বুধবার, ২২ মে ২০২৪, ১২:৪১ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
পর্যটক সামলাতে দেয়াল তুলছে জাপান ঢাবিতে গোলাম মাওলা রনির ওপর হামলা টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র, একাদশে যারা আজিজ আহমেদের ওপর মার্কিন ভিসানীতি প্রয়োগ হয়নি: ওবায়দুল কাদের অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত থাকবে কৃষি খাতে ফলন বাড়াতে অস্ট্রেলিয়ার প্রযুক্তি সহায়তা চান প্রধানমন্ত্রী ভিকারুননিসায় ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল, অনিয়ম তদন্তের নির্দেশ ৩০ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে থাকতে পারে : সিইসি সাবেক সেনাপ্রধানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা যে বার্তা দিচ্ছে শিয়ালের টানাহেঁচড়া দেখে মাটি খুঁড়ে পাওয়া গেল এক নারী ও দুই শিশুর লাশ
প্রত্যাবাসন চেষ্টার পাশাপাশি ভাসানচরে স্থানান্তর জরুরি

প্রত্যাবাসন চেষ্টার পাশাপাশি ভাসানচরে স্থানান্তর জরুরি

স্বদেশ ডেস্ক:

মানবিকতার খাতিরে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে এখন বাংলাদেশই উল্টো ঝুঁকিতে পড়েছে। উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পগুলোয় বাস করা রোহিঙ্গারা জড়িয়ে পড়েছে বড় ধরনের অপরাধে। স্থানীয়রা বলছেন, ৩৪টি ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গারা দীর্ঘ সময় ধরে ওই এলাকায় থাকতে থাকতে এরই মধ্যে এ অঞ্চলের মানুষের ভাষা পুরো রপ্ত করে নিয়েছে। আর সেই সুবিধা নিয়ে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের সঙ্গে মিলে তারা হয়ে উঠেছে বেপরোয়া। স্থানীয় ইয়াবাকারবারি এবং চোরাচালানীদের সঙ্গেও তাদের রয়েছে যোগাযোগ। অভিযোগ আছে, ক্যাম্পগুলোয় তারা ইয়াবা ও অস্ত্রের মজুদও গড়ে তুলেছে। যার সত্যতা দেখা যায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাম্প্রতিক সময়ে হওয়া সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনায়। প্রায় প্রতিরাতেই এখন ক্যাম্পে সংঘর্ষ হচ্ছে। গত তিন বছরে রোহিঙ্গাদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ৫৩ জন নিহত হয়েছে। এমনকি তাদের হাতে খুন হয়েছে বাংলাদেশিও।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হলে তারা এ এলাকার নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠবে বলে মন্তব্য করেছেন। গতকাল রবিবার চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলে মন্ত্রী বলেন, কিছু রোহিঙ্গা মাদকপাচারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি দুদল রোহিঙ্গার সংঘর্ষে ৮ জন মারা গেছে। তা ছাড়া কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় এসব ঘটনা উত্তরোত্তর বাড়ছে। প্রত্যাবাসন দেরি হওয়ায় দিন দিন রোহিঙ্গা এবং বিদেশি সাহায্যকারী প্রতিষ্ঠানের ওপরও স্থানীয়দের অসন্তুষ্টি ঘণীভূত হচ্ছে।

এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের অপরাধ প্রবণতা কমানোর স্বার্থে দ্রুত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার পাশাপাশি তাদের একটি অংশকে ভাসানচরে স্থানান্তর জরুরি বলে মত দিয়েছেন নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে তার আগে রোহিঙ্গাসহ সব পক্ষকে আস্থায় নিতে হবে। আমাদের সময়ের সঙ্গে আলাপকালে তারা এ মত ব্যক্ত করেন।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব) আবদুর রশীদ বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের প্রকৃত সমাধান তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন করা। এ প্রক্রিয়া যাতে দ্রুত শুরু করা যায় সে জন্য আমাদের আরও বেশি কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যে হানাহানি, সহিংসতা চলছে তার পেছনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর মদদ থাকতে পারে। কারণ রাখাইন থেকে রোহিঙ্গারা চলে আসার পর সেখানে যে জায়গাটা ফাঁকা হয়েছে, তার দখল নিয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান আর্মি। দৃশ্যত আরাকান আর্মিকে নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। একই সঙ্গে নিঃসন্দেহে রোহিঙ্গা সংকট ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। অনেক দেশই মিয়ানমারের সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক সীমিত করছে। এ অবস্থায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানোর কৌশল হিসেবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতাদের একটি অংশকে ব্যবহার করে সেখানে সংঘাত, সহিংসতা ঘটানোর কাজটি করতে পারে। যেন সংকট সমাধানে প্রচেষ্টা ব্যাহত এবং প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হয়। ভাসানচরে রোাহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য কক্সবাজারের চেয়ে অনেক উন্তত ও আধুনিক সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ কারণে রোহিঙ্গাদের যতজনকে সম্ভব ভাসানচরে স্থানান্তর যুক্তিযুক্ত।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালিউর রহমান বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে ব্যবস্থাপনায় নানা ধরনের সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। ফলে অপরাধমূলক কর্মকা- বাড়ছে। সেখানে নানা ধরনের গুরুতর অপরাধকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনাও ধারাবাহিকভাবে ঘটছে। যেটি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের একটা অংশকে ভাসানচরে নেওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। প্রচুর অর্থ ব্যয় করে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের বাসবাসের উপযোগী উন্নত পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু ক্যাম্প ঘিরে যাদের বাণিজ্য বা আর্থিক স্বার্থ রয়েছে তারা কখনোই চাইবে না রোহিঙ্গারা ভাসানচরে যাক। এ কারণে সরকারকে কঠোর ভূমিকা নিতে হবে। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ ভূখ-ে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তাদের কোথায় রাখা হবে সে ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে। সেই সঙ্গে রোহিঙ্গারা যাতে নিজ দেশে ফিরে যায় সে ব্যাপারে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, রোহিঙ্গারা কক্সবাজার ক্যাম্পে ঘিঞ্জি পরিবেশে অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছে। কিন্তু কিছু রোহিঙ্গা নেতা নিজেদের অনেক সুবিধা, অবৈধ উপার্জনের পথ হাতছাড়া করতে চায় না। ফলে তারা অন্য রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে যেতে বাধা দিচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সাধারণ রোহিঙ্গারা ভাসানচরে যেতে চায়। কারণ তারা সেখানে বসবাসের জন্য ভালো বাসস্থান, জীবনধারণের জন্য জীবিকা, ভালো স্বাস্থ্যসেবা এবং সন্তানদের লেখাপড়ার নিশ্চয়তাও পাবে। অতএব তাদের ভাসানচরে যেতে না চাওয়ার কোনো কারণ নেই। এখন সরকারকে কঠোর হতে হবে। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের নিয়ে যেতে হবে ভাসানচরে। কোনো একটি গোষ্ঠীর স্বার্থের জন্য সরকার রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনো ঝুঁকি নিতে পারে না। এ জন্য এখন আর বিরোধিতাকে গুরুত্ব না দিয়ে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যেতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে রোহিঙ্গাদের তাদের দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনই মূল লক্ষ্য।

নিজস্ব তহবিল থেকে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য ভাসানচরের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে সরকার। এর জন্য নোয়াখালীর দক্ষিণাঞ্চলীয় মেঘনার বুকে জেগে ওঠা ভাসানচরকে নবরূপে সাজানো হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে সারি সারি ঘর, সাইক্লোন শেল্টার, অভ্যন্তরীণ সড়ক, লাইট হাউস, পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, খেলার মাঠ, পুকুর, মসজিদ, বাগান, সৌর বিদ্যুৎ ব্যবস্থাসহ আরও নানা কিছু। জোয়ার-জলোচ্ছ্বাস থেকে এই চরের ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা রক্ষা করতে নৌবাহিনী তৈরি করেছে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877