিসের কিংবা জরিমানার হার দেওয়া নেই। নতুন পাসপোর্ট করতে জরুরি ক্ষেত্রে ৬ হাজার টাকা আর সাধারণ ফি ৩ হাজার টাকা। এর ওপর ভ্যাট শতকরা ১৫ যোগ করে প্রদেয় যথাক্রমে ৬ হাজার ৯০০ ও ৩ হজার ৪৫০ টাকা। সরকারি কর্মচারী ছাড়া প্রতিটি নতুন পাসপোর্টের জন্য পুলিশি তদন্ত প্রয়োজন হয়। সকল পাসপোর্টের জন্য তথ্যাদি অধিদপ্তরের তথ্যভা-ারে অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। একারণে ধার্যকৃত ফি নিয়ে কারো কোনো মন্তব্য নেই। কিন্তু যখন নবায়ন/রি-ইস্যু করা হয় তখন তথ্যভা-ারে কোনো তথ্য যুক্ত হয় না, কিংবা লাগে না পুলিশি প্রতিবেদন তবে কেন দিতে হবে নতুন পাসপোর্টের সমপরিমাণ ফি ? আমাদের দেশের পাসপোর্টের মেয়াদকাল পাঁচ বছর। প্রকৃত অর্থে এটি সাড়ে চার বছর। কেননা পাসপোর্টের মেয়াদ ছয় মাসের কম অবশিষ্ট থাকলে দেশের বাইরে যাওয়া যায় না। সেই অর্থে সাড়ে চার বছর মেয়াদি একটি পাসপোর্ট রি-ইস্যু করতে প্রতিবার ৩ হাজার ৪৫০ টাকা আর জরুরিক্ষেত্রে ৬ হজার ৯০০ টাকা গোনাটা একজন নাগরিকের পক্ষে কষ্টকরই।
বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর প্রায় এক লাখ ২৭ হাজার লোক পবিত্র হজ পালন করতে যান সৌদি আরবে। এদের মধ্যে কম করে এক লাখ লোকই প্রথমবার পাসপোর্ট করে দেশের বাইরে যান, তেমনি অনেকে পাসপোর্ট করে ওমরাহ পালন করে আসেন এবং আর হয়তো কখনোই বিদেশ যান না। পাসপোর্টের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর হজ, ওমরাহ, তীর্থে বা ডাক্তার দেখানোর জন্য আর্থিক সঙ্গতি না হওয়ায় বিদেশ যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় বলে নবায়ন/রি-ইস্যু করা হয় না পাসপোর্ট। সবারই যে বিদেশে আত্মীয়-স্বজন থাকবে, সেমিনার ওয়ার্কশপে আমন্ত্রণ থাকবে, পর্যটনের আর্থিক সঙ্গতি বা ঝোঁক থাকবে এমন তো কোনো কথা নেই। পাসপোর্টের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার অনেকদিন পরে আবার হয়তো জেগে ওঠে বাসনাহজে, ওমরাহ বা তীর্থে যাওয়ার; কিন্তু দেখা যায় মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে পাসপোর্টের। রি-ইস্যু করতে গেলে নতুন পাসপোর্টর জন্য ধার্যকৃত ফি দেওয়া ছাড়াও দিতে হবে প্রতি বছর বিলম্বের জন্য ৩০০ টাকা যোগ ভ্যাট ১৫ জরিমানা। যে কাজ একজন নাগরিক কোনোকালে না করলেও কোনো দন্ড দিতে হবে না, সেই কাজ একবার করার পর দ্বিতীয়বার করতে বিলম্বের কারণে জরিমানা জুলুম বৈকি নয়। প্রথমবারে পণ্য কেনার পরে দ্বিতীয়বার রেয়াত পাওয়ার কথা। সেখানে রি-ইস্যুর জন্য নতুন পাসপোর্টের সমপরিমাণ ফিসের পরিবর্তে রি-ইস্যুর ক্ষেত্রে ফিস হ্রাস করা উচিত। নাগরিক প্রয়োজন মনে করলে অনেক দিন পরে পুনরায় পাসপোর্টের প্রয়োজনীয়তা বোধ করলে তাকে জরিমানার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক। বড়জোর বিলম্বিত পাসপোর্টের জন্য নতুন পাসপোর্টের রীতি অনুসরণ করা যেতে পারে। আর সাড়ে চার বছরের মাথায় রি-ইস্যুর ধকল দূর করতে পাসপোর্টের মেয়াদ ১০ বছর করা হলে মানুষের ভোগান্তি কমবে, পাসপোর্ট অধিদপ্তরেরও কাজের চাপ কমবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877