শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:১১ অপরাহ্ন

নিরাপদ খাবার নিয়ে ‘শুদ্ধ আপা’র সংগ্রাম

নিরাপদ খাবার নিয়ে ‘শুদ্ধ আপা’র সংগ্রাম

স্বদেশ ডক্স: প্রায় ১১ বছর ধরে কাকলি খানের বাসায় বাজারের রাসায়নিক মিশ্রিত ভেজাল খাবারের প্রবেশ নিষিদ্ধ। ভেজাল খাবারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো সম্ভব হচ্ছে তাঁর উদ্যোগ ‘শুদ্ধ কৃষি’র জন্য। আর এই উদ্যোগের জন্য সম্প্রতি বাংলাদেশ ওপেন নেটওয়ার্ক সোর্সের উদ্যোক্তা কার্যক্রম চাকরি খুঁজব না, চাকরি দেব প্ল্যাটফর্ম ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইনোভেশন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিরশিপ বিভাগের যৌথ আয়োজনে উদ্যোক্তা সম্মাননা ২০১৮ পেয়েছেন।

কাকলি খানের ৬ বছর বয়সী মেয়ে জোলেহা খান মায়ের শুদ্ধ কৃষির বিপণনকেন্দ্র ছাড়া অন্য কোনো জায়গার খাবার খায় না।

শহুরে এই কৃষক কাকলি খান বললেন, ভেজালমুক্ত আন্দোলনে ভালোবাসা এবং সততা না থাকলে টেকা দায়। পণ্য নিয়ে বললেন,‘আমার জমির পাশে যে জমি, সেই মালিক খেতে রাসায়নিক সার বা অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহার করছেন। আমি না চাইলেও আমার খেতে তার প্রভাব পড়ছে। তবে অন্যদের তুলনায় শুদ্ধ কৃষির পণ্য অনেক বেশি নিরাপদ, তা দাবি করতে পারি।’

রাজধানীর গ্রিন রোডে ধানমন্ডি ক্লিনিকের নিচতলায় শুদ্ধ কৃষির বিপণনকেন্দ্র। এখানে শুক্র ও মঙ্গলবার হাট বসে। এ ছাড়া গুলশান এবং ধানমন্ডি ইউনিমার্টেও আছে আউটলেট। আন্দোলনে যুক্ত হয়ে গ ইউনিমার্ট শুদ্ধ কৃষির আউটলেটের জন্য ভাড়া নিচ্ছে না।

গ্রিন রোডের আউটলেটে ক্রেতা শাহানা আক্তার বললেন, ‘এখান থেকে নিয়মিত কলা কিনি। স্বাদটাই অন্য রকম। ’

গ্রিন রোডে ধানমন্ডি ক্লিনিকের নিচতলায় শুদ্ধ কৃষির বিপণনকেন্দ্র
শুক্র ও মঙ্গলবার হাট বসে
গুলশান এবং ধানমন্ডি ইউনিমার্টেও আছে আউটলেট
গ্রিন রোডে কিডনি এবং ক্যানসার রোগীর পরিবার ২০ শতাংশ কম দামে পণ্য কেনার সুযোগ পান

শুরুতে বিএ পাস কাকলি খান যেখানেই নিরাপদ খাদ্যের সন্ধান পেয়েছেন, সেখানেই ছুটে গেছেন। মানুষকে বিশ্বাস করে ঠকেছেন বারবার। তবে বর্তমানে একটি নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে।

কাকলির মতে, ৫০টি পরিবারকেও যদি ভেজালমুক্ত খাবারে অভ্যস্ত করানো যায়, তাও কম না।

কাকলির শুদ্ধ কৃষির উদ্যোগ শুরু হয়েছিল হুট করে শাশুড়ির (আপন ফুফু) মৃত্যুর পর। চিকিৎসকের কাছে জানতে পারেন ভেজাল খাবারে ফুফুর শারীরিক নানান জটিলতা দেখা দিয়েছিল। তারপরই সংগ্রাম শুরু। গ্রিন রোডের আউটলেটে কিডনি এবং ক্যানসার রোগীর পরিবার ২০ শতাংশ কম দামে পণ্য কেনার সুযোগ পাচ্ছে।

এখন অনেকেই কাকলি খানকে ডাকেন ‘শুদ্ধ আপা’। শুরুতে তাঁর পাগলামিতে পরিবারের সদস্যরা বিরক্ত হলেও আস্তে আস্তে স্বামী, ভাই, বাবা, বন্ধুসহ অন্যরাও যুক্ত হন, সহায়তা করেন।

হাসতে হাসতে কাকলি বললেন, ‘বাবার ছিল বিভিন্ন কোম্পানির সারের ডিলারশিপের ব্যবসা। সেই বাবা তাঁর নিজের ব্যবসা বন্ধ করে এখন শুদ্ধ কৃষিতে বসেন।’

কাকলি খানের স্বপ্ন হলো, মোড়ে মোড়ে থাকবে নিরাপদ খাবারের দোকান। ভোক্তা বেশি দাম দিয়ে রেস্টুরেন্টে খাচ্ছেন, দামি জামা কিনছেন, কিন্তু খাবার কিনতে গিয়ে দাম একটু বেশি দেখলেই আর কিনছেন না। তাই ভোক্তাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আসা জরুরি বলে বললেন কাকলি খান।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877