শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ১০:১৬ পূর্বাহ্ন

ভেঙে দেওয়া হচ্ছে বিএনপির ঢাকাসহ ১১ মহানগর কমিটি

ভেঙে দেওয়া হচ্ছে বিএনপির ঢাকাসহ ১১ মহানগর কমিটি

স্বদেশ ডেস্ক:

দল পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণসহ বিএনপির ১১ মহানগর কমিটি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে পর্যায়ক্রমে সব মহানগরে নতুন কমিটি করা হবে বলে জানা গেছে।

দলের নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, সারাদেশে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। ইউনিয়ন, পৌর ও থানা পর্যায়ের কমিটি গঠনে প্রত্যেক সংগঠনের বিভাগীয় কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী কমিটি গঠনের কাজ চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণসহ সারাদেশের মহানগর কমিটি এবং এর অধীন থানা ও ওয়ার্ড কমিটি পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সম্প্রতি লন্ডন থেকে স্কাইপে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগীয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই আভাস দেন। জানা যায়, সব মহানগর কমিটি ভেঙে দিচ্ছেন তারেক রহমান। সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। এখন শুধু নতুন কমিটি দেওয়ার পালা।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগর দিয়ে মহানগরের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হবে। এর পর বরিশাল মহানগর। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য মহানগর কমিটি গঠন করা হবে। দলের গুরুত্বপূর্ণ আরও এক নেতা বলেন, কাউন্সিলের মাধ্যমে এসব কমিটি করা হবে। তার আগে প্রতিটি মহানগরে আহ্বায়ক কমিটি করা হবে। এই কমিটি বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা কমিটি সম্পন্ন করবে। এর পর মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হবে। গাজীপুর মহানগর কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পুনর্গঠন করা হবে। এ ছাড়া কুমিল্লা মহানগরে বিএনপির সাংগঠনিক কোনো কমিটি নেই। প্রথমবারের মতো নতুন কমিটি গঠন করা হবে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু আমাদের সময়কে বলেন, কমিটি গঠন প্রক্রিয়াটি স্বাভাবিক এবং নির্দিষ্ট মেয়াদ পর পর তা করতে হয়। দলে তৃণমূল পর্যায় থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত পুনর্গঠনের কাজ চলছে। সেক্ষেত্রে মহানগর কমিটি গঠনের বিষয়েও আলোচনা আছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, মহানগর কমিটি যেগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে সেগুলো অবশ্যই পুনর্গঠন হবে।

২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই আংশিক অবস্থায় দুই কমিটির মেয়াদ গত ১৮ এপ্রিল শেষ হয়। নির্ধারিত সময়ে তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি। মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার বলেন, দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ওয়ার্ড-থানা কমিটি গঠন শেষ হলে মহানগর কমিটিতে হাত দেওয়া হবে। নতুন কমিটি করার কারণে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের যারা নেতৃত্ব থেকে বাদ পড়ছেন তারা যোগ্যতা অনুযায়ী মহানগর কমিটিতে স্থান পাবেন।

তিনি বলেন, সফলতা ও ব্যর্থতা যা-ই বলেন আমরা দায়িত্ব পাওয়ার পর দক্ষিণের ২৪টি থানার সব কটির আংশিক কমিটি দিয়েছি। ৭৫টি ওয়ার্ড রয়েছে, এর মধ্যে ৪-৫টিতে কমিটি দিয়েছি।

২০১৬ সালের ৬ আগস্ট শাহাদাত হোসেনকে সভাপতি ও আবুল হাসেম বকরকে সাধারণ সম্পাদক করে চট্টগ্রাম মহানগরের কমিটি করা হয়। ২০১৭ সালের ১০ জুলাই পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম আমাদের সময়কে বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান চট্টগ্রামের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। নেতৃবৃন্দ সবাই বর্তমান কমিটি ভেঙে দিয়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির পক্ষে মত দিয়েছেন। দ্রুতই আহ্বায়ক কমিটি করা হবে।

২০১৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে সভাপতি ও শফিকুল হক মিলনকে সাধারণ সম্পাদক করে ২১ সদস্যের রাজশাহী মহানগরের আংশিক কমিটি করা হয়। বুলবুল ও মিলনের দ্বন্দ্বে এই কমিটিও আংশিক অবস্থায় মেয়াদ শেষ করেছে। মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, সব মহানগর কমিটি পুনর্গঠন বিষয়ে একত্রে সিদ্ধান্ত হবে। এটা স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হবে।

১৯৯৩ সাল থেকে খুলনা মহানগর বিএনপির নেতৃত্বে আছেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। জেলার সভাপতি এস এম শফিকুল আলম মনা বলেন, আমার জানা মতে নজরুল ইসলাম মঞ্জু ১৯৯৩ সালে খুলনা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান। সেই থেকে তিনি আছেন। মাঝখানে তিনি পদোন্নতি পেয়ে ২০০৯ সালে সভাপতি হয়েছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর খুলনা মহানগর বিএনপির সম্মেলন হয়। এতে মঞ্জু সভাপতি ও মনিরুজ্জামান মনি সাধারণ সম্পাদক হন। ওই সময় মঞ্জু ছিলেন সদর আসনের এমপি। পরে মনি খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র হন। কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর এ পর্যন্ত দুই দফা সম্মেলনের তারিখ হলেও তা আর হয়ে ওঠেনি।

মজিবুর রহমান সরোয়ার কবে থেকে বরিশাল বিএনপির নেতৃত্বে আছেন অনেক কষ্ট করেও মনে করতে পারেননি মহানগর কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন শিকদার জিয়া। স্মৃতি হাতড়ে তিনি বলেন, যতটুকু মনে আছে তা হচ্ছে বরিশাল দক্ষিণ জেলার সভাপতি, পরে মহানগরের আহ্বায়ক, সেখান থেকে সভাপতি হিসেবে তিনি এখনো দায়িত্ব পালন করছেন। সরোয়ার এরই মধ্যে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন তিনি দলের যুগ্ম মহাসচিবের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদেও কাজ করছেন। জিয়াউদ্দিনের ভাষ্য, বরিশালে সরোয়ারের বিকল্প এখনো গড়ে ওঠেনি।

যদিও তার বিরোধীদের ভাষ্য, সরোয়ার বরিশাল বিএনপিকে বনসাই করে ফেলেছেন। ছাত্রদল ও যুবদলের সাবেক অনেক যোগ্যতাসম্পন্ন নেতৃত্ব থাকার পরও তার কারণে তারা বিকশিত হতে পারছেন না।

যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন মজিবুর রহমান সরোয়ার। তিনি বলেন, আমরাও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছি বরিশাল মহানগর কাউন্সিল করার জন্য। নতুন কাউন্সিলে কে নেতা হবেন তা নির্ধারণ করবে মহানগরের কাউন্সিলররা। অনেকেই অনেক উল্টাপাল্টা কথাবার্তা বলছে, সরকারের ষড়যন্ত্র আছে।

দলীয় গঠনতন্ত্রের ‘এক নেতার এক পদ’ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা যথাযথ নিয়ম নয়; রাজনৈতিক কথা নয়। বরিশালে দেখেন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও কমিউনিস্ট পার্টি সব দলের নেতার কেন্দ্র ও তৃণমূলে পদ আছে। কেন্দ্র ও তৃণমূল আলাদা নয়। কেন্দ্র তো আলাদা লোকজন নিয়ে গঠিত হয় না।

সর্বশেষ ২০০৯ সালে মজিবর রহমান সরোয়ারকে সভাপতি ও কামরুল আহসান শাহিনকে সাধারণ সম্পাদক করে বরিশাল মহানগর কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় ২০১৩ সালের অক্টোবরে পূর্ণাঙ্গ করা হয়। ২০১৪ সালে মারা যান সাধারণ সম্পাদক শাহিন। এর পর দলের ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদারকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ এই কমিটি ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক দিয়েই চলছে।

২০১৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সিলেট মহানগরের সভাপতি নাসিম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক পদে বদরুজ্জামান সেলিম নির্বাচিত হন। পরের বছর কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়। বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৬ মে মোজাফফর হোসেনকে সভাপতি ও শহীদুল ইসলাম মিজুকে সাধারণ সম্পাদক করে রংপুর মহানগর কমিটি হয়। সভাপতি মারা গেছেন।

২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটিতে সভাপতি করা হয় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সাংসদ আবুল কালামকে ও সাধারণ সম্পাদক হন এটিএম কামাল। ২০১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর একেএম শফিকুল ইসলামকে আহ্বায়ক এবং আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ ও অধ্যাপক শেখ আমজাদ আলীসহ ১০ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৬০ সদস্যের ময়মনসিংহ মহানগর কমিটি অনুমোদন করা হয়। এ কমিটিরও মেয়াদ নেই।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877